রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: বক্তা যিনি, বিগত তিন দিন ধরে তিনি জাতীয় শিরোনাম। আরও ভালো করে বললে, তাঁর সৃষ্ট বাইশ গজ। যা নিয়ে কম তর্ক-বিতর্ক-সমালোচনা হয়নি। রবিবার ইডেনে খেলা শেষের পর মাইকেল ভনদের সমালোচনা থেকে শুরু করে পিচ বৃত্তান্ত–সব কিছু নিয়ে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন ইডেন কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: ভারতীয় কোচ গৌতম গম্ভীর আপনার পাশে দাঁড়িয়েছেন, শুনেছেন? উনি বলে গিয়েছেন যে, ভারত যা পিচ চেয়েছিল, তাই দেওয়া হয়েছে। তা সে যতই তিন দিনে তাঁর টিম হেরে যাক। পিচ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে যা চলছিল, এরপর একটু স্বস্তি লাগছে?
সুজন: একটা কথা বলি। ক্রিকেটে দুই প্রজাতি সব সময় সফট টার্গেট হয়। এক, আম্পায়ার। দুই, কিউরেটর। ডিআরএস ইত্যাদি আসার পর তবু আম্পায়ারের বাঁচার একটা রাস্তা রয়েছে। কিন্তু আমাদের তো আর ডিআরএস বলে কিছু নেই। তাই কে কী বলল, আজ আর কিছুতে কিছু যায় আসে না।
প্রশ্ন: মাইকেল ভন বললেও কি কিছু যায়-আসে না? তিনি তো গতকাল সরাসরি ইডেন পিচকে ‘অফুল’ বলেছেন!
সুজন: ইডেন পিচকে ‘অফুল’ ভনের কেন মনে হয়েছে, সেটা ও-ই বলতে পারবে। পিচে ক্যারি ছিল। পেস ছিল। বাউন্স ছিল। টার্ন করেছে। তা হলে ‘অফুল’ হল কোথা থেকে? দেখুন, আমার কাউকে কিছু বলার নেই। আমি যা-ই করি, সৎ ভাবে করি। অনেস্টলি করি। আমার কাছে ইন্ডিয়া ফার্স্ট চয়েস। ওরা যে পিচ চেয়েছে, আমি চেষ্টা করেছি তাতে সাহায্য করার। এবার ভনের যা মনে হয়েছে, বলেছে। জীবনে অনেক ক্রিকেট বোদ্ধা দেখেছি, যারা মুখে বলে এক, আর কাজে করে আর এক।
প্রশ্ন: অর্থাৎ, যাঁরা ইডেন পিচ নিয়ে এত দিন বলে গেলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখে গেলেন, তাঁদের বুঝেশুনে কথা বলা উচিত ছিল।
সুজন: আমি এক্সপেক্ট করি না সবাই কিছু বুঝবে বা জানবে। সবাই যদি সমস্ত কিছু বুঝত-জানত, তা হলে কি আর এত বিতর্ক হত?
প্রশ্ন: একটা কথা বলুন। গম্ভীর বলে গেলেন, ইডেন পিচ নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু ছিল না। অথচ ধারাভাষ্যকাররা বারবার বলে গেলেন, এই পিচে ব্যাট করা কঠিন। কোনটা সত্যি?
সুজন: ঘাবড়ানোর তো সত্যি কিছু ছিল না। আমার মতে, দু’টো টিমই খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে পারেনি। আমাকে বলতে পারেন, ঠিক ক’টা ডেলিভারি নিচু হওয়ায় ব্যাটার বোল্ড হয়েছে? বোল্ড যা হয়েছে, সব স্টাম্পের উপরে লেগেছে। আসলে অতিরিক্ত টি-টোয়েন্টি খেলে-খেলে, টেস্ট খেলতেই আজকালকার ক্রিকেটাররা ভুলে গিয়েছে!
প্রশ্ন: বুঝলাম। সরাসরি একটা প্রশ্ন করছি। এটা কি আদর্শ টেস্ট উইকেট? পাঁচ দিনের খেলা তিন দিনে শেষ হয়ে গেল। শেষ দু’দিনের টিকিট যাঁরা কেটেছিলেন, তাঁদের তো এখন রিফান্ড খুঁজতে হবে।
সুজন: আদর্শ কি না, বলতে পারব না। কিন্তু খারাপ উইকেট ছিল না। তেম্বা বাভুমা দেখিয়ে দিয়েছে, কী ভাবে এই পিচে খেলতে হয়। ফার্স্ট ইনিংসে কেএল রাহুল দেখিয়েছে। তা হলে খারাপ পিচ কী ভাবে হল?
প্রশ্ন: কিন্তু এটা তো সত্যি যে, টেস্টের দ্বিতীয় বলটাই নিচু হয়ে প্রায় গড়িয়ে গিয়েছে। চতুর্থ ডেলিভারিটা আবার কিপার কাঁধের কাছে কালেক্ট করেছেন। অসমান বাউন্স ম্যানেজ করা তো সহজ নয়।
সুজন: যে আনইভেন বাউন্সের কথা বলছেন, সেটা হয়েছে জল না দেওয়ার জন্য। একটা জিনিস এখানে বলি। এ বছর মাঝে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে। ইডেনও বাজে ভাবে বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিল। তার উপর ওয়েদার। গত পাঁচ-ছ’দিনে রোদের তেমন তেজ ছিল না। জলটাও ঠিকমতো দেওয়া যায়নি। ওয়েদার পারমিট করেনি। তার পরেও এই পিচে খেলা মোটেও মারাত্মক কঠিন কিছু ছিল না। সবাই স্পিনার-স্পিনার করছেন। পেসাররা ক’টা উইকেট নিয়েছে, একটু দেখুন। বেশ কয়েক জন ব্যাটার সোজা বলে দাঁড়িয়ে সুইপ মারতে গিয়ে আউট হয়েছে। সেটা কি পিচের দোষ? তা ছাড়া ভারতের গত ইংল্যান্ড সফরেও বা কী আহামরি পিচ ছিল? ভনরা ইংল্যান্ডে খেলা তিন দিনে শেষ হলে একই রকম কাঁদুনি গাইবে তো?
প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন। এই পিচ তৈরি করা কি সুজন মুখোপাধ্যায়ের জীবনের সবচেয়ে কঠিন অ্যাসাইনমেন্ট ছিল? সচরাচর ইডেন পিচ যেমন হয়, সেই প্রেক্ষিত থেকে জিজ্ঞাসা করছি।
সুজন: কিউরেটরের কাজটাই টাফ। কী আর করা যাবে (হাসি)!
