রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: খেলা ছেড়ে দেওয়ার বহু, বহু বছর পরেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্রিকেট মস্তিষ্ক যে আজও কতটা ক্ষুরধার, কতটা বিচক্ষণ তাঁর ক্রিকেট চেতনা, তা সর্বজনবিদিত। তার প্রমাণও প্রায়শই পাওয়া যায়। মঙ্গলবারই যেমন। ইডেনে কেকেআর বনাম লখনউ সুপার জায়ান্টস ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট খুঁজে বার করতে সৌরভের লাগল, মেরেকেটে পাঁচ সেকেন্ড!

“রিঙ্কু-রাসেল অত পরে কেন ব্যাট করতে নামবে? বলছি না, রামনদীপ সিং খারাপ ব্যাটার। ও-ও যথেষ্ট ভালো। কিন্তু তবু বলব, রিঙ্কুদের আর একটু আগে নামানো যেত,” এ দিন খেলা শেষে সিএবিতে বলছিলেন সৌরভ। যা শতভাগ সঠিক। রাসেল গিয়েছেন এ দিন সাত নম্বরে ব্যাট করতে। আর রিঙ্কু আটে। অথচ কেকেআর অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে যখন আউট হন, তখন শেষ সাত ওভারে রান প্রয়োজন ৭৭। হাতে সাত উইকেট। লিখে দিতে পারি, ইডেনে উপস্থিত ছেচল্লিশ হাজার দর্শকের একজনও তখন ভাবেননি যে, এ পরিস্থিতি থেকেও ম্যাচ কেকেআর হারতে পারে! টি-টোয়েন্টিতে হাতে সাত উইকেট নিয়ে শেষ সাত ওভারে ৭৭–কোনও রান নাকি?
মুশকিল হল, রাহানের আউটের পর ইডেন ঠিক যে সময় ধরে নিয়েছে আন্দ্রে রাসেল কিংবা রিঙ্কু সিং নামবেন, মাঠে নামেন রামনদীপ। তা, পরের দু’ওভারের মধ্যে তিনিও আউট। তার পরেও রিঙ্কু-রাসেলের মধ্যে কাউকে নামানো হল না। গেলেন, অঙ্গকৃষ রঘুবংশী! রাসেল মাঠে নামলেন যখন শেষ পর্যন্ত, ম্যাচ অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছে। জয় ক্রমশ দূরে সরছে নাইটদের থেকে। তবু তাঁর নাম আন্দ্রে রাসেল। কেকেআরকে বিগত দশ বছরে প্রচুর সোনার মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন। বহু হারা ম্যাচ একা হাতে নাইটদের জিতিয়ে। হায়, মঙ্গলবার সেই রাসেলও যে পারবেন না, মাত্র ৪ বলে ৭ করে আউট হয়ে যাবেন, কে জানত। কে জানত, অষ্টাদশ আইপিএলে পাঁচটা ম্যাচ খেলার পর তাঁর রান দাঁড়াবে মাত্র ১৭! ব্যাটিং গড় আঁতকে ওঠার মতো– ৪.২৫! উত্তেজিত সোনালি-বেগুনি সমর্থকদের একাংশ যার পর সটান রায় দিয়ে দিচ্ছেন, রাসেলকে বসানোর এবার সময় হয়েছে! সময় হয়েছে, রভম্যান পাওয়েলকে খেলানোর!
সত্যিই কি তাই?
সৌরভ মানতে চান না। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক তথা পূর্বতন বোর্ড প্রেসিডেন্ট বলছিলেন, “দশ বছর ধরে কেকেআরে খেলছে রাসেল। ওর মধ্যে এখনও অনেক খেলা বাকি রয়েছে। তা ছাড়া গত বছরও ভালো খেলেছে। আমার মতে, রাসেলকে ব্যাটিং অর্ডারের আর একটু উপরে পাঠানো দরকার। পর্যাপ্ত বল তো পেতে হবে ওকে। যে কোনও ব্যাটারের সেট হতে একটু সময় লাগে। রাসেলেরও লাগে।” কেকেআরের এদিনের হার নিয়ে বরং বারবার আক্ষেপ করছিলেন প্রাক্তন নাইট অধিনায়ক। বলছিলেন, “কেকেআরের আজ ম্যাচটা জেতা উচিত ছিল।” ইতিমধ্যে প্রতিটা টিমই গোটা পাঁচ করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে। তা, কারা যেতে পারে প্লে অফ? এ দিন পর্যন্ত আইপিএল দেখে আপাতত চারটে নাম বেছে দিলেন সৌরভ– রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, গুজরাট টাইটান্স, দিল্লি ক্যাপিটালস এবং পাঞ্জাব কিংস।
আইপিএলের পরপরই পাঁচ টেস্টের ইংল্যান্ড সিরিজ খেলতে চলে যাবে ভারতীয় টিম। ইতিমধ্যে ‘ট্রানজিশন’ পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে জাতীয় দলে। ভবিষ্যতের ভারতীয় টিম কেমন হওয়া উচিত? বর্তমান যুব-প্রজন্মদের মধ্যেই বা কার টেস্ট টিমে থাকা উচিত? বিশেষ করে ইংল্যান্ড সফরে? সৌরভ প্রথমেই যে নামটা করলেন, তিনি প্রাক্তন কেকেআর অধিনায়ক। এবং আইপিএল জয়ী অধিনায়ক। বর্তমানে যিনি পাঞ্জাব কিংসকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শ্রেয়স আইয়ার। ভারতের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অধিনায়ক বলছিলেন, “শ্রেয়স অনেক উন্নতি করেছে আগের থেকে। টেস্ট টিমের মিডল অর্ডারে ভাবা যেতেই পারে ওকে।” সৌরভ আরও একজনের নাম করলেন, যাঁকে ভবিষ্যতের টেস্ট টিমে রাখা উচিত বলে তাঁর অভিমত। তিনি, সাই সুদর্শন। আগামী মাসেই সম্ভবত ইংল্যান্ড সফরের টেস্ট টিম নির্বাচন হয়ে যাবে। দ্রষ্টব্য, সৌরভের পরামর্শ অনুসারে শ্রেয়সকে সেই টিমে রাখা হয় কি না?