রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: আইপিএল ‘রিটেনশন’-এর নিয়মাবলীতে বড়সড় পরিবর্তন হয়ে গেল। প্রতিটা ফ্র্যাঞ্চাইজি সর্বাধিক পাঁচ জন ক্যাপড প্লেয়ারকে ‘রিটেন’ করতে পারবে। সঙ্গে একজন করে আনক্যাপড প্লেয়ার। সেটা 'রিটেশন' কিংবা 'রাইট টু ম্যাচ' কার্ড (আরটিএম) ব্যবহার করে রাখা যেতে পারে। কিন্তু সরাসরি যদি কোনও ছ'জন ক্রিকেটারকে 'রিটেন' (৫ ক্যাপড ও ১ আনক্যাপড) করতে চায়, তা হলে সর্বাধিক খরচ পড়বে ৭৯ কোটি টাকা!
তবে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিদের পক্ষে সুখবর, নিলামের 'পার্স' বাড়ছে। এবার তা বেড়ে হচ্ছে ১২০ কোটি টাকা। তবে 'রিটেশন' সংক্রান্ত নিয়মাবলী পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি জটিল হতে চলেছে। যেমন, ফ্র্যাঞ্চাইজিরা যত বেশি প্লেয়ার 'রিটেন' করতে চাইবে, তত কমবে তার 'আরটিএম' কার্ড সংখ্যা। ধরা যাক, কোনও একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি ঠিক করল পাঁচ জন প্লেয়ারকে ‘রিটেন’ করবে। সেক্ষেত্রে তার হাতে পড়ে থাকবে একটা 'আরটিএম' কার্ড। যদি কেউ চার জন প্লেয়ারকে ‘রিটেন’ করবে বলে ঠিক করে, তা হলে তার হাতে তখন থাকবে দু’টো ‘আরটিএম’ কার্ড। আবার কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি যদি তিন জন প্লেয়ারকে ‘রিটেইন’ করবে ঠিক করে, সে তখন পাবে তিনটে ‘আরটিএম’ কার্ড। সর্বাধিক পাঁচ ক্যাপড প্লেয়ার ও সর্বাধিক দু'জন আনক্যাপড প্লেয়ারকে 'রিটেন' করা যাবে। যদি কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্যাপড আর আনক্যাপড প্লেয়ার মিলিয়ে মোট ছ’জনকে রিটেইন করে, তাহলে ওই টিম আর কোনও আরটিএম কার্ড ব্যবহার করতে পারবে না। যার অর্থ চেন্নাই সুপার কিংসের মহেন্দ্র সিং ধোনিকে রেখে দেওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনও সমস্যা রইল না। ধোনি জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগেই। তিনি নিলামে এখন আর ক্যাপড প্লেয়ারের ক্যাটাগরিতে পড়েন না। ফলে সিএসকে তাঁকে আনক্যাপড প্লেয়ার হিসেবে রিটেইন করতে পারবে। এবং ধোনিকে রাখতে গেলে চেন্নাইয়ের খরচ পড়বে মাত্র চার কোটি টাকা!
কেন? সেক্ষেত্রে প্লেয়ার 'রিটেনশন' খরচপাতির দিকে তাকাতে হবে। 'রিটেনশন' সংক্রান্ত খরচের যা খসড়া হয়েছে, তা এরকম: প্রথম ক্যাপড প্লেয়ারকে ধরে রাখতে খরচ পড়বে ১৮ কোটি টাকা। দ্বিতীয় ক্যাপড প্লেয়ার ধরে রাখার খরচ ১৪ কোটি টাকা। তৃতীয় ক্যাপড প্লেয়ার ধরে রাখার খরচ ১১ কোটি টাকা। চতুর্থ ও পঞ্চম ক্যাপড প্লেয়ার ধরে রাখার খরচ যথাক্রমে---- ১৮ ও ১৪ কোটি টাকা। সোজা হিসেবে, পাঁচ জন ক্যাপড প্লেয়ার ধরে রাখার খরচ ৭৫ কোটি টাকা। এবং আনক্যাপড প্লেয়ার ধরে রাখার খরচ প্লেয়ার পিছু ৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ধোনিকে রাখতে গেলে চেন্নাইয়ের খরচ পড়বে ৪ কোটি। কারণ, তিনি আনক্যাপড প্লেয়ার। বোর্ডের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনও প্লেয়ার পাঁচ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেললে তাঁকে আনক্যাপড প্লেয়ার ধরা হবে। ধোনি অবসর নিয়েছেন ২০২০ সালে। অর্থাৎ, হিসেব মতো তিনি এখন আনক্যাপড প্লেয়ার।
এর বাইরে দু’একটা খবর রয়েছে আইপিএল সংক্রান্ত। আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলে চেয়ারম্যান হিসেবে পুনর্নিবাচিত হলেন অরুণ ধুমাল। পুনর্নিবাচিত হয়েছেন আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল সদস্য তথা প্রাক্তন সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়াও। এর বাইরে একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। তা হচ্ছে, আইপিএলে এবার থেকে ম্যাচ ফি চালু হচ্ছে। অর্থাৎ, প্রতি ম্যাচ পিছু সাড়ে সাত লক্ষ টাকা করে পাবেন টিমের দেশি ও বিদেশি ক্রিকেটাররা। যে অর্থ দিতে হবে ফ্র্যাঞ্চাইজিকে। আরও আছে। বিদেশি প্লেয়ারদের বড় নিলামে নাম দিতে হবে। পূর্ণাঙ্গ নিলাম বাদ দিয়ে তাঁরা ছোট নিলামে নাম দিতে পারবেন না।
অর্থাৎ, কুড়ি-পঁচিশ কোটি টাকায় কামিন্স-স্টার্কদের বিক্রি হওয়া বন্ধ। দ্বিতীয়ত, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো বিদেশি ক্রিকেটারদের আইপিএল নিলামে কেনার পরও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তাঁরা টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়াতেন। এবার সেই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কারণ পরিষ্কারভাবে বলে দেওয়া হচ্ছে যে, কেউ ইচ্ছে করলেই আর টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়াতে পারবেন না। সেটা করলে তাঁকে দুটো আইপিএল নিলামে নির্বসিত থাকতে হবে।