অভিরূপ দাস: মোটর বাইক দুর্ঘটনায় যুবকের টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল হাড়। চিকিৎসা তো দূর, স্রেফ ব্যাথানাশক ওষুধ (Pain killer) খাইয়ে তাঁকে ফেলে রেখেছিল হাসপাতাল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা। চিকিৎসা না পেয়ে কোমায় চলে যান বছর একুশের সায়নদেব ভুঁইঞা। অন্যত্র যখন তাঁকে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে সায়ন।
ছেলের মৃত্যুতে পশ্চিম মেদিনীপুরের (West Midnapore) সেন্ট জোসেফ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃন্ময়কান্তি ভুঁইয়া। গোটা ঘটনায় হতবাক রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন (Health commission)। গত এপ্রিলের মাঝামাঝি এই দুর্ঘটনায় সায়নদেবের মৃত্যুতে সেন্ট জোসেফ হাসপাতালকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন কমিশনের চেয়ারম্যান। সায়নদেবের চিকিৎসা সংক্রান্ত রিপোর্ট ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, দুর্ঘটনায় হাঁটুর উপরের অংশ ভেঙে চৌচির হয়ে গিয়েছিল তাঁর। যে কোনও বড়সড় দুর্ঘটনার পর প্রথম দু থেকে তিন ঘণ্টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে ধরা হয়। ওই সময়ের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করতে পারলে রোগীকে বড়সড় ক্ষতি থেকে বাঁচানোর সম্ভাবনা বাড়ে।
[আরও পড়ুন: জানুয়ারি থেকে ৩% হারে ডিএ পাবেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা, জারি বিজ্ঞপ্তি]
কিন্তু সায়নদেবের ক্ষেত্রে সেই ‘গোল্ডেন আওয়ারে’ই কোনও চিকিৎসা মেলেনি। সেন্ট জোসেফ হাসপাতালের ডাক্তার এ লতিফ তাঁকে দেখছিলেন। তাঁর সঙ্গেও কথা বলেছে স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এর চেয়ে বেশি অত্যাধুনিক পরিষেবা দেওয়ার সামর্থ্য তাদের ছিল না। আর হাসপাতালের এই সাফাই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। ফুলপাহাড়ি খয়েরুল্লাচকের সেন্ট জোসেফ হাসপাতাল থেকে মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ। স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের প্রশ্ন, যদি নিজেদের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষমতা নাই থাকে, তবে কেন রোগীকে সময়মতো স্থানান্তরিত করা হল না? গোটা ঘটনায় হাসপাতালকে ২ লক্ষ টাকা অর্ন্তবর্তী জরিমানা করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: রাজ্যের সবুজ সংকেত, এবার সপ্তাহে ৭ দিনই মিলবে কলকাতা-দিল্লি বিমান পরিষেবা]
স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ”আপাতত ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হল। মৃতের পরিবারকে মেডিক্যাল কাউন্সিলে যেতে বলা হয়েছে। সেখান থেকে আসার পর আমরা সম্পূর্ণ জরিমানা ঘোষণা করব।” যে কোনও দুর্ঘটনাই পুলিশের কাছে জানানো বাধ্যতামূলক। হাসপাতাল পুলিশকে জানালেও অকালে যুবককে প্রাণ হারাতে হতো না বলেই মত স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের।