সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: শেষ দফা লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলায় রেমালের দাপট (Cyclone Remal)। উপকূলবর্তী তিন জেলা বিধ্বস্ত। বিপর্যয়ের মুখে জনজীবন। এই পরিস্থিতিতে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসনের সঙ্গে কাজে নেমেছেন নেতারাও। আপাতত ভোটযুদ্ধকে পিছনে রেখে একযোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোকেই পাখির চোখ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিকল দলের প্রার্থীরা। দুই ২৪ পরগনার একাধিক লোকসভা কেন্দ্র উপকূলবর্তী এলাকা। ডান-বাম নির্বিশেষে সব প্রার্থীদেরই দেখা গেল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়। হাতে হাত মিলিয়ে একাধিক কাজ করেছেন। কেউ কেউ আবার দাঁড়িয়ে থেকে গোটা উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছেন। কেউ আবার ২৪ ঘণ্টা দূরভাষে এলাকার প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের মধ্যে দিয়ে গোটা পরিস্থিতি নজরে রাখছেন। আর এভাবেই ভোটের আগে রেমাল রাজনৈতিক বিভেদ দূর করে দিল।
মথুরাপুর এবং জয়নগর - দক্ষিণ ২৪ পরগনার (South 24 Parganas) দুই লোকসভা কেন্দ্রই উপকূলবর্তী। রবিবার রেমাল আছড়ে পড়ার আগে থেকেই এলাকার বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরগুলিতে তদারকি করেছেন মথুরাপুরের (Mathurapur) তৃণমূল প্রার্থী তথা এলাকার জনপ্রিয় যুব নেতা বাপি হালদার। সেখানে খাবার থেকে ওষুধ সব মজুত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখেছেন। বাঁধ ভেঙে যেতে পারে, এমন এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন তৃণমূল প্রার্থী।
[আরও পড়ুন: আরও বাড়ল গরমের ছুটি, কবে খুলবে স্কুল?]
রবিবার রাতে সাগরদ্বীপের কাছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল (Cyclone Remal) আছড়ে পড়ার পর সোমবার সকাল থেকে ক্ষতির আসল চেহারা স্পষ্ট হল। নামখানার মৌসুনি দ্বীপের কাছে বাগডাঙায় গাছের ডাল ভেঙে মৃত্যু হয় ৮০ বছরের এক বৃদ্ধার। সেই খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ছুটলেন মথুরাপুরের তৃণমূল প্রার্থী বাপি হালদার। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশেই তাঁর এই তৎপরতা। ওই বৃদ্ধার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান।
বাগডাঙায় মৃত বৃদ্ধার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ মথুরাপুরের তৃণমূল প্রার্থী বাপি হালদারের। নিজস্ব ছবি।
তবে সবচেয়ে সক্রিয় দেখা গেল ডায়মন্ড হারবারের (Diamond Harbour) সিপিএম প্রার্থী প্রতীক-উর রহমানকে। সাতগাছিয়ার ফলতায় ভেঙে পড়া কাঁচা বাড়ি মেরামতিতে বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে কাজে হাত লাগালেন। বৃষ্টি মাথায় করে রেনকোট পরে প্রতীক-উরকে এভাবে দেখতে অভ্যস্ত এলাকাবাসী। তবে এই মুহূর্তে তিনি দিল্লির লড়াইয়ে একজন যোদ্ধা। তাই এখনও যে তিনি ঘরের ছেলের মতোই এভাবে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বেন, তা দেখে অত্যন্ত খুশি এলাকাবাসী। এনিয়ে প্রতীক-উরের বক্তব্য, ''আমি বা আমরা সারাবছর মানুষের সঙ্গে থাকি। পাশে থাকি। ভোট এলেই দেখায় না। ভোটপাখি নই। কাল থেকে এই কাজে আছি। নির্বাচনের আগে বা পরেও থাকব একই কাজে।'' আর ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) দূর থেকেই নিজের কেন্দ্রের পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রেখেছেন। সোমবার বিকেলে তিনি আমতলায় দলীয় কার্যালয়ে এসে সেখান থেকে দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করবেন বলে খবর।
[আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় রেমালের দাপট কাটিয়ে দমদম বিমানবন্দরে চালু উড়ান পরিষেবা, এখনও জলমগ্ন রানওয়ে]
অন্যদিকে, ঝড়ের দাপটে বরানগর এলাকায় প্রচুর গাছ পড়েছে, বৃষ্টিতে জল জমেছে রাস্তায় রাস্তায়। সকালেই দলের কর্মীদের নিয়ে সেসব পরিষ্কার করতে নেমে পড়লেন দমদমের তৃণমূল প্রার্থী বর্ষীয়ান বিদায়ী সাংসদ সৌগত রায় (Sougata Roy)। সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে হাতে বাঁশ নিয়ে নালার জল সাফ করলেন তিনি। পে-লোডার চালিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের পাশাপাশি গাছের ঝোপে আটকে পড়া গাড়ি থেকে পাতা সরিয়ে তা উদ্ধার করেন। তাঁর পাশে ছিলেন বরানগর উপনির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে বিজেপি প্রার্থী আজও প্রচারেই ব্যস্ত রইলেন। সোদপুর এইচবি টাউনে জলমগ্ন রাস্তায় নেমে জনসংযোগ সারলেন শীলভদ্র দত্ত।