সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাত পোহালেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন। ঠিক তার আগের দিনই ভগবানের দ্বারস্থ যুযুধান দু’পক্ষই। শুক্রবার কননাট প্লেসের হনুমান মন্দিরে পুজো দিতে গেলেন দিল্লির বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আবার কালকাজি মন্দিরে পুজো দেন দিল্লি বিজেপির প্রধান মনোজ তিওয়ারি। তবে এদিন তাঁকে ব্যাটবলেও মজে থাকতে দেখা গিয়েছে।
আবার এদিনই দিল্লির বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে নোটিস পাঠায় নির্বাচন কমিশন। অভিযোগ, ৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও আপলোড করেন, যা নির্বাচনী বিধিভঙ্গকারী। আগামিকাল বিকেল পাঁচটার মধ্যে নোটিসের জবাব চেয়েছে কমিশন। প্রসঙ্গত, ৪ ফেব্রুয়ারি ওই ভিডিও নিয়ে কমিশনে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিল বিজেপি। তাঁদের অভিযোগ, ওই ভিডিওতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন কেজরিওয়াল। প্রাথমিক তদন্তে পর শুক্রবার তাঁকে নোটিস পাঠায় কমিশন।
রাজনৈতিক মহল বলছে, দিল্লির দেওয়াল লিখন খুব স্পষ্ট। বিভিন্ন সমীক্ষাতেও আপ ঝড়ের ইঙ্গিত মিলেছে। তবু বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচাগ্র জমি! অতএব রণং দেহি মনোভাব দুই শিবিরেই। দিল্লির কুর্সিতে আসীন কেজরিওয়ালের হাতিয়ার যদি উন্নয়ন হয়ে থাকে, তবে গেরুয়া শিবিরের হাতিয়ার রাজধানী জুড়ে চলতে থাকা CAA বিরোধী আন্দোলন। বিশেষ করে শাহিনবাগের আন্দোলনে দিল্লিবাসীর কতটা অসুবিধা হচ্ছে, তা বারবার প্রচারে তুলে ধরেছেন তাঁরা। সেই আন্দোলনে মদত দিচ্ছেন বলে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে গেরুয়া শিবির। প্রচার যত শেষবেলার দিকে এগিয়েছে, আক্রমণের ঝাঁজ ততই বেড়েছে। ভোটারদের মধ্যে ধর্মীয়ভাবে আড়াআড়ি বিভাজনের চেষ্টা করতেও পিছপা হননি বিজেপি নেতৃত্ব। তাদের পালটা দিতে শেষপর্যন্ত কেজরিওয়ালকেও বিতর্কসভায় হনুমান চল্লিশা পাঠ করতে হয়েছিল। আর নির্বাচনের আগের দিন মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়া সেই তালিকার নয়া সংযোজন বলেই কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা। সে অভিযোগ অবশ্য গায়ে মাখতে রাজি নন আপ প্রধান। কেজরিওয়াল আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি হনুমানভক্ত। হনুমান চল্লিশা তাঁর ঠোঁটের গোড়ায় থাকে। তাই এদিনের পুজো দিতে যাওয়া বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।
[আরও পড়ুন : ক্যাবে বসে CAA বিরোধী কথাবার্তা, যাত্রীকে থানায় নিয়ে গেলেন চালক]
অন্যদিকে গেরুয়া শিবিরে চাপা অস্বস্তি কাজ করছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মোদিঝড়ে ভর করে ২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি সরকার। তারপরেও ২০১৫ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়ে বিজেপি। মাত্র তিনটি আসনে শিকে ছিঁড়েছিল পদ্ম প্রার্থীদের। যদিও ২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৩২টি আসন জিতে দিল্লিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েছিল বিজেপি। কিন্তু ম্যাজিক ফিগার পায়নি। শেষমেশআপ-কংগ্রেস হাত মিলিয়ে সরকার গড়ে। বেশিদিন টেকেনি সেই সরকার। রাষ্ট্রপতি শাসনের পর ২০১৫তে ফের নির্বাচন হয়।
[আরও পড়ুন : চটকদারি বিজ্ঞাপনে রাশ টানতে উদ্যোগী কেন্দ্র, আইন সংশোধন করে কঠোর শাস্তির ভাবনা]
২০১৯-এও বিপুল জয় পেয়ে কেন্দ্রে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় বসেছে মোদি সরকার। দিল্লির সবকটি লোকসভা আসও তাঁদের দখলে। তবে আপাতত CAA বিরোধিতা-সহ একাধিক ইস্যুতে ব্যাকফুটে কেন্দ্র। যার ফল দেখা গিয়েছে একাধিক বিধানসভা নির্বাচনে। তাই বিজেপির কাছে দিল্লি কিছুটা হলেও দুর্জয় ঘাঁটি। শাহিনবাগ বিরোধিতা-কেজরিওয়ালের জঙ্গিযোগ সব মিলিয়ে শেষবেলায় প্রচারে অক্সিজেন জোগানোর চেষ্টা করেছেন তাবড়-তাবড় নেতারা। তবে ফল মিলবে কী, তা নিয়ে বেজায় চিন্তায় রয়েছে দিল্লির বিজেপি শিবির নিন্দুকেরা বলছেন, নিজেদের উপর ভরসা রাখতে পারছেন না কোনও শিবিরই। আর তাই শেষবেলায় ইষ্টদেবতার নাম জপতে ব্যস্ত দুপক্ষই।
The post নির্বাচনের আগে ইষ্টনাম জপ, শেষবেলায় মন্দিরে কেজরিওয়াল-মনোজ appeared first on Sangbad Pratidin.