ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়, চেন্নাই: এবার চন্দ্রযান ৩। সময়টা খুব সম্ভবত ২০২৩। চাঁদ থেকে মাটি আর বেশ কিছু পাথর আনতে তৃতীয় যান পাঠাবে ভারত। প্রস্তুতিও একপ্রকার সারা। তবে চন্দ্রযানের দ্বিতীয় অভিযানের কী হবে? ব্যর্থতার দায় নিয়ে কি তবে দ্বিতীয় অভিযান থেকে সরে দাঁড়াল ইসরো?
না। তা একেবারেই নয়। এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার আগেই তারা সমস্যার গভীরে প্রবেশ করেছে। রকেটের তরল গ্যাস কোন পথে নির্গমন হচ্ছিল তার ‘নিপল জয়েন্ট’ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনে হিলিয়াম গ্যাসের যে ধারক জ্বালানিতে চাপ তৈরি করে, ছিদ্র সেখানেই। তার জেরেই চাপ তৈরি হচ্ছিল না জ্বালানি ট্যাঙ্কে। তবে কেন এমন হল, এখনও তার জবাব খোঁজা চলছে। এই পরিস্থিতিতে যেমন চাঁদের এই অভিযানের নতুন করে প্রস্তুতি চলছে, তার সঙ্গে কিছু প্রস্তুতি ও কিছু পরিকল্পনা প্রায় সেরে ফেলা হয়েছে আগামী বছর তিন-চারেকের নানা অভিযানের।
শুধু চাঁদের তৃতীয় অভিযান নয়, তালিকাটা হাতে আসার পর একপ্রকার চমকেই উঠতে হল। ইতিমধ্যে ৩৬টি প্রকল্প হাতে নিয়ে ফেলেছে দেশের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র। যার মধ্যে ১৭টি হওয়ার কথা ২০১৯-২০-র মধ্যে। ১৯টি হওয়ার কথা ২০২০-২১-এর মধ্যে। সংসদে নির্দিষ্ট প্রশ্নের জবাবে যার তালিকা দাখিল করেছে কেন্দ্রের সরকার। যার জেরে আপাতত নিশ্বাস ফেলার সময় নেই ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবানের।
চলতি বছরেই বা আগামী বছরে সূর্য অভিযানের মতো একইরকম গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের সময় নির্ধারিত হয়ে আছে। খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা। সূর্যের করোনা অংশ অর্থাৎ, তার বাইরের গ্যাসজাতীয় অংশ সৌরমণ্ডলে বহুদূর বিস্তৃত। বিজ্ঞানীদের মতে, পুরো অংশটা পরিমাপ করলে দেখা যাবে, সূর্যের গর্ভের উষ্ণতার চেয়েও ওই অঞ্চল বেশি উষ্ণ। সেই রহস্য সমাধান করতে আদিত্য এল ১ নামে অভিযানের তোড়জোড় চলছে।
রয়েছে আরও একটি মঙ্গল অভিযান। ২০২২ সাল নাগাদ তা হতে পারে। তবে সে মার্স অরবিটার মিশন বা ‘মম’-এর মতো মঙ্গলের কক্ষপথে ঘুরবে নাকি, তার বুকে গিয়ে নেমে গবেষণা চালাবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। মঙ্গলে পা রাখলে সেটিও হবে ইসরোর যুগান্তকারী পদক্ষেপ। শুক্রায়ন ১ মিশন নির্ধারিত রয়েছে ২০২৩ সাল নাগাদ। শুক্রের অরবিটার বা কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে তার তথ্য আনার কথা ইসরোর। তার পরই নির্ধারিত রয়েছে তৃতীয় চন্দ্রযান অভিযান। যৌথভাবে জাপানের সঙ্গে তা করার কথা ভারতের।
চন্দ্রযানের দ্বিতীয় অভিযান যতটা সময় নিয়ে উত্তেজিত করে তুলেছিল গোটা দেশকে, তার থেকেও কম সময়ে অভিযান স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত ঠান্ডা মাথায় নিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। জানা যাচ্ছে, কঠিন হোক বা সহজ, এমন অভিযান প্রায় লাগাতার চলে। কখনও একের পর এক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে হয়। ফলে চন্দ্রযানের এই অভিযান গুরুত্বপূর্ণ হলেও, ঝুঁকি নিয়ে তাকে পাঠিয়ে শুধু সাফল্যের কথা ভাবলেই চলবে না। সেক্ষেত্রে ব্যর্থতা আসবে আগে।
এই তালিকায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় অভিযান গগনয়ান। বাজেট এক্ষেত্রে বাধা হবে না। ১০ হাজার কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে এই অভিযানে। অন্তত একজন অভিযাত্রীকে নিয়ে মহাকাশে যেতে চায় গগনয়ান যান। শুধু নিয়ে যাওয়াই নয়, তাঁকে জীবিত এবং সুস্থ ফিরিয়ে আনাটাও লক্ষ্য। সেক্ষেত্রে কল্পনা চাওলার পরিণতির কথা মাথায় রাখা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এই উদ্দেশ্য পূরণ করার আগে ২০২০-২১ সালের মধ্যে গগনয়ানের মানবহীন একটি অভিযান চালাতে চায় ইসরো। জিওসিঙ্ক্রোনাস (জিএসএলভি) রকেটের শক্তি বাড়ানোরও লক্ষ্য রয়েছে ইসরোর। পাঁচ টন ওজন বহন করার ক্ষমতা হবে জিএসএলভির। এই মুহূর্তে যে ক্ষমতা চার টন। একইসঙ্গে ১৯টি পিএসএলভি, পাঁচটি জিএসএলভি মার্ক টু, সাতটি জিএসএলভি মার্ক থ্রি, পাঁচটি ছোটখাট রকেট উৎক্ষেপণেরও পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর।
[আরও পড়ুন: ফের চাঁদে পাড়ির চেষ্টা এমাসের শেষে, অভিযান থমকে গিয়েও শুরু স্বপ্নের কাউন্টডাউন]
The post ম্যারাথন মহাকাশ অভিযানের পথে ভারত, চন্দ্রযান ৩-এর প্রস্তুতিও শেষ ইসরোর appeared first on Sangbad Pratidin.