শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: কাজে এল না বিজেপির পুলওয়ামা ‘তাস’। এমনকী চা বাগানে এতদিনকার গেরুয়া ঝড়ও নিমেষে থামিয়ে দিল ঘাসফুল। উপনির্বাচনে বিজেপির থেকে ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্র ছিনিয়ে নিল তৃণমূল। পুলওয়ামা শহিদের স্ত্রী, বিজেপি (BJP) প্রার্থী তাপসী রায়কে হারিয়ে জয়ের হাসি হাসলেন অধ্যাপক তথা রাজবংশী সংস্কৃতি নিয়ে চর্চা করা তৃণমূল (TMC) প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়। ৪৩১৩ ভোটে জিতলেন তিনি। ৭ বছর পর ধূপগুড়ি পুনরুদ্ধার করল শাসকদল। উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী। সবুজ আবির মেখে শুরু হয়ে গিয়েছে বিজয়োৎসব। উলটোদিকে, বঙ্গ বিজেপিতে ঘোর অমানিশা। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে জেতা আসন হারার জ্বালা তো রয়েইছে, সেইসঙ্গে সুকান্ত-শুভেন্দুর নেতৃত্বাধীন বঙ্গ নেতৃত্ব দিল্লির শীর্ষ নেতাদের কাছে কী জবাবদিহি করবেন, তা ভাবার বইকী।
গত ৫ তারিখ ধূপগুড়িতে উপনির্বাচন (Dhupguri By-Election) হয়েছে। মূলত ত্রিমুখী লড়াই ছিল। তৃণমূলের নির্মলচন্দ্র রায়, বিজেপির তাপসী রায় ও বাম-কংগ্রেস জোটপ্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায়ের মধ্যেই ছিল লড়াই। তবে শুক্রবার গণনার শুরু হতেই দেখা যায়, তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। অনেক পিছিয়ে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায়। আর তাই তৃতীয় রাউন্ড গণনা শেষেই গণনাকেন্দ্র ছেড়ে চলে যান তিনি।
[আরও পডুন: দপ্তর বদলের ফাইল নিয়েও রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের মাঝেই বাবুলের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক]
গণনা শুরুর দু-এক রাউন্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। কিন্তু গ্রামাঞ্চল ও চা বলয়ের (Tea Garden) দিকের এলাকাগুলিতে যত এগোতে থাকে গণনা, ততই এগিয়ে যেতে থাকে শাসকদল। মোট দশ রাউন্ড গণনা হয়। তাতে তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়ের প্রাপ্ত ভোট মোট ৯৬,৯৬১। বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়ের ঝুলিতে এসেছে ৯২,৬৪৮ ভোট। আর অনেক পিছিয়ে মাত্র ১৩,৬৬৬ ভোট পেয়েছেন বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায়। অর্থাৎ ৪৩১৩ ভোটে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী। আর লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election 2024) আগে এই জয় নিঃসন্দেহে বড় ইঙ্গিতবাহী।
[আরও পডুন: ড্রোন থেকে 5G, মোদি-বাইডেন হাইভোল্টেজ বৈঠকে থাকছে আর কী চমক?]
উত্তরবঙ্গ মোটের উপর বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলেই পরিচিত। লোকসভা হোক কিংবা বিধানসভা নির্বাচন, উত্তরবঙ্গে পদ্মবনের বিকাশ ঘটেছে। বিশেষত চা বাগান এলাকায় বিজেপি হাওয়া ছিল প্রবল। সেখানকার বিজেপি নেতারা ব্যাপক প্রচার করেছেন। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের থেকে বিজেপির হাতে চলে গিয়েছিল ধূপগুড়ি আসনটি। এবার আবার তৃণমূল তা পুনরুদ্ধার করল। বোঝা গেল, উত্তরবঙ্গের মানুষজন আর বিজেপিতে ভরসা রাখছে না। লোকসভা নির্বাচনের আগে তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। রাজ্যের যে কোনও নির্বাচনে শাসকদল ‘মাসল পাওয়ারে’ জিতছে বলে যে অভিযোগ বরাবর করে থাকে বিজেপি, তা অন্তত ধূপগুড়ির জন্য প্রযোজ্য হল না। একটিও সংঘর্ষের খবর মেলেনি ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে। ফলত শাসকদলের হিংসা দিয়ে তৃণমূল ধূপগুড়ি জিতেছে, দিল্লির নেতাদের কাছে এই ‘অজুহাত’ও দিতে পারবেন না সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীরা। এই অবস্থায় বাংলাজুড়ে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হওয়া ছাড়া গেরুয়া শিবিরের অন্য কোনও অবস্থানই নেই।