রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের কারণে পূর্ব ভারতের সর্ববৃহৎ সামুদ্রিক মৎস্য নিলাম কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল মৎস্যজীবী সংগঠন। আগামী ২২ মার্চ থেকে এই আন্তর্জাতিক মৎস্য নিলাম কেন্দ্র বা মাছের বাজার বন্ধ থাকছে বলে বৃহস্পতিবার এক নোটিস জারি করে মৎস্যজীবীদের একথা জানিয়ে দিয়েছে দিঘা ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন।
সরকারি নির্দেশিকার জেরে ইলিশ সংরক্ষণের জন্যে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ৬১ দিন সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। কিন্তু তার প্রায় একমাস আগে থেকেই দিঘা মোহনায় মাছের বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে চলেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। কারণ, এই বাজারে প্রত্যেকদিন গড়ে প্রায় ৫ কোটি টাকারও বেশি মাছ কেনাবেচা হয়। কয়েক লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজে নিযুক্ত থাকেন। মৎস্য নিলাম কেন্দ্র হওয়ায় রোজ প্রচুর মানুষ ভিড় জমায়। সরকারিভাবে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ফলে মৎস্য নিলাম কেন্দ্র বন্ধ করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না বলে দাবি মৎস্যজীবী সংগঠনের।
দিঘা মোহনা মৎস্য নিলাম কেন্দ্র বা মাছের বাজার মূলত সামুদ্রিক মাছ নিলামে পূর্ব ভারতের সর্ববৃহৎ কেন্দ্র। বাংলার পাশাপাশি ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও গুজরাট থেকেও এখানে সামুদ্রিক মাছ আসে নিলাম হওয়ার জন্য। এখান থেকেই সামুদ্রিক মাছ চিন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। করোনা ভাইরাসের কারণে এই সব দেশে মাছ রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মাছের দাম দিন দিন কমছিল। গত একমাসে প্রায় ৫০ কোটি টকার ক্ষতি হয়েছে মোহনা বাজারে। মৎস্য নিলাম কেন্দ্র হওয়ায় প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এখানে জড়ো হয়। ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, গুজরাটের লোকজন আসেন। সরকার থেকেও বেশি মানুষের এক জায়গায় জমায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মাছের দাম না থাকায় নিলাম কেন্দ্রটি সংগঠনের তরফে বন্ধ রাখার নোটিস জারি করা হয়। যে সকল ট্রলার মাছ ধরার জন্য গভীর সমুদ্রে আছে তাদের ২১ মার্চের মধ্যে ফিরে আসার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
[আরও পড়ুন: সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে বন্ধ ট্রাক চলাচল, পিঁয়াজ রপ্তানি না হওয়ায় মাথায় হাত চাষিদের]
দিঘা মোহনা ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস জানান, দিঘা মোহনায় মৎস্য নিলাম কেন্দ্রে গুজরাট, কেরালা, তামিলনাড়ু, ওড়িশার মাছও নিলাম হওয়ার জন্যে আসে। ফলে প্রচুর মানুষের ভিড় জমে। করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারিভাবে জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মাছের রপ্তানিও প্রায় বন্ধ। নিলাম কেন্দ্র বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরই ১৫ এপ্রিল থেকে ৬১ দিন সরকারিভাবে সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকছে। তবে মাছ ধরার উপর কোন নিষেধাজ্ঞা থাকছে না। ট্রলারগুলি মাছ ধরলেও দিঘা মোহনায় বিক্রি করা যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
The post করোনা আতঙ্কে বন্ধ দিঘার সর্ববৃহৎ মৎস্য নিলাম কেন্দ্র, জোগানে ঘাটতির আশঙ্কা appeared first on Sangbad Pratidin.