রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় : বিস্ময়-মিশ্রিত বিমূঢ়তা ঠিক কাকে বলে, শনিবাসরীয় সন্ধেয় দিলীপ বেঙ্গসরকরের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ভাল রকম টের পাওয়া গেল! ভারতীয় ক্রিকেটের ‘কর্নেল’ বুঝতেই পারছেন না, কী এমন ঘটে গেল যে দুম করে টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলেন বিরাট কোহলি? গড়গড়িয়ে বলে গেলেন যে, বিরাট রান পাচ্ছেন না এমন নয়। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে তাঁর যা রেকর্ডের শৌর্য, ভারতের কোনও ক্যাপ্টেনের নেই। উদ্বিগ্ন দিলীপ জানতে চান, কোহলির হঠাৎ হলটা কী?
আসলে কোহলির ভারতীয় টিমে ঢোকার নেপথ্যে বেঙ্গসরকরের (Dilip Vengsarkar) যথেষ্ট বড় অবদান রয়েছে। তিনি জাতীয় নির্বাচক প্রধান ছিলেন যখন, দু’টো যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে ভারতীয় ক্রিকেটের গতিপথই বদলে দিয়েছিলেন। এক, মহেন্দ্র সিং ধোনিকে অধিনায়ক করা। আর দুই, তরুণ বিরাট কোহলির টিমে অন্তর্ভুক্তি। দু’টোই তাঁর আমলে ঘটেছিল এবং কোহলিকে নিয়ে ‘লর্ড অফ দ্য লর্ডসে’র মধ্যে এখনও কোথাও যেন একটা অপত্য স্নেহ কাজ করে। নইলে আর সন্ধেয় ফোনে প্রায় আর্তনাদ করে উঠে বলবেন কেন, “কোথা থেকে কী যে হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারলাম না। কোহলি ছাড়ল কেন? একটা কারণ তো থাকবে?”
[আরও পড়ুন: ফের ভিসা মামলায় হার, জকোভিচকে ফেরত পাঠানোর তোড়জোড় শুরু অস্ট্রেলিয়ার]
প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটারকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কারণটা ভারতীয় বোর্ডের (BCCI) সঙ্গে সম্প্রতি কোহলির তুমুল দ্বন্দ্ব কি না। বেঙ্গসরকর জবাবে বললেন, “জানি না। মুম্বইয়ে বসে কেপটাউনে কী ঘটছে, সেটা বলা সম্ভবও নয়। কিন্তু আমার সংশয় হচ্ছে, যা আমরা দেখছি, তার বাইরেও কিছু ঘটে যায়নি তো? টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি এমনি এমনি কেউ ছাড়ে না। প্লাস, ও রান পাচ্ছিল। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে রেকর্ড তো অতুলনীয়। কোন ভারত অধিনায়ক ৬৮টা টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে চল্লিশটা জিতেছে?”
কিন্তু কোহলির (Virat Kohli) টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেওয়াটা তো শাপে বরও হতে পারে? পারিপার্শ্বিকের একটা চাপ যে বাড়তি লাগেজ হিসেবে তাঁকে বইতে হচ্ছিল, সেটা তো আর থাকবে না। বোর্ডের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ। দুর্বল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে টেস্ট সিরিজ হারের দায়। এ সব তো ভবিষ্যতে আর থাকবে না অধিনায়ক না থাকলে। উলটে পুরনো বিরাটকে দেখার সম্ভবনা রয়েছে। যুক্তি শুনতেই চান না বেঙ্গসরকর। বলে দেন, “আমাকে বলুন, ও খারাপটা কোথায় খেলল? আমাদের মুশকিল হল, বিরাট সেঞ্চুরি না করলে আমরা বলে দিই, কিছুই করেনি। সেটা হয় নাকি? গত দু’বছরে শুধু সেঞ্চুরি পায়নি বিরাট। কিন্তু রান তো করেছে। কেপটাউনের ৭৯ আমার দেখা ওর অন্যতম সেরা ইনিংস। তাই বুঝতে পারছি না, ছাড়ল কেন?” এবং বিস্ময়টা একা বেঙ্গসরকরের নয়। দেশের অন্যান্য প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক প্রধানদেরও আছে।
ভারতীয় ক্রিকেটে (Indian Cricket) বিরাট-জমানার প্রত্যক্ষ শরিক ছিলেন যিনি, সেই পূর্বতন নির্বাচন প্রধান এমএসকে প্রসাদ যেমন। রাতে ফোন করায় বললেন, “ঘোষণাটা শোনার পর ঘণ্টা দেড়েক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও হজম হচ্ছে না। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে, বিরাট টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিল। কারণ খুঁজতে যাব না। সিস্টেমের বাইরে বসে সেটা করা শোভনীয়ও নয়। কিন্তু এটা বলতে কোনও অসুবিধে নেই যে আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, টেস্টে ক্যাপ্টেন বিরাট ও ক্রিকেটার বিরাট, দু’জনেরই অনেক কিছু দেওয়ার আছে।”
[আরও পড়ুন: রোহিত বা রাহুল নন, ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হিসাবে এই তরুণ তুর্কিকেই পছন্দ গাভাসকরের]
বেঙ্গসরকর আবার বুঝতে পারছেন না, কোহলি সরে যাওয়ার পর টেস্ট ক্রিকেটে ভবিষ্যৎ অধিনায়কের ব্যাটনটা কার হাতে যাবে? সীমিত ওভারের ফর্ম্যাটের অধিনায়ক রোহিত শর্মাই টেস্ট অধিনায়কত্বের তাজও পাবেন কিনা, ঘোরতর সংশয় আছে তাঁর। বলছিলেন, “জানি না বোর্ড কাউকে ভেবে রেখেছে কি না? রোহিতের চৌত্রিশ বছর বয়েস হয়ে গিয়েছে। প্লাস ফিটনেস ভোগাচ্ছে ওকে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তো খেলতে পারল না। সাধারণত ভারত ‘এ’ টিমের অধিনায়ককে সিনিয়র টিমের ক্যাপ্টেন হিসেবে তৈরি করা হয়। এখানে কী হবে, জানি না।” কী দাঁড়াল? বেঙ্গসরকরদের কথা ধরলে, শনিবাসরীয় ভারতীয় ক্রিকেটে একটা শূন্যস্থান তৈরি হল, যা পূরণ করা বড় কঠিন।