বিশাখা পাল: মানুষের মনের খোঁজ পাওয়া খুব দুরূহ ব্যাপার। প্রত্যেকে প্রত্যেকের থেকে আলাদা। কারণ প্রতিটা মানুষের সমাজ ভিন্ন, পরিস্থিতি ভিন্ন, অনুভূতি ভিন্ন। আর তাই প্রতিটি মানুষের চিন্তাভাবনাও ভিন্ন। সমাজের সমস্যা মানুষের অনুভূতিকে চালিত করে। আপাতভাবে মনে হতেই পারে আমি আমার মালিক। কিন্তু অন্তরালে থেকে অঙ্গুলিহেলনের কাজ কিন্তু করে সমাজ, পরিস্থিতি। পরিচালক দেবজয় মল্লিকের ছবি ‘মিরাজ’-এ উঠে এসেছে সেই কথাই। সমাজের সমস্যার পাশাপাশি মানুষের অনুভূতি নিয়েও ১০ মিনিটের স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি বানিয়েছেন পরিচালক। আর প্রথম ছবিতেই তিনি ব্যতিক্রমী।
১০ মিনিটের এই স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিতে রয়েছে মোট চারটি গল্প। গোটা ছবিতে নেই কোনও সংলাপ। ছবির প্রতিটি গল্প আড়াই মিনিটের। আর প্রতিটি গল্পেই রয়েছে দু’টি করে চরিত্র। যেমন ছবির প্রথম গল্পে রয়েছেন ভরত কল ও প্রত্যুষা পাল। এই গল্পের বিষয়বস্তু কৈশোর। আধুনিক জীবন এখন অনেক যান্ত্রিক। এখন আবেগ সবার মধ্য়েই অনেক কম। বাস্তববাদী হতে গিয়ে কোথাও যেন রোবট হয়ে যাচ্ছে কিশোর কিশোরীরা। এখন এইট-নাইনের ছেলেমেয়েদের হাতের দামী স্মার্টফোন। কেতাদুরস্ত জীবনযাত্রায় কৈশোরটাই হারিয়ে গিয়েছে তাদের। এটাই প্রথম গল্পের সারমর্ম। এখানে বাবা হিসেবে দেখানো হয়েছে ভরত কলকে। মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রত্যুষা।
[ আরও পড়ুন: ‘সোজা পায়ে পড়ে গিয়েছিলাম’, চুনী গোস্বামীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের গল্প বললেন কবীর সুমন ]
পরের গল্পে এক কলেজ পড়ুয়াকে নিয়ে। বর্তমানে ইঁদুর দৌড়ে নিজের ইচ্ছেটাকে জলাঞ্জলি দিয়ে দিতে হয় তাঁদের। গান করা, ছবি আঁকা, কাব্য চর্চা মানে এক প্রথম যৌবনে প্রবেশ করা ছেলে বা মেয়ের পক্ষে বিলাসিতার নামান্তর। এই নিয়েই বাঁধা হয়েছে দ্বিতীয় গল্প। তৃতীয় গল্পের কেন্দ্রবিন্দু এক গম্ভীর শিক্ষিকা। যিনি ছেলেমেয়েদের কাছে খুব রাগী। কিন্তু তাঁর সেই রাগী মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক প্রাণোচ্ছ্বল কিশোরী। এখনও নন্টে-ফন্টের ভক্ত। কেল্টুর কেরামতি এখনও তাঁর মনে হাসির ফোয়ারা ছোটায়। অন্যদিকে এমন অনেক শিশু আছে যারা শৈশবেই বৃদ্ধের মতো গম্ভীর। এমন পরস্পর বিরোধী দুই মানুষের গল্প নিয়েই তৃতীয় অধ্যায়।
চতুর্থটি গল্পটি এক শহরতলির মেয়ের। প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী সে। কিন্তু দিনের শেষে সে তো একজন মেয়ে! স্বল্প বসনে ক্যামেরার সামনে গেলে কয়েকজোড়া চোখ তাকে অনবরত বিদ্ধ করে। রাস্তার ধারে মোড়ের চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে, গরম চা আর প্রজাপতি বিস্কুট খেতে খেতে ক্ষণিকের জন্য নিজের হারিয়ে যাওয়া শহরতলির মেয়েটার কথা ভাবতে পারে সেই প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী। কিন্তু ওটুকুই।
পরিচালক জানালেন, এই চারটি গল্পই আধুনিক সমাজের প্রেক্ষাপটের উপর বানানো। চারটি গল্পের যোগসূত্র এক পাগল। প্রতিটি গল্পেই তার উপস্থিতি রয়েছে। গোটা ছবিটাই নির্বাক। এই সবাক যুগে দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ নির্বাক ছবি তৈরি করে নিঃসন্দেহে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন দেবজয়। এ বছর জানুয়ারিতে হয় ছবির শুটিং। ফলে শুটিং নিয়ে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি ছবির গোটা টিমকে। কিন্তু লকডাউনের কারণে মুক্তি নিয়ে একটু টানাপোড়েন হবে বলেই মনে করছেন পরিচালক। যদিও তাঁর ইচ্ছে এখন কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হোক ‘মিরাজ’। তারপর, জুলাই নাগাদ না হয় মুক্তির কথা ভাবা যাবে। তবে তার আগে, মে মাসের শেষের দিকে মুক্তি পাবে ছবির ট্রেলার।
[ আরও পড়ুন: ফের বলিউডে মৃত্যুসংবাদ, প্রয়াত ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন প্রযোজক গিল্ডের সিইও কুলমিত ]
The post সমাজের সমস্যা তুলে ধরবে নির্বাক শর্ট ফিল্ম ‘মিরাজ’, প্রথম ছবিতেই ব্যতিক্রমী পরিচালক দেবজয় appeared first on Sangbad Pratidin.