সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ধর্মতলায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে মতুয়াদের অবস্থান বিক্ষোভ। কিন্তু কী ইস্যুতে? সেটাই স্পষ্ট নয় বিক্ষোভাকারীদের কাছে। সেই অস্পষ্টতা থেকেই দ্বন্দ্ব। মতুয়া মহাসংঘের রাজনৈতিক প্রতিবাদে ধরা পড়ল দ্বন্দ্বের ছবি, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। তৃণমূলের মতুয়া-ঘনিষ্ঠতা নিয়েও কটাক্ষ শুরু করেছেন বিরোধীরা।
এনআরসি’র প্রতিবাদে আজ ধর্মতলায় সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘের অবস্থান কর্মসূচি। সেইমতো ব্যানার, পোস্টার নিয়ে বেলা প্রায় ১১ টা নাগাদ তাঁরা জমায়েত হয়েছেন। সঙ্গে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা গাইঘাটার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। মূলত তাঁরই নেতৃত্বে এই কর্মসূচি। অথচ সেখানে নেই মতুয়া মহাসংঘের সর্বময় নেত্রী মমতাবালা ঠাকুর, নেই প্রথম সারির আরও অনেকেই। এমন ছন্নছাড়া দশা কেন? বিক্ষোভকারীদের পোস্টার দেখেও প্রতিবাদের মূল ইস্যু বোঝার উপায় নেই। সেখানে CABএর প্রতিবাদে বিক্ষোভ বলে উল্লেখ। অথচ, সোমবার মাঝরাতে লোকসভায় পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অনুযায়ী, মতুয়া-সহ শরণার্থী হিসেবে এদেশে আশ্রয় নেওয়া সমস্ত হিন্দুদের সুরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে, ‘শরণার্থী’র মতো পরনির্ভরশীল একটা পরিচয় ছেড়ে দেশের ‘নাগরিক’ বলে সম্মান পেতে চলেছেন। যা নিয়ে তাঁদের দীর্ঘ আন্দোলনের ইতিহাস আছে। তাহলে তার প্রতিবাদ কেন? এর কোনও সদুত্তর মিলল না হাজির নেতাদের কাছে। বরং তাঁদের হয়ে উত্তর দিলেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি স্বাভাবিকভাবেই যা বললেন, তা একেবারেই তৃণমূলের বক্তব্য, তাঁদের নিজেদের ব্যাখ্যা।
[আরও পড়ুন: ফিরছে ‘আচ্ছে দিন’! আজ থেকে কমছে পিঁয়াজের দাম?]
তার চেয়েও বড় কথা এই কর্মসূচি থেকে মতুয়াদের দ্বিধাবিভক্ত হওয়ার বিষয়টিও প্রকাশ্যে এল। সকাল থেকে খবর ছিল, মমতাবালা ঠাকুর থাকবেন গান্ধীমূর্তির পাদদেশে। কিন্তু সময়ে দেখা গেল, তিনি গরহাজির। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান যে মমতাবালা ঠাকুর অসুস্থ, তাই তিনি এই কর্মসূচিতে হাজির থাকতে পারেননি। আর বনগাঁয় মমতাবালা ঠাকুরকে একই প্রশ্ন করা হলে, তিনি অসুস্থতার কথা বললেন বটে। তবে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে যে কর্মসূচি ঠিক করা হয়নি, তা বলতেও দ্বিধা করলেন না। আর তাঁর এই মন্তব্যেই বাড়ছে জল্পনা।
[আরও পড়ুন: নামল পারদ, সপ্তাহ শেষেই শীতের থাবা কলকাতায়?]
মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি বড়মা অর্থাৎ বীণাপানি দেবীর মৃত্যুর পরই সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গিয়েছে ঠাকুরবাড়ি। একদিকে তৃণমূলপন্থী তথা প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর, অন্যদিকে, বিজেপির শান্তনু ঠাকুর। সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘের রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করেন দু’জনই। উভয়েরই দাবি, তাঁরাই প্রকৃত মতুয়া আদর্শে দীক্ষিত। ধর্মতলার অবস্থান মঞ্চে সেই দ্বন্দ্বের ছবি ধরা পড়লে হয়ত নতুন করে বিস্ময়ের অবকাশ থাকত না। কিন্তু সামগ্রিকভাবে তৃণমূলের সঙ্গে মমতাবালা ঠাকুরের একটা দূরত্বের ইঙ্গিতই দিয়ে গেল। একইসঙ্গে এনআরসি’র প্রতিবাদে তৃণমূলের অবস্থান এবং সিএবি’র ‘প্রতিবাদে’ মতুয়াদের বিক্ষোভকে একসারিতে তুলে আনার বিষয়টিও বেশ গোলমেলে ঠেকেছে রাজনীতির খুঁটিনাটি জানা মানুষজনের একাংশের কাছে।
শুনুন মমতাবালার বক্তব্য:
The post তৃণমূলের সঙ্গে বাড়ছে দূরত্ব? কলকাতায় মতুয়াদের বিক্ষোভে নেই সংঘাধিপতি নিজেই appeared first on Sangbad Pratidin.