ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: বিচিত্র এই মানবদেহ। শরীর অনেক সময় নিজেকেই তিলতিল করে ধ্বংস করতে চায়! চিকিৎসা পরিভাষায় এক্ষেত্রে শরীরের কোষগুলি একই সঙ্গে অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে। বেড়ে যায় অটো ইমিউন সিস্টেম (Auto Immune System)। ফলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সব নষ্ট হতে শুরু করে। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের (Barasat) বছর ১৬ বয়সের একটি মেয়ে এমন রোগেই আক্রান্ত হয়েছিল। প্রায় দু’মাসের জ্বর। সঙ্গে মুখভরতি র্যাশ। চুল উসকোখুসকো। অতি ঘন ফেনার মতো প্রস্রাব। ছিল শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা, হাত-পা ফোলা। এমনকী, সেরিব্রাল স্ট্রোকও হয়েছিল। মুখ ফুলে কালো হয়ে গিয়েছিল। দ্রুত কমে যাচ্ছিল শ্বেত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট (Platelate)।
বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এম আর বাঙ্গুরে (MR Bangur Hospital) যখন মেয়েটিকে আনা হয়েছিল, প্রথম পরীক্ষা করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের বুঝতেই সমস্যা হচ্ছিল রোগের উৎস কোথায়। রক্তের বেশ কয়েকটি পরীক্ষার পরও কিছুই বোঝা যায়নি। শেষ পর্যন্ত রক্তের এএনএ (অ্যান্টি নিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি) পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন ডা. ঋষভ মুখোপাধ্যায়। দেখা গেল শরীরের অন্টিবডিগুলি অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে পড়েছে। ফলে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ও কোষ নষ্ট হতে শুরু করেছে। ঋষভের কথায়, ‘‘এটা অনেকটা আমবাত বা রিউম্যাটিক আর্থারাইটিসের মতো রোগ। তুলনায় মহিলাদের এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ করে ১৫-৪৫ বছরের বয়সের মহিলাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শরীরের প্রোটিন দ্রুত প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়ায় ফেনার মতো হচ্ছিল।”
[আরও পড়ুন: শর্টসার্কিট থেকে আগুন নাকি নথি পোড়ানোর চেষ্টা? দুর্গাপুরে পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিকাণ্ডে রহস্য]
উপায় তখন একটাই, শরীরের ধ্বংসাত্মক আচরণকে অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। তার জন্য দরকার বিশেষ ধরনের ইঞ্জেকশন (Injection)। সেই ইঞ্জেকশনও সহজলভ্য নয়। ডা. ঋষভ মুখোপাধ্যায় হাজির হন সুপার ডা. শিশির নস্করের কাছে। সবটা শুনে স্বাস্থ্যভবনে (Swasthya Bhaban) চিঠি লিখলেন তিনি। রোগ নিরাময়ের জন্য দরকার ‘রিটাক্সিম্যাব’ নামের ইঞ্জেকশন। যার একেকটির দাম গড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো।
[আরও পড়ুন: পুরুষাঙ্গের প্রতি আসক্তি, বৈঠকের ফাঁকে সঙ্গম! যৌনকেচ্ছায় ভরা মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ইতিহাস]
স্বাস্থ্যভবন থেকে আসা সেই ইঞ্জেকশন দেওয়ার সাতদিনের মধ্যে মেয়ে পুরো সুস্থ! চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, স্ট্রোক হওয়ায় রক্ত পাতলা করার ওষুধ দেওয়া হয়েছে। একমাস হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়ি ফিরেছে মেয়ে। মাঝেমধ্যে ফলোআপে আসতে হয়। ঋষভ বলেছেন, ‘‘সমস্যা হল এই রোগ থেকে সুস্থ হলেও গভর্বতী হলে যে কোনও সময়ে স্বাভাবিকভাবেই গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে। তাই অন্তঃসত্ত্বা হলে কঠোর অনুশাসনে থাকতে হয়।’’