অভিরূপ দাস: তর্জনি, মধ্যমা ছিন্নভিন্ন। অনামিকা কোনওরকমে ঝুলছে। ওই অবস্থাতেই ঝাড়গ্রাম থেকে কলকাতা। ১৭৭ কিলোমিটার উজিয়ে এসে বাঁচলেন সনৎকুমার পাল। বেঁচে গেল তাঁর ডান হাতের তিন তিনটে আঙুল।
নদিয়ার বাসিন্দা সনৎ কুমার পাল কাজ করেন ঝাড়গ্রামের কাগজের ফ্যাক্টরিতে। গত ১০ জানুয়ারি যন্ত্রে কাগজ কাটতে গিয়ে বিপত্তি। ধারালো ইস্পাতের ব্লেডে ডান হাতের তিনটে আঙুল কেটে ফেলেন। তড়িঘড়ি স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালে ভরতি হন সনৎবাবু। যখন তিনি হাসপাতালের গেটে ঘড়িতে তখন রাত বারোটা। তবে দেরি করেননি চিকিৎসকরা। খবর পাওয়া মাত্রই হাসপাতালে চলে আসেন প্লাস্টিক সার্জন ডা. অখিলেশ আগরওয়াল। রাত আড়াইটেয় শুরু হয় অস্ত্রোপচার।
[আরও পড়ুন: স্কুলে হাম-রুবেলার টিকা নেওয়ার পর অসুস্থতার অভিযোগ, শিলিগুড়ির হাসপাতালে মৃত্যু ছাত্রীর]
প্লাস্টিক সার্জন ডা. অখিলেশ আগরওয়ালের কথায়, ভেতরের শিরা, ধমনী শুদ্ধ পুরো আঙুলটাই কেটে গিয়েছিল। নতুন করে রক্ত সঞ্চালন চালুক করাই ছিল চ্যালেঞ্জ। রিইমপ্ল্যান্ট আর রিভাস্কুলারাইজড দুটোই করা হয় সনৎবাবুর। ছ’ঘন্টার অস্ত্রোপচারে তর্জনি, মধ্যমা, অনামিকা জোড়া লাগানো হয়। ধমনী নেওয়া হয় হাত থেকে। সেটা গ্রাফ্টিং করা হয়। আঙুলের মধ্যে শিরা উপশিরা অত্যন্ত সূক্ষ্ম। গোটা অস্ত্রোপচারটা হয় মাইক্রোস্কোপে চোখ রেখে। যাতে সাধারণের চেয়ে দশগুণ বৃহদাক্কারে দেখা যাচ্ছিল শিরা উপশিরা। অ্যানাস্টোমোসিস প্রক্রিয়ায় জোড়া লাগানো হয় তিনটে আঙুল। অস্ত্রোপচারের পর আপাতত সুস্থ সনৎবাবু। জানিয়েছেন, ঝাড়গ্রামের বেলতলা ইউনিটি পেপার মিলে কাজ করতে গিয়েই দুর্ঘটনায়। ঝাড়গ্রাম হাসপাতাল স্রেফ স্টিচ করে ছেড়ে দিয়েছিল। পুরোপুরি সেড়ে উঠতে তাঁর আরও দু’মাস লাগবে। আপাতত কিছু প্লেট বসানো রয়েছে আঙুলে। ছ’সপ্তাহ পরে সেই প্লেটগুলো খুলে নেওয়া হবে।
সনৎবাবুর ঘটনাটি উদাহারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন চিকিৎসকরা। বলছেন, আঙুল কেটে পড়ে গেলে ভয় পাবেন না। ডা. আগরওয়ালের কথায়, আঙুল কেটে পড়ে গেলে কোনও ওষুধ নয়। কাটা আঙুলটাকে ভালো করে জলে ধুয়ে নিন। এরপর সেটাকে শুকিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে নেবেন। বাইরে আরও একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে নিন বরফের কুচি।। অর্থাৎ এমনভাবে কাটা আঙুলটাকে রাখতে হবে যেনো তা ঠান্ডা থাকে। আবার না ভেজে। বারোঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে এলেই ফের তা জোড়া লাগিয়ে দেওয়া যাবে।