অভিরূপ দাস: বেরচ্ছে তো বেরচ্ছেই। থামার নাম নেই। অপারেশন টেবিল ঘিরে থাকা ডাক্তারবাবু, নার্সরা থ। এ পেট, নাকি পাথর খাদান! একটা-দু’টো নয়। একশো দুশোও নয়। শতায়ু বৃদ্ধের পিত্তথলি থেকে বেরল নয়-নয় করে এক হাজার পাথর। কুচি কুচি, রাশি রাশি। আশ্চর্যের এখানেই শেষ নয়। হাওড়ার বিশ্বনাথ রায়ের গলব্লাডার স্টোন অপারেশন হল যে বয়সে, সাধারণত ততদিন বাঁচারই কথা ভাবতে পারেন না অনেকে। অপারেশন তো দূর।
হাওড়া বেলগাছিয়া রোডের বাসিন্দা বিশ্বনাথবাবুর জন্ম ১৯২২ সালে। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম বামফ্রন্ট সরকার গঠনের সময় তিনি প্রৌঢ়ত্বের দোরগোড়ায়। এহেন শতবর্ষজীবীর পেট থেকে হাজার পাথর বার হওয়ায় চিকিৎসকরাও বিস্মিত। বেশ কিছুদিন ধরেই পেটব্যথায় ভুগছিলেন বিশ্বনাথ রায়। তাঁর বাড়ি হাওড়ার বেলগাছিয়া এলাকায়। সম্প্রতি নাতি স্নেহাংশু রায় তাঁকে নিয়ে আসেন বেলেপোল শরৎ চ্যাটার্জি রোড এলাকার বিরল সেবাসদনে। চিকিৎসকরা দেখেন পেটের উপরের অংশে ডান দিকে ব্যথা হচ্ছে। এটি গলব্লাডার স্টোনের মূল উপসর্গ।
[আরও পড়ুন: গাড়ির পর বাড়িতেও গুপ্তধনের খোঁজ, হাওড়ায় ব্যবসায়ীর ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার বিপুল টাকা]
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, সন্দেহ সত্যি। পাথর জমেছে পিত্তথলিতে। সিদ্ধান্ত হয় ল্যাপারোস্কোপিক অস্ত্রোপচার করার। সাধারণত পিত্তথলির অস্ত্রোপচার আকছার হলেও এই বয়সে তা বিরলতম। সার্জন ডা. উৎপল দে জানিয়েছেন, একশো বছরের কারও শরীরে অস্ত্রোপচার বড় সোজা কথা নয়। সতর্ক না হলে অপারেশন টেবিলেই রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ডা. উৎপল দে-র কথায়, “আশি পেরোন মানেই তাঁর শরীরের কলকব্জাগুলি দুর্বল হতে শুরু করেছে। বয়সজনিত নানা সমস্যা দেখা যায় শরীরে। লিভার কমজোরি হয়ে পড়ে। হৃদপিণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে বাসা বাঁধে ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন।” যতরকম অন্তরায় থাকার কথা সবই ছিল ওঁর। তবে তারপরেও সফল হয়েছে অস্ত্রোপচার। আপাতত তেলমশলা ছাড়া খাবার খেতে হবে ওঁকে।
পিত্তথলিতে পাথরের কারণ কী? ডা. উৎপল দে-র কথায়, সাধারণত রক্তে কোলেস্টেরল বাড়লে বা বিলরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে পিত্তরসের ক্ষরণে বাধা আসে। সেই পিত্তরস পিত্তথলিতে জমে পাথর তৈরি করে। মহিলাদের ক্ষেত্রেই গলব্লাডার স্টোনের প্রবণতা তুলনামূলক বেশি। ঘন ঘন উপোস করা, অসময়ে খাওয়া, ডায়াবেটিক, মেনোপজের পর হরমোন রিপ্লেসমেন্টের কারণে কিংবা কোনও এক সময় প্রচুর গর্ভনিরোধক বড়ি খাওয়ার জন্য মহিলাদের এই স্টোনের আশঙ্কা বেড়ে যায় অনেকটা। মেয়েদের তুলনায় কম আক্রান্ত হলেও পুরুষরাও এই অসুখের বাইরে নয়। অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, হরমোনাল অসুখ, কোলেস্টেরলের বাড়বাড়ন্ত পুরুষদের ক্ষেত্রেও গলব্লাডারে পাথর তৈরি করতে পারে। শতায়ু ওই ব্যক্তির গলব্লাডার স্টোনের কারণও এমনটাই বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।