সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত ১ অক্টোবর। আচমকাই আকাশপথে ঝাঁকে ঝাঁকে ইরানের মিসাইল ছুটে এল ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে। অন্তত দুশো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হল ইহুদি দেশটির দিকে। এই হামলার পরই পুরোদস্তুর দামামা বেজে গিয়েছে ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধের! ইরানের দাবি, অন্তত ৯০ শতাংশ মিসাইলই আছড়ে পড়েছে। যা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বিখ্যাত ‘আয়রন ডোম’ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম-সহ ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। স্বাভাবিক ভাবেই অন্যান্য দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কতদূর শত্রুর হামলা ঠেকাতে সক্ষম, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যার মধ্যে রয়েছে ভারতও। একদিকে চিন, অন্যদিকে পাকিস্তান- দুই প্রতিবেশী দেশের হামলার আশঙ্কা সব সময়ই রয়েছে। সেক্ষেত্রে নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কি 'শত্রু'র ছোড়া মিসাইলকে রুখতে সক্ষম হবে?
বলে রাখা ভালো, এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বে হাইপারসনিক অর্থাৎ শব্দের থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন মিসাইল তৈরিতে শীর্ষে চিন। যার মধ্যে অন্যতম ডিএফ-১৭। মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইলের সঙ্গে যেখানে রয়েছে হাইপারসনিক যান, যা ১৬০০ কিমি দূরেও লক্ষ্যভেদ করতে সক্ষম। এছাড়াও আলোচনায় উঠে আসে ডিএফ-২১ ও ডিএফ-২৬-এর কথাও। এর মধ্যে দ্বিতীয়টি যুদ্ধজাহাজ গুঁড়িয়ে দিতে পারে দূর থেকে। যা ভারতের ক্ষেত্রে জলপথে বড়সড় এক 'বিপদ'।
এদিকে পশ্চিমের প্রতিবেশী পাকিস্তানকে নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। ইসলামাবাদের হাতে রয়েছে বাবর ক্রুজ মিসাইল। স্থলপথে ৭০০ কিমি দূরেও লক্ষ্যভেদে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র। যা এমনকী পারমাণবিক অস্ত্রও বইতে পারে। রয়েছে ঘাউরি বা শাহিন ব্যালিস্টিক মিসাইল। বিখ্যাত ভারতীয় শহর থেকে সেনা ঘাঁটি- যে কোনও অংশেই আক্রমণ হানতে পারে পাকিস্তানের এই সব অস্ত্র।
আর এক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, ভারত কতটা প্রস্তুত এই ধরনের হামলা রুখতে? এককথায় বললে দেশীয় ও বিদেশি সম্ভারে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত মজবুত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্নের 'আত্মনির্ভর' ভারতের হাতে রয়েছে পৃথ্বী এয়ার ডিফেন্স তথা পিএডি ও অ্যাডভান্সড এয়ার ডিফেন্স তথা এএডির মতো দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম। এর মধ্যে পিএডি শত্রু দেশের মিসাইলকে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের আগেই গুঁড়িয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে এএডি ধ্বংসক্রিয়া চালাতে পারে মিসাইল বায়ুমণ্ডল পেরনোর পর। এরই পাশাপাশি বলা যায় আকাশ সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেমের কথাও। আকাশপথেই শত্রু মিসাইলকে ৩০ কিমি পর্যন্ত দূরত্বের মধ্যেই উড়িয়ে দিতে পারে এটি।
আবার রাশিয়ার এস-৪০০ ভারতের খুব বড় ভরসা। এস-৪০০ হল সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম। এয়ার ডিফেন্সের কাজও অনায়াসে করতে পারে এই মিসাইল সিস্টেম। ২০০৭ সালে প্রথম রাশিয়ার হাতে আসে এস-৪০০। আমেরিকার রক্তচক্ষু এড়িয়ে যা কিনতে ২০১৮ সালে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে নয়াদিল্লি। চিনের হাতে থাকা হাইপারসনিক মিসাইলকেও অনায়াসে ধ্বংস করতে পারে এস-৪০০। যদিও এখনও পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে তা পরীক্ষিত নয়। তবু বিশেষজ্ঞদের মতে, এস-৪০০ নিঃসন্দেহে হাইপারসনিক মিসাইলের মতো অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রকেও অনায়াসে ধ্বংস করতে পারবে। ফলে সব মিলিয়ে ভারতের অস্ত্র সম্ভার অত্যন্ত মজবুতই। যদিও ইজরায়েলের বিখ্যাত ‘আয়রন ডোম’ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমও সব সময় সফল হয় না, তাই সতর্ক থাকা সব সময়ই শ্রেয়।