সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলায় যে গোয়েন্দা কাহিনির অভাব আছে, তেমন নয়! তবু বাঙালি গোয়েন্দা বললেই লেগে যায় নারদ-নারদ! কারণ তো একটাই- কে পাল্লায় ভারি? প্রদোষ চন্দ্র মিত্র না কি ব্যোমকেশ বক্সি?
বাঙালির চিরন্তন এই সমস্যা, যার উত্তর পাওয়া দুরূহ, তা এবার হানা দিল বক্স অফিসেও। ডিসেম্বরের ২০ তারিখ, শুক্রবার আসতে না আসতেই একদিকে ব্যোমকেশ, অন্য দিকে ফেলু মিত্তির দেখা দিল ছায়াছবির পর্দায়। সেই সূত্রে জোর টক্কর বেঁধে গেল সন্দীপ রায় পরিচালিত ডবল ফেলুদা এবং অরিন্দম শীল পরিচালিত ব্যোমকেশ পর্বর মধ্যে।
তা, কোন ছবিটা দেখতে সবাই আগে যাচ্ছেন?
বলা মুশকিল! কেন না দুটো ছবি খুব স্পষ্ট ভাবে দুই গোত্রে ভাগ করবে নিয়েছে দর্শককে। ফেলুদার জন্ম যেহেতু সন্দেশ পত্রিকার পাতা ভরানোর জন্য, সেইজন্য শুরু থেকেই তার গায়ে কোথাও একটা হলেও লেগে গিয়েছে শিশুপাঠ্য ছাপ। সেখানে আদিম রিপু সংক্রান্ত কোনও জটিলতা নেই, নেই বড়দের জগতের সমস্যাও। ফামফাতাল বা রহস্যময়ী দুষ্টু নারী তো দূর অস্ত, সাধারণ নারীচরিত্রেরও ফেলু মিত্তিরের কাহিনিতে দেখা পাওয়া খুব কঠিন! ফলে, ছবির গায়েও একটা পারিবারিক তকমা জুড়ে যাচ্ছে। বাড়ির সবাই মিলে নিশ্চিন্তে বসে দেখা যাবে এই ছবি।
তা বলে কি চমক একেবারেই নেই? আছে তো! এই ফেলু মিত্তিরের শুধু বইয়ের পাতাতেই নয়, রুপোলি পর্দাতেও বয়স হয়েছে ৫০ বছর। তার মানে ফেলুদা এখন বুড়ো! ছবির ট্রেলারেও বুড়ো ফেলুদার সেই বয়সজনিত সমস্যা ধরা পড়েছে। আর সেখানেই তৈরি হয়েছে টানটান উত্তেজনা। ফেলুদাকে এমন ভাবে এর আগে কখনই দেখা যায়নি। তার উপর আবার রয়েছে দু-দুখানা গল্প- সমাদ্দারের চাবি আর গোলোকধাম রহস্য। সব মিলিয়ে কি আর প্রেক্ষাগৃহ উপচে পড়বে না?
পড়তেই পারে! তবে ব্যোমকেশের ভাগেও রোমাঞ্চকর উপাদান কিছু কম নেই। অৃতের মৃত্যু গল্পটাকে খুব প্রাপ্তবয়স্ত এক ফরম্যাটে ফ্রেমবন্দি করেছেন পরিচালক। সেখানে মূবল কাহিনির সঙ্গে রয়েছে প্রচুর নতুন চরিত্র যা পরিচালকের মস্তিষ্কপ্রসূত। রয়েছে এক লাস্যময়ী বাঈজিও। ব্যোমকেশের যে বাঈজিবাড়ি যাওয়ার স্বভাব ছিল, তা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায় না থাকলেও প্রমাণ করার জন্য তৎপর অরিন্দম শীল। পর পর দুটো ব্যোমকেশ ছবিতেই তাঁর হানা দিচ্ছে বাঈজিরা। সেইসব যৌনতা উসকে দেওয়ার মতো উপাদান বাদ দিলেও ব্যোমকেশকেও পাওয়া যাবে নতুন রূপে। এই ব্যোমকেশ অ্যাতশন স্টান্টেও রীতিমতো দক্ষ। সে একাই মারপিট করে শুইয়ে দিচ্ছে একদল অপরাধীকে, ল্যাসো বা দড়ির ফাঁস ছুড়ে ধরে ফেলছে দুষ্কৃতী। এসবেরও আকর্ষণ কিছু কম নয়।
ফলে, আপাতত কলকাতার যে সব প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ছবিদুটো, সব জায়গাতেই এক অবস্থা- হাউজফুল! সপ্তাহান্তে সব প্রেক্ষাগৃহের সব শো ভর্তি! কোথাও এতটুকু জায়গা নেই! টিকিট কাউন্টারে গিয়ে খোঁজ করলে তিন, চার দিন পরের টিকিট মিলছে। অনলাইনেও একই দশা। এত দিন পরে ফিরে এসেছে বাঙালির দুই প্রিয় চরিত্র, তাদের দেখতে ভিড় হবে না- তা তো হতে পারে না!
কী বলছেন? ডিমনিটাইজেশনের ধাক্কা? হ্যাঁ, ছবি না চললে ইদানীং এই ছুতোটা দোষ হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বটে! কিন্তু ফেলু-ব্যোমকেশের ছবির ব্যবসা প্রমাণ করে দিচ্ছে- সেটা কোনও কারণই নয়। নইলে মাথা কুটেও টিকিট পাওয়া যায় না কেন?
সেইসঙ্গে প্রমাণ হয়ে গেল আরও একটা কথা- গোয়েন্দা-কাহিনি ছাড়া বোধহয় বাংলা ছবি আর বক্স অফিসের বৈতরণী পার হতে পারবে না! সাম্প্রতিক সমীক্ষা তো সেরকমই বলছে!
The post শহরে জোড়া গোয়েন্দা, কার পাল্লা ভারি? appeared first on Sangbad Pratidin.