দুলাল দে: সবে বল গড়িয়েছে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে (CFL)। আর তাতেই ম্যাচ ফিক্সিংয়ের ছায়া !
শুধু ছায়া নয়। সকলের অলক্ষ্যে কাজ করা অ্যান্টি ম্যাচ ফিক্সিং এজেন্সি (Anti match fixing agency) থেকে টালিগঞ্জ-পিয়ারলেস (Tollygunge vs Peerless) ম্যাচের একমাত্র গোল নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সরাসরি বার্তা পাঠানো হয়েছে আইএফএ তে! আর তাতেই পরিস্থিতি এতটা জলঘোলা হয়ে উঠেছে যে, ১৮ জুলাই মঙ্গলবার চুঁচুড়ায় পিয়ারলেসের একমাত্র গোলে টালিগঞ্জকে হারানো নিয়ে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে ‘অ্যান্টি ম্যাচ ফিক্সিং’ সংস্থা। সেই তদন্ত রিপোর্টে যদি সত্যিই অন্যায় কিছু ধরা পড়ে, তখন আইএফএ কী করবে তা নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি কিন্তু বেশ ঘোরালো।
[আরও পড়ুন: কোহলিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন ক্যারিবিয়ান উইকেট কিপারের মা, পোর্ট অফ স্পেনে আবেগপ্রবণ ছবি]
ভারতীয় ফুটবলে ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে অনেক আগেই সিবিআই পর্যন্ত ব্যাপারটা গড়িয়েছিল। যা এখনও তদন্তের মধ্য রয়েছে। ম্যাচ ফিক্সিং বন্ধ করার জন্য বেসরকারি একটি ‘অ্যান্টি ম্যাচ ফিক্সিং’ বিশেষজ্ঞ সংস্থার সঙ্গেও চুক্তিবদ্ধ হয়েছে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন। ফেডারেশনের যাবতীয় প্রতিযোগিতায় কোথাও ম্যাচ ফিক্সিং হচ্ছে কি না, তা সারা বছর ধরে এই সংস্থাটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। আর এসবই জানে এআইএফএফ। কারণ, ভারতীয় ফুটবল থেকে ম্যাচ ফিক্সিং সরানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন ফুটবল কর্তারা।
ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কর্তাদের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে এবার কলকাতা লিগ শুরুর আগেই ফেডারেশনের তরফে দায়িত্ব পাওয়া সেই বেসরকারি ‘অ্যান্টি ম্যাচ ফিক্সিং’ বিশেষজ্ঞ সংস্থার সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করে চুক্তিবদ্ধ হয় আইএফএ। এই অ্যান্টি ম্যাচ ফিক্সিং বিশেষজ্ঞ সংস্থায় কোন রাজ্যে কারা যুক্ত, সংস্থার নাম কী, এই সব কিছুই ফেডারেশনের মতো আইএফএও গোপন রেখেছে।
সংস্থাটির সঙ্গে গোপনে চুক্তি করার একটাই কারণ, অ্যান্টি ম্যাচ ফিক্সিং বিশেষজ্ঞ সংস্থাটি প্রকাশ্যে জানাতে চায় না, তাদের অবস্থান। কারণ, তাদের সংস্থায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করা প্রতিনিধিদের গতিবিধি প্রকাশ্যে চলে এলে নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। তাই ভারতের অন্যান্য ফুটবল রাজ্যের মতো বাংলাতেও গোপনে ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে কাজ করে চলেছে সংস্থাটি। আর এতেই সেই সংস্থাটির নজরে উঠে এসেছে, ১৮ জুলাই চুঁচুড়াতে হওয়া টালিগঞ্জ-পিয়ারলেস ম্যাচটি। যে ম্যাচটিতে একেবারে শেষ মুহূর্তে ৮৭ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের মাথায় সাজন সাহানির একমাত্র গোলে ম্যাচ জিতে যায় পিয়ারলেস। আর সেই গোলটি নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করে আইএফএ-কে কড়া বার্তা পাঠিয়েছে অ্যান্টি ম্যাচ ফিক্সিং সংস্থাটি।
‘ইন স্পোর্টস’ যেহেতু প্রত্যেকটি ম্যাচ সম্প্রচার করছে, তাই যে কেউ ইন স্পোর্টসের অ্যাপে গিয়ে সেদিনের টালিগঞ্জ-পিয়ারলেস ম্যাচে ৮৭ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের মাথায় হওয়া পিয়ারলেসের গোলটি ফের একবার দেখে নিতে পারেন। পিয়ারলেসের গোলের সময় যেভাবে টালিগঞ্জের ডিফেন্ডাররা চুপচাপ বক্সের মধ্যে দাঁড়িয়ে পড়লেন, ইন স্পোর্টসে সেই ম্যাচ ক্লিপিংস দেখতে গেলে হতবাক হয়ে যেতে হয় বৈকি।
সেই ম্যাচের গোলের সময় ভিডিও ক্লিপিংসে যা দেখা যাচ্ছে, তা হল, টালিগঞ্জের বক্সে পিয়ারলেসের ২৯ নম্বর জার্সিধারী মালসোয়ামাজুলাকে উদ্দেশ্য করে একটি থ্রু পাঠানো হয়। আর তা দেখে টালিগঞ্জের ৪ নম্বর জার্সি পরা ডিফেন্ডার আফোনসো কোনও বাধা না দিয়ে বক্সের কোনায় সরে যান। সবচেয়ে মজার হল, মালসোয়ামাজুলা যখন বক্সের মধ্যে বল পেলেন, হেলতে দুলতে ছুটে এলেন টালিগঞ্জের ৫ নম্বর স্টপার শুভদীপ গুন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দেখা গেল মালসোয়ামাকে দেখেশুনে ছেড়ে দিলেন টালিগঞ্জের শুভদীপ। মালসোয়ামা বল নিয়ে বক্সে ঢুকলেন। কোনওরকম বাধা না দিয়ে পিছনে পিছনে বক্সের মধ্যে তখন হাঁটছেন শুভদীপ। তারপর বল রাখলেন ডানদিকে। পিয়ারলেসের সাজন যখন বল গোলে মারছেন, তার আগেই মাটিতে পড়ে গিয়েছেন টালিগঞ্জের গোলকিপার মহম্মদ শাহনাজ!
এই দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছেন ‘অ্যান্টি ম্যাচ ফিক্সিং’ সংস্থার কর্তারা। ফলে সঙ্গে সঙ্গে এই ম্যাচ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বার্তা পাঠানো হয়েছে আইএফএ-কে। রাজ্য ফুটবল সংস্থার অনুমতি নিয়ে এবার পূর্ণ তদন্তর পথে যাচ্ছে সংস্থাটি। ফলে কলকাতা লিগের ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে জল যে অনেক দূর গড়াবে, এখনই বলে দেওয়া যায়।