শিলাজিৎ সরকার: এমনিতে ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের লোগোয় বড় বড় করে লেখা থাকে পশ্চিমবঙ্গ শব্দটা। কিন্তু ১৩১ বছরেও সার্বিকভাবে বাংলার হয়ে উঠতে পারেনি বঙ্গ ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা। অন্তত ক্লাব ফুটবলে। তাই এখনও কলকাতার বাইরের কোনও ক্লাবের কাছে সুযোগ নেই সর্বভারতীয় স্তরে, অর্থাৎ আই লিগের মঞ্চে উত্তরণের।
ভারতীয় ফুটবলের কাঠামোয় বিভিন্ন রাজ্য সংস্থা তৃতীয় ডিভিশন আই লিগের জন্য ক্লাবের নাম সুপারিশ করে ফেডারেশনকে। আর সেই সুপারিশের মানদণ্ড হিসাবে ধরা হয় সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ঘরোয়া লিগকে। যেভাবে এরাজ্যে ঘরোয়া লিগ হিসাবে ধরা হয় কলকাতা ফুটবল লিগ বা সিএফএল-কে। সিএফএল-এর প্রিমিয়ার ডিভিশনে খেলা কোনও এক ক্লাবের নামই সাধারণত আইএফএ সুপারিশ করে ফেডারেশনের কাছে। কিন্তু এখানেই তৈরি হচ্ছে ফাঁক। কারণ আইএফএ-র নিয়ম অনুযায়ী কলকাতা লিগে খেলার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয় ক্লাবগুলিকে। তার মধ্যে অন্যতম হল ক্লাবটি হতে হবে কলকাতার। অর্থাৎ জেলার কোনও ক্লাব খেলতে পারবে না সিএফএল-এ। ফলে জেলার কোনও ক্লাবের সামনে সুযোগও নেই আই লিগের মঞ্চে উঠে আসার। কারণ এমন কোনও প্রতিযোগিতা নেই যেখানে রাজ্যের সব জেলার ক্লাব অংশ নেয়। যদিও কেরল বা গোয়ার মতো রাজ্য তো বটেই, মধ্যপ্রদেশ বা উত্তরাখণ্ডের মতো ফুটবলে তেমন সাফল্য না থাকা রাজ্যেও প্রতিযোগিতা হয় গোটা রাজ্যের ক্লাব নিয়েই। ফলে গোটা রাজ্যের ক্লাবই সুযোগ পায় আই লিগে যাওয়ার। কিন্তু বাংলায় সেই সুযোগ পেতে হতে হয় কলকাতার ক্লাব, ময়দানের ক্লাব।
[আরও পড়ুন: একই সময়ে দৌড় শেষ দুজনের! কোন অঙ্কে ১০০ মিটারে সোনার পদক পেলেন মার্কিন তারকা?]
আইএফএ-র এই নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে জেলার ক্লাবগুলিও। যেমন দুর্গাপুরের অন্যতম পরিচিত ক্লাব আমরা কজন বয়েজ ক্লাবের ক্রীড়া সচিব ললিতকুমার দাস বলছিলেন, “আমাদের সাব ডিভিশন লিগের তিনটি স্তরে বহু ক্লাব খেলে। কিন্তু এর কোনও ক্লাবই চাইলে সর্বভারতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা খেলতে পারবে না। কারণ আইএফএ আমাদের মতো জেলার ক্লাবগুলিকে সেই সুযোগ দেয় না। ওদের উচিত এমন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা যেখানে সব জেলার ক্লাবই খেলবে।” শিলিগুড়ির বাঘা যতীন ক্লাবের সহ সভাপতি অখিল বিশ্বাসও সেই মতের সমর্থক, “নিয়ম অনুযায়ী আমরা কলকাতা লিগে খেলতে পারব না। আর সেটা না হলে আমাদের পক্ষে আই লিগে ওঠা সম্ভব নয়। ফলে হয় আইএফএ-র নিয়ম পাল্টানো হোক। নয়তো সব জেলার ক্লাবকে নিয়ে প্রতিযোগিতা আয়োজন করে তাকে সর্বোচ্চ মান্যতা দেওয়া হোক।”
[আরও পড়ুন: হকিতে ভারতকে হারাতে আইপ্যাডের ব্যবহার! ব্রিটেনের গোলকিপারকে নিয়ে তুঙ্গে বিতর্ক]
এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত। তাঁর দাবি, “আমরা সব জেলার ক্লাবকে নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা আয়োজনের কথা ভাবছি। বিষয়টি এখনও আলোচনার স্তরে আছে। সেটা বাস্তবায়িত হলে এই সমস্যা মিটে যাবে।” এতদিন জেলার ক্লাবগুলির সঙ্গে হওয়া বঞ্চনা প্রসঙ্গে তাঁর জবাব, “এটা ঠিক যে এমন পদক্ষেপ আগেই করা উচিত ছিল। তবে এর আগে না হওয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আমি দায়িত্বে আসার পর থেকেই সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছি।” জেলার ক্লাবগুলির সঙ্গে হওয়া এত বছরের বঞ্চনা কবে শেষ করে আইএফএ, এখন সেটাই দেখার।