রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট : দেশভাগের আগে তৎকালীন মেহেরপুরে সুভাষ বোস নামে একজন জমিদার ছিলেন। তিনিই প্রথম দুর্গাপুজো (Durga Puja) শুরু করেন নদিয়ার (Nadia) তেহট্টের ভাটুপাড়া গ্রামে। জানা যায়, পরবর্তীকালে দেশভাগের সময় অর্থের অভাবে পুজো আটকালে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা চাঁদা তুলে দুর্গাপুজোর আয়োজনে সাহায্য করতেন। সম্প্রীতির সেই পুজো হয় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে, কাঁটাতারের বেড়া থেকে মেরেকেটে ১৫ ফুট দূরে।
বাংলা ১২৭৪ বঙ্গাব্দ, ইংরেজি ১৮৬৭ সাল থেকে দুর্গাপুজো হচ্ছে ভাটুপাড়ায়। নদিয়ার তেহট্ট থানার বেতাই ভাটুপাড়া গ্রাম। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১২৫ ও ১২৬ নং পিলারের মাঝামাঝি জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে পুজো হয়। গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, অবিভক্ত ভারতে ১২৭৪ বঙ্গাব্দ থেকে এখানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। দেশভাগের সময় পূজার মন্দির অক্ষত রেখে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছিল সরকারি প্রতিনিধিরা।
[আরও পড়ুন: ছুরি-কাঁচি ধরা হাতই মাখে মাটি, ডাক্তারি সামলে বাড়ির পুজোয় প্রতিমা গড়েন বারাসতের যুবক]
প্রবীণ মদন ঘোষ বলেন, “বাপ-ঠাকুরদার কাছে গল্প শুনেছি, সেকালে মেহেরপুরের জমিদার সুভাষ বোসের বাড়িতে দুর্গাপুজো হত। ভাটুপাড়া গ্রাম থেকে বেশ কয়েক মাইল পায়ে হেঁটে বন্য পশুর আতঙ্ক সঙ্গী করে জঙ্গল পেরিয়ে জমিদার বাড়ির পুজো দেখতে যেত গ্রামবাসীরা। সূর্য ডোবার আগে গ্রামে ফিরত। প্রজাদের কষ্ট অনুভব করে জমিদার ভাটুপাড়া গ্রামে আলাদা পুজার প্রচলন করেন।”
গ্রামের আরেক প্রবীণ নিরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “সেই সময় পাচকড়ি দাস নামে গ্রামের এক ব্যক্তি সুভাষ বোসের গোমস্তা ছিলেন। তিনি পুজো দেখাভাল করতেন। মূল মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত গোপাল দাস (মেহেরপুরের রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক)। দেশভাগের আগে ভাটুপাড়া গ্রাম আর্থিক সংকটে পড়ে। তখন আশেপাশের মোবারকপুর, লালবাজার, ইলসামারি গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ চাঁদা দিয়ে পুজোয় সাহায্য করতেন।”
বারোয়ারি পুজো সম্পাদক সরোজ শিকদার জানান, পুজো শুরুর অনেক পরে দেশভাগ হয়। বলেন, “একটা সময় দেশের নিরাপত্তায় কাঁটাতারের বেড়া হয়েছে। তবে পুজো বন্ধ হয়নি। এখন সেই পুজোই ভাটুপাড়া আদি বারোয়ারি নামে পরিচিত। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এখন গ্রামে তিনটি দুর্গাপুজো হয়।”
[আরও পড়ুন: কেমন ছিল স্বাধীন ভারতের প্রথম মুদ্রা? দক্ষিণ কলকাতার এই পুজোয় এবার কয়েনের পার্ক!]
পুজো কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা সঞ্জয় ঘোষ। তিনি জানান, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরা মণ্ডপে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন। অঞ্জলি থেকে শুরু করে প্রসাদ বিতরণ সবেতেই জওয়ানদের অংশগ্রহণ থাকে। অন্যান্য বছরের এবারও হবে ভাসানের শোভাযাত্রা। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পুজো মণ্ডপের কাছেই কর্তব্যরত বিএসএফের (BSF) ৮৪ ব্যাটেলিয়নের জওয়ানরা। তাঁদের একজন বলেন, “বাংলার সীমান্তে কাজ করার সুবাদে দুর্গাপুজোর আনন্দ দারুণভাবে উপভোগ করতে পারব।”