অর্ক দে, বর্ধমান: রাজ আমলে ৫২ রকম পদ দিয়ে ১০ দিন ধরে চলত রাজ পরিবারের শারদীয়া উৎসব। দুর্গাপুজোর (Durga Puja) জন্য আলাদা দালান ছিল। রাজ আমল চলে যাওয়ার পর বর্ধমানের লক্ষ্মী-নারায়ণ জিউ মন্দিরেই পূজিত হন পটেশ্বরী দেবী। রাজা মাহাতাব চাঁদের আমলে চালু হওয়া বর্ধমান রাজ পরিবারের প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো দুর্গাপুজো জৌলুস হারালেও এই পুজো ঘিরে আজও মানুষের উন্মাদনার শেষ নেই।
এখন যেখানে বর্ধমান (Burdwan) উদয়চাঁদ মহিলা কলেজ, সেখানেই ছিল রাজ পরিবারের দুর্গা দালান। প্রতিপদ থেকে দশমী পর্যন্ত ১০ দিন ধরে চলত পুজো। অষ্টমী, নবমী ও দশমীর দিন ছোলা, হালুয়া ও পুরী খাওয়ানো হত। মোট ৫২ রকমের পদ দিয়ে দেবীর ভোগ দেওয়া হত। রুপোর বাসনপত্রে ভোগ সাজিয়ে নিবেদন করা হত। পুজোর দিনগুলোয় রামায়ণ গান, চণ্ডীপাঠ, হোম-যজ্ঞের আয়োজন করা হত। শারদ উৎসবকে ঘিরে চলত জলসা।
প্রথম থেকে চণ্ডীরূপী দেবী দুর্গার পট পুজো হয়ে আসছে এখানে। রাজ আমলে প্রতি বছর পট রং করা হত। দশমীর দিন রানি সায়রে বিসর্জন দেওয়া হত এই পটের দুর্গা। পুজো প্রাঙ্গণ ঘিরে আলোকসজ্জা। নবমীর দিন সুপারি বলির চল ছিল। একমাস আগে থেকে সুপারি এনে চলত বলি দেওয়ার অনুশীলন। হাত পাকা হলে তবেই বলি দেওয়ার অনুমতি মিলত। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ রাজ পরিবারের পুজো দেখতে ভিড় জমাতেন।
[আরও পড়ুন: এসএসসি দু্র্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়]
মন্দিরের প্রধান পুরোহিত উত্তম মিশ্র বলেন, "রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য প্রণয় চাঁদ মাহাতাব ও নন্দিনী মাহাতাব এই মন্দিরের বর্তমান সেবায়েত। আগের মতোই প্রতিপদের দিনে ঘট স্থাপন করা হয়। ১২ বছর পরপর পট আঁকা বা নতুন করে রং করা হয়। চারদিন ধরে পুজো চলে। এখনও ভোগে ছোলা, হালুয়া ও পুরী নিবেদন করার চল রয়েছে। তবে, রাজ পরিবারের অবসানের পর জৌলুস অনেকটাই কমে গিয়েছে। ৫২ রকম ভোগের আয়োজন এখন আর হয় না। মন্দিরের ভিতরেই পুজোর আয়োজন করা হয়। চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবীর পুজো করা হয়। নবমীর দিন কুমারী পুজো হয়। তবে ঢাকের আওয়াজ ও আলোর ঝলকানি এখন আর নেই। পুজোর পর বিসর্জন না দিতে পটচিত্র রেখে দেওয়া হয়।"
[আরও পড়ুন: 'চা ভরতি কেটলি-কাপ, ঝালমুড়ি নিয়ে বেরিয়ে পুজোয় বিক্রি করুন', পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর]
সময়ের সঙ্গে পুজোর আয়োজনেও বদল এসেছে। বলি প্রথা, আলোকসজ্জা, ঢাকের আয়োজন এখন আর নেই। তবে রাজ পরিবারের কাছে এখনও এই পুজোর গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিবার পুজোর দিনে রাজ পরিবারের সদস্যরা নিয়ম মেনে হাজির থাকেন। শারদীয়া উৎসবে জলসার সঙ্গে ডান্ডিয়া নাচের আয়োজনও হয়। নবরাত্রি (Navratri) ও শারদীয়া উৎসব মিলে গিয়েছে বর্ধমানের রাজ পরিবারের দুর্গোৎসবে।