সুবীর দাস ও সুমন করাতি: দুয়ারে দুর্গাপুজো। মহালয়ার বাকি মাত্র ৪ দিন। তবে লাগাতার বৃষ্টি, আর জি কর কাণ্ডের প্রভাব ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বন্যার প্রভাব এসে পড়েছে প্রতিমা, আলোকশিল্পীদের উপর। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, 'অন্যবারের থেকে এবারের পরিস্থিতি অনেক আলাদা। পুজো কমিটিগুলো নিজেদের পুজো বাজেট কাটছাঁট করছে। যার প্রভাব এসে পড়েছে তাঁদের উপর।'
নদিয়ার চাকদহ শহরের যশরা এলাকায় মৃৎশিল্পীরা দীর্ঘদিন ধরে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেন। তবে অগ্নিমূল্যের বাজারে অনেকেই ব্যবসা ছেড়েছেন। যাঁরা এখনও যুক্ত তাঁদের ব্যবসা ধুকছে। এবারের অবস্থা আরও খারাপ বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। কারণ একাধিক। মৃৎশিল্পীদের দাবি, চড়া দামে প্রতিমা তৈরির সামগ্রি কিনতে হচ্ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী দাম দিতে নারাজ কমিটিরা। এদিকে সিজনের শুরুতে প্রতিমা তৈরির মাটি পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে বেশি পয়সা দিয়ে কিনতে হয়েছে। ফলে পুজো উদ্যোক্তারা প্রথমদিকে মূর্তি বায়না দিতে এলেও তা নিতে পারেননি শিল্পীরা। ফলে শেষের দিকে অল্প সংখ্যক মূর্তির বায়না নেওয়া হয়েছে।
সামাজিক ও প্রাকৃতিক ঘটনাবলীরও প্রভাব পড়েছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া আর জি কর কাণ্ডের কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে এ বছর দুর্গাপুজোয়। বারোয়ারি দুর্গাপুজো কমিটি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে সেই উন্মাদনা নেই বলে জানিয়েছে যশরার মৃৎশিল্পীরা।
একা রামে রক্ষে নেই সুগ্রীব দোসরের অবস্থা হয়েছে তাঁদের। যাও বা অল্প সংখ্যক মূর্তির বায়না নেওয়া হয়েছে তা বানাতে গিয়েও যেন প্রকৃতি সঙ্গ দিচ্ছে না। প্রতি মুহূর্তে আকাশের মুখ ভার। দফায় দফায় প্রত্যেকদিন প্রবল বৃষ্টি। রোদের দেখা নেই। ফলে মূর্তি নির্মাণ করতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তাঁরা। মাটির তৈরি মূর্তি শুকাচ্ছে না। কৃত্রিম উপায়ে তা শুকাতে গিয়ে প্রতিমা তৈরি খরচ বাড়ছে। সঙ্গে অন্য দুশ্চিন্তায় ভুগছে মূর্তি নির্মাতারা। সময়মতো মূর্তি সম্পূর্ণ করে মণ্ডপে পৌঁছিয়ে দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে, প্রায় একই সমস্যায় ভুগছেন চন্দননগরের আলোকশিল্পীরা। বিগত বছরগুলিতে চরম ব্যস্ততা থাকে চন্দননগরের সমস্ত আলোকশিল্পী ও কর্মীদের। কিন্তু এবারে কলকাতার আর জি করের ঘটনা পর একাধিক চন্দননগরের আলোকশিল্পীদের গলায় বিষাদের সুর। অনেক আলোকশিল্পীদের অর্ডার ক্যানসেল হওয়ার ফলে কাজ হারিয়েছেন বহু শ্রমিক।
চন্দননগরের শিল্পীরা জানাচ্ছেন, 'প্রথমদিকে আলোর অর্ডার থাকলেও পরের দিকে আর জি করের ঘটনার আন্দোলনের জেরে বড় পুজোকে ছোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটিগুলো। তার জেরেই ব্যবসায় মন্দা।' এক আলোকশিল্পীর কথায়, "বিগত বছরগুলিতে এই সময় আমাদের গোডাউনে কোনও আলো পড়ে থাকে না। কিন্তু এবারে আর জি কর ঘটনার জেরে অনেক অর্ডার বাতিল হয়েছে।" এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের অনেকেই রাজমিস্ত্রি, কেউ রং মিস্ত্রি, কেউ টোটো চালিয়ে তাঁদের সংসার চালাচ্ছেন।
আর জি কর কাণ্ড, বৃষ্টি, বন্যা সবের প্রভাবে শুধু আলোকশিল্পী বা প্রতিমা শিল্পীরা নন পুজোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত সকলেই সমস্যায় পড়েছেন। ফুল থেকে ঢাকি, কাপড়ের ব্যবসা থেকে ছোট ব্যবসায়ী প্রত্যেকেই অসুবিধার সম্মুখীন। সবার প্রার্থনা মা আসছেন , সকলের দুঃখ, যন্ত্রণা দূর করুক।