কৃষ্ণকুমার দাস: ৭৫ বছরের আর্থিক প্রতিচ্ছবির মুদ্রা পার্ক বনাম গঙ্গার মাটি দিয়ে মহারাষ্ট্রের ওরলি পেন্টিং। ঢাকুরিয়া ব্রিজ থেকে নামলে বাঁদিকে পরপর দুই ব্লকবাস্টার পুজো বাবুবাগান ও সেলিমপুর পল্লি, দর্শনার্থীদের ফেরাবে আত্মিক টানে হৃদয় ছুঁয়ে আদি-অনন্ত শিকড়ের সন্ধানে।
১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতে প্রথম যে মুদ্রা চালু হয়, তাতে পঞ্চম জর্জের স্মৃতিচিহ্ন দেখতে কেমন ছিল? নেহরুর পঞ্চশীল বা ইন্দিরার ব্যাংক জাতীয়করণ কি মুদ্রায় ফুটে উঠেছিল? গত ৭৫ বছরে রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) প্রকাশিত অধিকাংশ মুদ্রা দিয়ে এবার গড়ে উঠছে বাবুবাগানের পুজো ভাবনা। থিম শিল্পী অধ্যাপক সুজাতা গুপ্ত নাম দিয়েছেন, ‘মা তুঝে সালাম’। বাঁশ-বেত-মাটি, প্লাস্টার অফ প্যারিস ও ফাইবার দিয়ে মুদ্রা পার্ক শীর্ষক মণ্ডপে ‘মা’কে সম্মান জানাতে সৃষ্টিতে মগ্ন শিল্পীর সহকর্মীরা।
[আরও পড়ুন: বাগুইআটি জোড়া খুন: দিল্লি থেকে ধৃত ‘সুপারি কিলার’ কানহাইয়া কুমার]
পুজোর কোষাধ্যক্ষ তথা শিল্পী সুজাতার কথায়, ‘‘এই ‘মা’ একসঙ্গে দু’জনকে শ্রদ্ধা নিবেদন। একজন দেশমাতৃকা, অন্যজন দেবী দুর্গা (Durga Puja 2022)।’’ পুজোমণ্ডপ ও প্রতিমা, দুই-ই মুদ্রার মধ্যে তৈরি। ২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তির স্মারক ‘অমৃত মহোৎসব’ মূল গেট। সুজাতার শ্বশুর হৃষীকেশ গুপ্ত ও স্বামী প্রয়াত অধ্যাপক প্রবীর গুপ্ত দু’জনই ছিলেন মুদ্রার সংগ্রাহক। স্বামীর অনুগমন করে শিল্পী তাঁর সংগ্রহশালাকেই মণ্ডপের মুদ্রা পার্কে উপস্থাপন করছেন। পুজো কমিটির সম্পাদক সরোজ ভৌমিক জানান, ‘‘আর্থিক মূল্যায়নকে সমৃদ্ধ করে সমকালীন মুদ্রা। তাই ৭৫ বছর ধরে দেশের অর্থনীতির ছবি মুদ্রা পার্কে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।’’
বাবুবাগান থেকে যাদবপুর থানার দিকে একটু এগোলেই সেলিমপুর পল্লি (Selimpur Pally)। বাঁদিকে গলির মধ্যে ঢুকলে মহারাষ্ট্রের ওরলি পেন্টিংয়ের অপূর্ব শিল্পকলা ফুটে উঠেছে থিমশিল্পী অনিমেষ দাসের ‘সংযোগ’ ভাবনায়। গঙ্গার পলিমাটি ও বাঁশ দিয়ে তৈরি নানা অবয়ব ফিরিয়ে দেবে আদিবাসী চিত্রশিল্পে। ট্র্যাডিশনাল জলের পাত্র কলসি ও ঘট ছাড়াও মণ্ডপের দেওয়ালজুড়ে নানা জ্যামিতিক ফ্রেম। শিল্পীর কথায়, ‘‘মনের সঙ্গে মনের সংযোগ, শিকড়ের সন্ধানে নামা মানুষের জন্য এই পুজোভাবনা।’’
[আরও পড়ুন: ভারতে চিতার পুনরাবির্ভাব, নামিবিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে কুনো অভয়ারণ্যে ৮ চিতা ছাড়লেন মোদি]
পুজো কমিটির কর্তা পার্থ রায়ের কথায়, ‘‘প্রতিমাতেই পারিবারিক চিত্র, যা চারপাশের টুকরো টুকরো পরিমণ্ডলকে যূথবদ্ধ করে সামাজিক সংযোগের বার্তা দেবে।’’ মণ্ডপে বর্ধমানের চান্না গ্রাম থেকে আসা একদল শিল্পীর শিল্পকলা বুঝিয়ে দেবে তথ্যপ্রযুক্তির কারাগারে আমরা কীভাবে বন্দি। ঘরের জানালা বন্ধ করে মোবাইলে, ফেসবুকে বিদেশে বন্ধু খুঁজে নিচ্ছে। কিন্তু ঘরের জানালা বন্ধ করে প্রতিবেশীর সঙ্গে সংযোগ বন্ধ করছে। সভ্যতার এই অসভ্যতামি বন্ধ করে নতুন প্রাণের সন্ধানে পুজো, বলছেন শিল্পী।