কলহার মুখোপাধ্যায়: সোমবার দুপুর থেকে তিলোত্তমার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি। তার উপর পুজোর কেনাকাটা। এবং বিকেল থেকে শুরু ঠাকুর দেখার পালা। সব মিলিয়ে ভিজে খানিকটা নাকাল হলেও জমজমাট কলকাতার ভিড়। আর তারই হাত ধরে তৃতীয়ার দিন থেকেই শুরু জ্যামজট। সামাল দিতে এদিন বিকেল থেকেই রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশ। ট্রাফিক কর্তারাও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাজপথে নামেন। বেহালাগামী বহু গাড়িকে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ঘুরে তারাতলা যেতে হয়। মধ্য কলকাতার (Central Kolkata) কলেজ স্কোয়্যার বা মহম্মদ আলি পার্ক সংলগ্ন সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে যাতে যানজট না হয়, তার জন্য ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। কলকাতা শুধু নয়, যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুজোর সময়কাল জুড়ে বড়সড় পরিবর্তন বিধাননগরেও।
পুজোর সময় বিধাননগর কমিশনারেট এলাকার ভিআইপি রোডে ট্রাফিক ব্যবস্থায় অদলবদল ঘটছে। উল্টোডাঙা থেকে কেষ্টপুর পর্যন্ত বন্ধ থাকছে ইউ টার্ন। সল্টলেক থেকে ভিআইপি রোড সংযোগকারী ওভারব্রিজগুলি বন্ধ রাখা হবে। শ্রীভূমি থেকে হেঁটে দমদম পার্ক পর্যন্ত এয়ারপোর্টমুখী রাস্তায় হাঁটতে পারবেন না মানুষ। সে ক্ষেত্রে শ্রীভূমির ঠাকুর দেখে লেকটাউনের ভিতরের রাস্তা দিয়ে বাঙুর পর্যন্ত যেতে হবে দর্শনার্থীদের। তারপর সাবওয়ে পেরিয়ে রাস্তা পেরিয়ে কেষ্টপুর খাল সংলগ্ন পথ ধরে হেঁটে দমদম পার্ক বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত যাবেন পথচারীরা। সেখানে ফের রাস্তা পেরিয়ে ঢুকতে হবে দমদম পার্কে।
[আরও পড়ুন: পুজো নিয়ে হাই কোর্টের রায়কে স্বাগত রাজনৈতিক দলগুলির, তবে শাসক-বিরোধী তরজা অব্যাহতই]
পুজোর (Durga Puja) সময় যান চলাচল সাবলীল রাখতে এবং ভিড় এড়াতে এই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বিধাননগর কমিশনারেট। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা ভিআইপি কে ছ’টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এক একটি সেক্টরের যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকবেন ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার একজন করে আধিকারিক। গাড়িচালক এবং পথচারীদের যাতে সমস্যা না হয় তার জন্য ৫০০টির বেশি দিকনির্দেশিকা রাস্তার লাগানো থাকবে। যা দেখে পরবর্তী গন্তব্যে যাওয়ার রাস্তার আন্দাজ পাবেন মানুষ। এর পাশাপাশি ভিআইপি রোড শুধু নয় সল্টলেক এবং নিউটাউনে পুজোর সময় কঠোর ট্রাফিক বিধিনিষেধ বহাল থাকবে। পুলিশের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে যে, সল্টলেকের যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে ঠাকুর দেখতে চলে যান মানুষ। এবার সেই প্রবণতা আটকাতে বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে কড়াভাবে নজর দেবে ট্রাফিক। বিধাননগরের ডিসি ট্রাফিক ধৃতিমান সরকার জানিয়েছেন, “নিরাপত্তার কারণে ভিআইপি রোডের ওভার ব্রিজগুলি বন্ধ রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচল মসৃণ রাখার জন্য একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
এদিন দুপুরে ভিআইপির সঙ্গে কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় জ্যাম ছিল। বন্দর এলাকার তারাতলা, দক্ষিণ বন্দর, একবালপুর অঞ্চলে রাস্তা খারাপ ও মালবাহী গাড়ির কারণে দুপুর থেকে সৃষ্টি হয় যানজট। বাইপাস সংলগ্ন চিংড়িহাটা, ক্যাপ্টেন ভেড়ি থেকে পরমা আইল্যান্ড, বেলেঘাটা, ফুলবাগানের বেশ কিছু অঞ্চলজুড়ে যানজটের লাইন দেখা যায়। ধীর হয়ে যায় গাড়ির গতি। একই সঙ্গে উত্তর কলকাতার আর জি কর রোড, টালা ও আরও কিছু জায়গায় শ্যামবাজার সংলগ্ন এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, টালায় কয়েকটি বড় পুজো রয়েছে। এছাড়াও হাতিবাগানে চলছে পুজোর কেনাকাটা। সেই কারণেই যানজট তৈরি হয়। উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার ছবিও এক। গড়িয়াহাট মোড়ে পুজোর কেনাকাটায় জমে ওঠে ভিড়। তার উপর বিকেল থেকেই অনেকে মণ্ডপ দর্শন করতে শুরু করেন। একডালিয়া, সিংগি পার্কে আসতে শুরু করেন দর্শনার্থীরা। রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, বালিগঞ্জ, গোলপার্ক এলাকায় যান চলাচল ধীর হয়ে যায়। এসব সামলাতে এদিন বিকেল থেকেই তৎপর পুলিশ।