সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পুজো (Durga Puja 2021) মানেই শহরজুড়ে নানা রকমের হোর্ডিং। রঙিন সব বিজ্ঞাপনের মাঝেই উঁকি দেয় পুজোর টিজারও। মনে আছে, ‘এতো বড়, সত্যি!’ টিজারটির কথা? তিলোত্তমা ছয়লাপ হয়েছিল সেই টিজারে। পরে জানা গিয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্গার সাক্ষী হতে চলেছে রাজ্যবাসী। করোনা কালেও সেই টিজারের চমকে ব্যতিক্রম হল না। রাস্তায় বেরলেই একাধিক পোস্টার-ব্যানার-হোর্ডিং চোখে পড়ছে। কিন্তু ব্যাপারটা কিছুতেই ঠিক স্পষ্ট হচ্ছে না। তাই তো? বেশ, তবে চলুন শহরের পথে রীতিমতো ভাইরাল হয়ে ওঠা কিছু টিজারের রহস্য ফাঁস করা যাক।
দুগ্গা দুগ্গা করে লক্ষ্মী আসুক ঘরে:
কলকাতার পথে-ঘাটে এই ব্যানারটি চোখে পড়েনি, এমন মানুষ এখন খুঁজে পাওয়াই কঠিন। নানা খোঁজখবর করার পর অবশেষে মিলল হদিশ। এটি আসলে গড়িয়া এলাকার একটি পুজোর (Durga Puja 2021) টিজার। বোড়াল সুকান্ত সংঘে এবার দুগ্গা দুগ্গা করে লক্ষ্মী আসছে ঘরে। তা, কীভাবে হচ্ছে এমনটা? আসলে বর্তমানে রাজ্য সরকারের অন্যতম সফল প্রকল্প লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকেই থিম হিসেবে বেছে নিয়েছেন শিল্পী তরুণ মণ্ডল। এভাবেই আসবেন লক্ষ্মী। আর দুগ্গা দুগ্গা করে? এর সঙ্গে আবার গভীর সম্পর্ক রয়েছে সত্যজিৎ রায়ের। ঘাবড়ে গেলেন? পুরোটা পড়ে ফেলুন। আসলে সত্যজিতের ‘পথের পাঁচালি’ ছবির কথা মনে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিশ্চিন্দিপুর। বোড়ালেই হয়েছিল সেই শুটিং। আর ‘পথের পাঁচালি’ মানেই তো অপু ও দুর্গা। সেই দুর্গার হাত ধরেই লক্ষ্মী আসবে ঘরে। থিমের গ্রাম্য ফ্লেভারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পী সনাতন রুদ্র পাল। পুজো কমিটির পরের টিজারে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হবে।
[আরও পড়ুন: জৌলুস কমলেও রীতিনীতিতে পড়েনি ছেদ, প্রথা মেনে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু বর্ধমানের দাস পরিবারে]
এবার ৩০০ কোটির পুজো:
১০-২০ নয় বা ১০০-২০০ নয়, এবার ৩০০ কোটির পুজো! অতিমারী আবহে এমন ব্যানার দেখে নিশ্চয়ই চমকে উঠেছেন! সব পুজো যখন বাজেটে কাটছাঁট করছে, সেখানে একটি পুজোর বাজেটই ৩০০ কোটি! না না, এমন কিছু নয়। এখানেই রয়েছে টুইস্ট। আসলে আজ থেকে ৪০০ বছরেরও বেশি আগে দুর্গাপুজো করেছিলেন রাজা কংসনারায়ণ। সেদিনের পুজোর খরচের আজকের দিনে মূল্য দাঁড়ায় ৩০০ কোটি টাকা। আর সেই জন্যই বড়িশা সার্বজনীনের এবারের পুজোয় এই টিজার।
চোরবাগান এবার…:
এবারের টিজারের দুনিয়ায় নবতম সংযোজন চোরবাগান। বেহালা থেকে সল্টলেক, শোভাবাজার থেকে ঢাকুরিয়া – সব এলাকাই নাকি কবজা করেছে চোরবাগান (Chorbagan Sarbojonin)! মানেটা কী! এর পিছনেও রয়েছে একটি মজার এবং মানবিক গল্প। আসলে এবার আর্থিক অনটনে ভুগতে থাকা ১০টি ক্লাবের প্রতিমা তৈরির দায়িত্ব নিয়েছে চোরবাগান। বলা হয়েছিল, বায়না ও প্রতিমা গড়ার জন্য নামমাত্র ১০১ টাকা করে নেওয়া হয় সেই ক্লাবগুলির থেকে। লটারির মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয় ক্লাবগুলিকে। লটারিতে তোলা হয় ১৩ টি পুজোকে। তার মধ্যে ভাগ্যবান দশটি ক্লাব হয় – ফ্রেন্ডস অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন, সারথী, বেলেঘাটা নবালয় সংঘ ক্লাব, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র ক্লাব, মধ্য কলকাতা বিশ্বকল্যাণ সর্বজনীন, মা আগমনি সংঘ, আদি কাম্বুলিটোলা ও শ্যামবাজার স্ট্রিট সর্বজনীন দুর্গোৎসব, ভবানীপুর কিশোর সংঘ, দুর্গাপুজা বিএল ব্লক কমিটি, বেলেঘাটা সরকার বাজার বিবেকানন্দ সংঘ।
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: ‘সরকার পদক্ষেপ করছে, নিশ্চিন্তে পুজো করুন’, কমিটিগুলিকে অভয়বাণী মুখ্যমন্ত্রীর]
চোরবাগান পুজো প্রাঙ্গনেই তৈরি হচ্ছে ১০টি প্রতিমা। যার তত্ত্বাবধানে খোদ এবারের চোরবাগানের থিমশিল্পী বিমল সামন্ত। তবে দশটি ক্লাবই নয়, কলকাতার যৌনপল্লি এলাকার দুর্বারের পুজো আয়োজনের দায়িত্বও নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে চোরবাগান। এছাড়াও মেদিনীপুরের ক্লাব ভীমেশ্বরী যুব ছাত্র সংঘ, ২৮ নং পল্লি মহিলাবৃন্দকে প্রতিমা তৈরি করে দিচ্ছে তারা। আর লটারিতে অংশ নেওয়া বাকি তিন ক্লাব? না, তাদেরও খালি হাতে ফিরতে হয়নি। পানশিলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি, তালবাগান আদিবাসীবৃন্দ, ২১ নং কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ১ টাকার চেক। আর তাই বিভিন্ন পুজোয় নিঃশব্দেই পৌঁছে গিয়েছে চোরবাগান।
উত্তর থেকে দক্ষিণ- টিজারের টক্করে ক্রমেই জমে উঠছে পুজোর মরশুম। আরও কোনও চমক কি বাকি রয়েছে? অপেক্ষায় পুজোপ্রেমী বাঙালি।