দুলাল দে: আইএসএল (ISL) এবং ভবিষ্যতেও খেলার জন্য যা খরচ, সেই পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে তিনি রাজি। কিন্তু শর্ত হিসেবে তাঁর সংস্থা ‘ইউনিভার্সাল সাকসেস এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড-এর হাতে ফুটবল দলের ৮০ শতাংশ শেয়ার তুলে দিতে হবে বলে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে মেল করলেন ইন্দোনেশিয়ার বাঙালি শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে পাঠালেন আরও কয়েক দফা শর্তও।
প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের তরফে এই মেল ক্লাবে চলে আসার পর লাল–হলুদ তাঁবু এখন উত্তাল। নিজেদের ক্ষমতা আত্মত্যাগ করে এখন ক্লাবকে বাঁচাবেন নাকি ক্ষমতা ধরে রাখবেন, তা নিয়েই আলোচনা তুঙ্গে। ক্ষমতা ধরে রাখার উদাহরণ অতীতেও রয়েছে। এটিকের যখন ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত স্তরে চলে গিয়েছিল, সেই সময় আলোচনায় থাকা দু’জন লাল-হলুদ কর্তা এটিকের হাতে ৮০ শতাংশ শেয়ার তুলে দিতে চাইলেও, ক্ষমতাশীল অংশ নিজেদের স্বার্থে আত্মত্যাগ করতে চায়নি। ফলে এবারও প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের মেল পেয়ে ক্লাবের থেকে পালটা মেলে জানানো হয়েছে, খুব বেশি হলে ৫১ শতাংশ শেয়ার দিতে রাজি আছে তারা। তার বেশি নয়। ফলে ইন্দোনেশিয়ার বাঙালি শিল্পপতির সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারটা এখনও অন্ধকারে।
[আরও পড়ুন: ২৬ সেপ্টেম্বর নয়, আরও আগে আমিরশাহীতে শুরু হতে চলেছে এবারের আইপিএল!]
ইউনিভার্সাল সাকসেস এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেডের (USEL) সঙ্গে দ্রুত চুক্তি করার জন্য প্রথমে ‘মউ’ চুক্তির কাগজপত্র এবং পরে চুক্তির বয়ান পাঠিয়ে দেওয়া হয় ইস্টবেঙ্গল থেকে। সঙ্গে একাধিকবার ফোনে বোঝানো হচ্ছে, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব (East Bengal) চাইছে দ্রুত চুক্তি করে ফেলতে। সেক্ষেত্রে এই মুহূর্তে যদি শুধু ‘মউ’ চুক্তিও করে ফেলা যায়, তাহলে লক্ষ লক্ষ লাল-হলুদ সমর্থকের কাছে এটুকু বলে মুখরক্ষা করা যাবে যে, ইনভেস্টরের সঙ্গে ‘মউ’ চুক্তি হয়ে গিয়েছে। পাকা চুক্তিও যে কোনও সময় হয়ে যাবে। যেভাবে এতদিন ধরে সমর্থকদের নতুন ইনভেস্টর দেখিয়ে ভুলিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে, মউ চুক্তিটা দেখিয়ে সেই কাজটা করা আরও সুবিধার হয়ে যাবে।
প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের তরফে অবশ্য ক্লাব কর্তাদের একটা ব্যাপার স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁর সঙ্গে আরও সহযোগী এনে ‘ইউএসইএল’ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। কারণ, লাল–হলুদ সমর্থকদের মতো তাঁরাও চাইছেন দ্রুত চুক্তি করে আইএসএল খেলতে। তবে দ্রুত চুক্তি চাইলে প্রয়োজনীয়ও কাগজপত্রও দ্রুত পাঠাতে হবে ক্লাবকে। তার আগে মউ চুক্তি করা যাবে না। মউ চুক্তির শর্ত জানিয়ে বুধবার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে যে মেল এসেছে, তাতে বলা হয়েছে,
১) ৮০ শতাংশর অধিকারী হবে ‘ইউএসইএল’ সংস্থা।
২) প্রতিশ্রুতিমতো লিখিত দিতে হবে, এই মরশুম থেকেই আইএসএলে খেলার সুযোগ পাওয়া যাবে।
৩) যে কোনও প্রতিযোগিতায় খেললেও, দলের আগে সংস্থার নাম থাকতে হবে।
৪) শেয়ারের আনুপাতিক হারে বোর্ডে দু’তরফের ডিরেক্টর সংখ্যার বিন্যাস হবে।
মূলত এই শর্তগুলি মেনে নতুন করে ড্রাফট পাঠালে মউ চুক্তি করে পাঠিয়ে দেবেন প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের সহযোগীরা। এতদিন পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গল কর্তারা ঠিক করেছিলেন, বিনিয়োগ করবে অন্য সংস্থা, কিন্তু বেশি শেয়ার থাকবে ক্লাবের হাতে। কিন্তু যে সংস্থা বিপুল টাকা বিনিয়োগ করবে, তাঁরা ক্লাবের বেশি শেয়ার নেবে না, এরকমভাবে কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ক্লাব কর্তারা তাই পালটা মেলে বলেছেন,
১) ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ৫১ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে রাজি।
২) বোর্ডে প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের সংস্থার তরফে চেয়ারম্যান ঠিক হলে, এমডি হবেন ক্লাবের প্রতিনিধি।
৩) আইএসএলের যে যে নিয়মাবলী রয়েছে, সেই নিয়মবলি মেনেই ক্লাব চুক্তি করবে।
[আরও পড়ুন: নতুন অধ্যায়ের শুরু, এবার চার্চিলের পথে মোহনবাগানের ‘বাজপাখি’ শিল্টন পাল]
ইউএসইএল সংস্থা হঠাৎ করে ৮০ শতাংশ শেয়ার চেয়ে বসল কেন? শোনা যাচ্ছে, বিদায়ী সংস্থা কোয়েস কর্তারা তাদের বলেছেন, ৭০ শতাংশ শেয়ার থাকার পরেও হেনস্থা হতে হয়েছে প্রতি ক্ষেত্রে। তাই চুক্তির আগে ঠিকভাবে শেয়ার বিন্যাস নিয়ে নিজেদের আরও নিরাপদ করে নিতে। ফলে দেখার, ক্লাব কর্তারা কোন বিষয়টা প্রাধান্য দেন, নিজেদের স্বার্থ না ক্লাবের স্বার্থ?
The post ইস্টবেঙ্গলের থেকে ৮০ শতাংশ শেয়ার চাইল ইনভেস্টর, শর্ত মানতে নারাজ ক্লাব appeared first on Sangbad Pratidin.