অর্ণব আইচ: প্রভাবশালী তকমায় খারিজ শেখ শাহজাহানের আগাম জামিনের আর্জি। প্রথম থেকে আগাম জামিনের আর্জির বিরোধিতায় সুর চড়ায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ইডির উপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে ইডি আদালতে দাবি করে, মাত্র ১৫ মিনিটে তিন হাজার লোক জড়ো করে ফেলতে পারেন সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা। আগাম জামিনের আবেদন মঞ্জুর হলে সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’ লন্ডনে পালিয়ে যেতে পারেন বলেও আশঙ্কাও প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
প্রায় ৫০ দিন ধরে ‘ফেরার’ শেখ শাহজাহান। বার বার নোটিস পাঠালেও ইডি দপ্তরে হাজিরা দেননি তিনি। আড়ালে থেকেই একাধিক আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করেছেন সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’। এদিন আগাম জামিনের আবেদনের মামলায় শাহজাহানকে ‘ক্ষমতাবান’, ‘ব্লু আইড বয়’, ‘টক অব দ্য টাউন’ বলে উল্লেখ করেন ইডির আইনজীবী। ইডির দাবি, “১৫ মিনিটে তিন হাজার লোক জড়ো করে ফেলেন শাহজাহান। উনি রাজনৈতিক পদে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে পুরনো অপরাধের রেকর্ডও। খুনের ধারাতে মামলার পরেও গ্রেপ্তার হননি শাহজাহান। সরকারি দপ্তরে হামলার ঘটনাতেও শাহজাহানের সরাসরি যোগ রয়েছে। এই মামলাতে পুলিশের তরফে তাকে ‘ফেরার’ বলে জানানো হয়েছে।” ইডির আশঙ্কা জামিন পেলেই হয়তো লন্ডনে চলে যেতে পারেন শাহজাহান। সেক্ষেত্রে মামলা ভেস্তে যেতে পারে বলেই মনে করছে ইডি।
[আরও পড়ুন: সমকামী সম্পর্ক, উদ্দাম যৌনতা! বান্ধবীকে ‘বিয়ে’র পরই কোন্নগরে সন্তানকে খুন মায়ের]
আদালতে ইডির সওয়াল, “দোষী না হলে পালিয়ে বেরোচ্ছেন কেন? আমরা তদন্তে করতে তাঁর বাড়িতে যাই। তাঁর বাড়ি দুদিক থেকে বন্ধ ছিল। আমরা ফোন করি। দুবার ফোন ধরে। আমরা নিজেদের পরিচয় দিই। তার পর ফোন কেটে দেন। ফোন ব্যস্ত হয়ে যায়। ১৫-২০ মিনিটে অন্তত এক হাজার লোক চলে আসে। আমরা প্রবেশ করতে পারিনি। যখন সেই ঝামেলা শুরু হয়। পুলিশ পৌঁছয়। আধিকারিকদের উদ্ধার করে। পুলিশ আসে। ৩ জন আহত হন। একজন গুরুতর আহত হন। এই ঘচনার ইডির অভিযোগে ন্যাজাট থানাতে একটি মামলা হয়। কেস নম্বর ৯। তার আগে পুলিশ একটি স্বতঃপ্রণোদিত এফআইআর করে। পুলিশের এফআরআই অনুযায়ী ৩ হাজারের মতো লোক ছিল। তখন যা পরিস্থিতি ছিল তাতে কতজন লোক ছিল সেটা আমাদের পক্ষে নির্দিষ্ট করে বলা হয়তো মুশকিল। কিন্তু খোদ পুলিশের স্বতঃপ্রণোদিত মামলাতে উল্লেখ ৩ হাজার লোক জড়ো হয়েছিলেন। এই মামলার এফআইআর নম্বর ছিল ৮। আরও একটি মামলা হয় দিদার মোল্লার অভিযোগে। যেখানে বলা হয়েছে, ইডি অফিসার চুরি করেছেন। শ্নীলতাহানি করেছেন। কলকাতা থেকে আইনজীবী গিয়ে সেই অভিযোগের বয়ান লিখলেন। এই তথ্যগুলো দিচ্ছে এটা বোঝাতে যে শাহজাহান কতটা প্রভাবশালী যে তিনি ১৫০০ বা ৩ হাজার লোক জড়ো করতে পারেন মাত্র ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে। ৫০ দিন ধরে পলাতক। কিন্তু পুলিশ তাকে ধরছে না কেন আমরা জানি না।”
শাহজাহানের আইনজীবী সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে আদালতে দাঁড়িয়ে দাবি করেন, “৩ ফেব্রুয়ারি আগাম জামিনের আবেদন করা হয়। তা নানা সংবাদমাধ্যমে দেখায়। এর পর আমার বাডি টার্গেট করা হয়। গ্রামবাসীরা টার্গেট করে। তাহলে সেই একই গ্রামের লোকেরা কীভাবে ইডিকে আটকাতে আসবে? এমন কী ঘটল যে পুরো বিষয়টা বদলে গেল? এবং গ্রামের লোকরা তাঁর গ্রেপ্তারির দাবিতে সওয়াল করতে শুরু করলেন? যদি শাহজাহান তাঁদের জড়ো করেন ইডিকে আটকাতে তবে পরে তাঁরা আমার বাড়ি কেন ভাঙতে আসবেন? এটা ‘সারপ্রাইজ অ্যাটাক’। আমাদের জানার কথা নয়। মব হ্যাজ রাইট টু রিয়্যাক্ট।” দীর্ঘ সওয়াল জবাবের পর শেখ শাহজাহানের আগাম জামিনের আর্জি খারিজ করে দেয় আদালত