এই মহানগরে ৪০ শতাংশ বাইকচালক হেলমেট ব্যবহার করে না। অথচ হেলমেট ব্যবহার করলে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সম্ভাবনা কমে ৮০ শতাংশ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষিত। মোটরচালিত নৌ-যান করে চলেছে সেনারা। ট্রলারের মতো অনেকটা। যারা চলেছে– তারা এমন ভীত, সন্ত্রস্ত, হাড়ে-কঁাপুনি-ধরা টাইপ, বোঝাই যাচ্ছে কোনও মরণপণ যুদ্ধে অবিলম্বে তাদের অবতীর্ণ হতে হবে। কার্যত হলও তাই। নৌযানগুলি ডাঙায় ভিড়তেই– অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র হাতে ওই সেনারা– তিরের বেগে ছুটে আসতে লাগল ডাঙার দিকে। আর, ডাঙা থেকেও পালটা গুলি চলতে থাকল তিরের চেয়েও ঢের গতিবেগে। ধপাধপ করে ভূপতিত হচ্ছে আক্রামক সেনাদের শরীর।
সমুদ্রের সৈকতে পাথরের আড়াল নেই। বিচ নেড়া। যারা ডাঙায় আগে থেকে ‘পজিশন’ নিয়ে আছে, তারা দিব্যি দেখে-শুনে গুলি চালাচ্ছে– মৃগয়া করার আনন্দে। অন্যদিকে, গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়া সেনারা দিশাহারা। কী করে এই গুলিবৃষ্টি থেকে বঁাচবে, বোঝার আগেই গুলি ফুঁড়ে দিচ্ছে শরীর। কারও হাত ছিঁড়ে যাচ্ছে। কারও পেট ফেঁড়ে দিচ্ছে গুলি। রক্ত, আর্তি, হিংসার সে এক অসহ্য আবহ।
একজন সেনা ছুটছিল প্রাণভয়ে। তার আগেরজনটি গুলি খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। এবং পরের গুলিটাই এসে লাগল ছুটন্ত লোকটির মাথায়। কিন্তু কী আশ্চর্য, সে মরেনি! কারণ, গুলি এসে সোজা আঘাত করেছে তার মাথার শিরস্ত্রাণে– যাকে বলে ‘কমব্যাট হেলমেট’। সেনাটি বিস্ময়ে থ! ‘আমি মরিনি’, এই ভাবতে-ভাবতে হয়ে গেল আনন্দবিহ্বল। হেলমেটটি মাথা থেকে খুলে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে যখন দেখছে– এমন সময় আর-একটি গুলি ছুটে এসে ফাটিয়ে দিল তার খুলি। জীবন তো এমনই ক্ষণিকের আলো-ছায়ায় ভরা, আকস্মিকের খেলা।
যুদ্ধভূমিতে সেনাদের বেঁচে থাকার তুচ্ছতা, প্রতি মুহূর্তের মৃত্যুর অনিশ্চয়কে এইভাবে এঁকেছেন স্টিভেন স্পিলবার্গ ‘সেভিং প্রাইভেট রায়ান’ (১৯৯৮) সিনেমায়। হেলমেট নিয়ে যে এমন বিচিত্র রসের ভিয়েন বসানো যেতে পারে, তা কল্পনারও অতীত। ‘হেডগিয়ার’ মানেই ‘হেলমেট’ নয়। হেডগিয়ার বলতে টুপিও বোঝাতে পারে, পাগড়িও। কিন্তু হেলমেট অবশ্যই এমন শিরস্ত্রাণ, যা মাথাকে রক্ষা করে। হেলমেট প্রতিনিধিত্ব করে দাপট, নিয়ন্ত্রণকামী মনোভাব ও ক্ষমতার। অর্থাৎ প্রতিরক্ষার আভাসের সঙ্গে কর্তৃত্বের বোধ জড়িয়ে আছে।
শিরস্ত্রাণরূপে হেলমেটের ব্যাপক ব্যবহার ঘটেছে যুদ্ধে, পরে বাইক রাইডারদের মাথাকে সুরক্ষা দিতে। ব্রিটিশ চিকিৎসক এরিক গার্ডনারকে মোটরসাইকেল হেলমেটের আবিষ্কারক বলে ধরে নেওয়া হয়, যা তিনি তৈরি করেছিলেন ১৯১৪ সালে। আমাদের দেশে এখন বাইকের দাপট ক্রমবর্ধমান। ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ছাড়াও রয়েছে নানা অ্যাপের আওতায় থাকা গিগ-কর্মীর দল, যাদের প্রধান বাহন মোটরবাইক। কিন্তু চতুর্দিকে বাহনচালক যত, হেলমেটের ব্যবহারকারী সেই তুলনায় অনেক কম। এই মহানগরে ৪০ শতাংশ বাইকচালক হেলমেট ব্যবহার করে না, অথচ করলে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর আশঙ্কা কমে ৮০ শতাংশের মতো। যেচেপড়ে এভাবে জীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করা কেন, এ তো আর সত্যিকারের যুদ্ধক্ষেত্র নয়!