স্পেনে ২৫০ পৃষ্ঠার রিপোর্টে বলা হয়েছে, সে-দেশে বিক্রি হওয়া সমস্ত মোবাইলে স্বাস্থ্য-সতর্কতা জ্ঞাপক নিষেধ-বার্তা বাধ্যতামূলক।
আধুনিক সভ্যতার অন্যতর বিপদ– মোবাইল ফোনে অতিরিক্ত আসক্তি। যা ক্রমশ মাদকের নেশাকেও পিছনে ফেলে দিচ্ছে। এ নিয়ে দিস্তা-দিস্তা কাগজ খরচ হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন লেখা ও দেখানো হচ্ছে, চিকিৎসকরা দিচ্ছেন হুঁশিয়ারি। কিন্তু তাতে খুব একটা কাজের কাজ হচ্ছে না। আধুনিক মানুষ কীভাবে পরস্পরের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করবে, কাজ করবে বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে পারিপার্শ্বিক দুনিয়া থেকে– সবটাই যেন ঠিক করে দিচ্ছে হাতের স্মার্টফোন! প্রাত্যহিক জীবনে যেমন স্মার্টফোন অনেক সুবিধা নিয়ে এসেছে, তেমনই তার বিরূপ প্রতিক্রিয়াও কম নেই। ক্ষতি হচ্ছে ঘুমের, মানসিক স্বাস্থ্যের। ব্যক্তিগত সম্পর্ককেও প্রভাবিত করে, বিশেষ করে কিশোর এবং তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে।
এই পরিস্থিতিতে স্পেন সরকারের কাছে ২৫০ পৃষ্ঠার বিশদ রিপোর্ট পেশ করেছে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি। তাদের সুপারিশ– সিগারেট প্যাকেটের মতো দেশে বিক্রি হওয়া সমস্ত স্মার্টফোনে স্বাস্থ্য-সতর্কতা প্রয়োজন। অত্যধিক ‘স্ক্রিন টাইম’-এর ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ও স্মার্টফোনের সচেতন ব্যবহারকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ। রিপোর্টে কিছু নির্দিষ্ট ‘অ্যাপ’ বা ‘প্ল্যাটফর্ম’ ব্যবহার করার সময় স্ক্রিনে সতর্কতামূলক বার্তা দেখানোরও সুপারিশ করা হয়েছে। তিন বছরের কমবয়সি শিশুদের জন্য ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা, নির্দিষ্ট ব্যতিক্রম-সহ ছয় বছর বয়সিদের জন্য ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার সীমাবদ্ধ করা, ১২ বছরের কমবয়সিদের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সম্পূ্র্ণ ‘নিষিদ্ধ’ করারও প্রস্তাব রয়েছে।
প্রস্তাবগুলো তো খুবই উমদা। কিন্তু তাতে কাজের কাজ না হলে এই সুপারিশের গুরুত্ব কী? সিগারেট-বিড়ি-গুটখার প্যাকেটে বিপদজ্ঞাপক চিহ্ন বহু দিন হল চালু হয়েছে। তা দেখে কতজন নেশা ছেড়েছেন? বিক্রির অভাবে এই সমস্ত সংস্থা ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছে, এমন খবরও নেই। তেমনই স্মার্টফোনে বিপদসংকেত থাকলেও তা আদৌ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। স্কুলগুলো ‘অনলাইন ক্লাস’ চালাচ্ছে ব্যাপক হারে। বিভিন্ন কোচিং সেন্টারেও এই বন্দোবস্ত। অনলাইনে পড়াশোনার সুযোগ দিচ্ছে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সংস্থা। বিজ্ঞাপন-বিপণনে সোশ্যাল মিডিয়া এখন বিভিন্ন সংস্থার বড় হাতিয়ার।
রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের প্রচারাভিযানে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় সোশ্যাল মিডিয়াকে। তাহলে সচেতনতার পাঠ কারা পড়াবে, আর কেই-বা পড়বে? অনেক চিকিৎসক ধূমপান ছাড়ার শলা দিয়ে চোখের আড়ালে গিয়ে সিগারেটে সুখটান দেন। তেমনই মোবাইল ব্যবহারের বিপদ সম্পর্কে হুঁশিয়ারি দিয়ে তঁারা অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা বাণীও দিয়ে থাকেন। আমরা নিজেরা যদি দৃষ্টান্ত তৈরি করতে না-পারি, কথায় ও কাজে ফারাক থেকে যায়, পরবর্তী প্রজন্মকে সচেতন করার এই সমস্ত চেষ্টা কাগজে-কলমেই থেকে যাবে!