ট্রাম্পের ভাবগতিক জন্ম দিয়েছে একাধিক প্রশ্নের! শপথ নিয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা সিদ্ধান্তে থরহরিকম্প। আরও চার বছর তিনি কত বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, ভাবলে সত্যি আতঙ্কিত হতে হয়। এমন তুঘলকি মেজাজে চললে, উথালপাথাল অবশ্যম্ভাবী।
![](https://mcmscache.epapr.in/mcms/434/a8a2c017e2b91afd0d2f9fd5d52ed44cbc32e704.jpg)
সদ্য বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশের প্রধানরূপে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর, প্রথম দিন থেকেই তঁার ভাবগতিক একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বেআইনি অভিবাসী বা নিজের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তিনি অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু এটাও মাথায় রাখা উচিত, আমেরিকার মতো দেশের বিশ্ব ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব কতটা। এবং তঁার সিদ্ধান্ত কী পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। প্রথম দিন নেওয়া অন্তত তিনটি এক্সিকিউটিভ অর্ডার অশনিসংকেত বহন করছে।
প্রথমত, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ থেকে আমেরিকার সরে যাওয়া। কোভিড সংক্রমণের সময় ‘হু’-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি একই সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে তা স্থগিত করেন। কারণ, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে সামগ্রিকভাবে বিশ্বের সমস্ত দেশকে একযোগে তার মোকাবিলা করতে হবে। সেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে এমন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে সরে দঁাড়ালে বাস্তবতাকেই অস্বীকার করা হয়। পাশাপাশি, অনেক দরিদ্র দেশের টিকা ও ওষুধ তৈরির সক্ষমতা নেই। প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর দায়িত্ব তাদের পাশে দঁাড়ানো। সেই দায়িত্ব এড়িয়ে গেলে আখেরে বিপদ কিন্তু নিজের দেশেও আসতে পারে।
দ্বিতীয়ত ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তি’-র বিপরীতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। বিশ্ব যখন উষ্ণায়নের মোকাবিলায় হাত মিলিয়ে লড়ছে, তখন কর্পোরেট সংস্থার স্বার্থে এই পদক্ষেপ কার্যত হারাকিরি বলেই মনে হয়। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালেও তিনি একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এবারও তঁার নির্দেশ, জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্ত আর্থিক সাহায্য বন্ধ হবে। এবং আমেরিকার প্রয়োজন মেটাতে আরও বেশি করে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন করা হবে। এই ধরনের জৈব জ্বালানি ক্রমশ শেষ হচ্ছে শুধু নয়, দূষণের ক্ষেত্রে এদের বড় ভূমিকা রয়েছে। একই সঙ্গে বাড়ায় উষ্ণায়ন। তাই আমেরিকার মতো দেশ, যারা গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, তারা যদি সহযোগিতা না-করে, তাহলে উষ্ণায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কীভাবে? এর পরিণতি হবে মারাত্মক।
তৃতীয়ত, ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, দেশে পুরুষ ও মহিলা ছাড়া অন্য কোনও লিঙ্গকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। এবং কারও ‘যৌন পরিচয়’ বদল করা যাবে না। যা ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ তথা রূপান্তরকামী সমাজের কাছে বিরাট ধাক্কা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রে ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় এর জেরে বৈষম্যর শিকার হতে পারে তৃতীয় লিঙ্গ ও রূপান্তরিত মানুষ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঐতিহাসিকভাবে তৃতীয় লিঙ্গর মানুষের উপস্থিতি রয়েছে। আধুনিক সমাজ তা মেনে নিয়েই তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। নানা দেশ এই মর্মে পদক্ষেপ করেছে। এর সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়ে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বিস্ময়কর। আরও চার বছর তিনি কত বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, ভাবলে সত্যি আতঙ্কিত হতে হয়।