shono
Advertisement

ফের অর্থনৈতিক মন্দার মুখে দাঁড়িয়ে বিশ্ব! কোন পথে ভারত?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে বিশ্ব যে-মূল্যবৃদ্ধির সংকটে পড়েছিল, এবারও অনেকটা সেইরকম।
Posted: 01:14 PM Aug 02, 2022Updated: 01:14 PM Aug 02, 2022

ভারতে প্রয়োজনীয় জ্বালানির ৮০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। এখন ভারত যদি এই আমদানির চাহিদা কমাতে পারে, তবেই অর্থনীতিকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়া সম্ভব। গত বছর গ্লাসগোয় রাষ্ট্রসংঘের আবহাওয়ার পরিবর্তন সংক্রান্ত সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কথা দিয়ে এসেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত তার শক্তির চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ করবে পুনর্নবীকরণযোগ‌্য শক্তি দিয়ে। কথাকে এবার কাজে করে দেখানোর পালা। কলমে সুতীর্থ চক্রবর্তী

বিশ্ব কি ফের একটি অর্থনৈতিক মন্দার মুখে দাঁড়িয়ে? বেশ কিছুদিন ধরে এই প্রশ্ন ঘিরে জল্পনা চললেও এখনও কোনও সদুত্তর মেলেনি। কোভিড অতিমারীর ছায়া এখনও বিশ্বের অধিকাংশ দেশ থেকেই সরে যায়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামারও কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে, আরও একটি প্রবল অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়তেই পারে গোটা বিশ্ব। কিন্তু এই মন্দা মোকাবিলার তৎপরতাও উন্নত দেশগুলির পক্ষ থেকে তুঙ্গে উঠেছে।

Advertisement

বিশ্বজুড়ে মন্দার পূর্বশর্ত হিসাবে মূল‌্যবৃদ্ধি এক প্রবল সংকট তৈরি করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে বিশ্ব যে-মূল‌্যবৃদ্ধির সংকট প্রত‌্যক্ষ করেছিল, এবারও অনেকটা সেইরকম। যদিও সেই সময় ইউরোপ ও আমেরিকায় যে-পরিমাণ মূল‌্যবৃদ্ধি ঘটেছিল, তার তুলনা এবারের সঙ্গে একেবারেই চলে না। প্রবল মূল‌্যবৃদ্ধির জন‌্য দীর্ঘদিন বাদে আমেরিকা কঠোর আর্থিক নীতি গ্রহণ করেছে। গত মার্চ থেকে শুরু করে জুলাই পর্যন্ত, চার-পাঁচ মাসে ‘আমেরিকান ফেডারাল রিজার্ভ’ সুদের হার ২.২৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। মূল‌্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে না এলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমেরিকায় সুদের হার আরও ১ শতাংশ বাড়তে পারে। মার্কিন অর্থনীতিতে সুদের হার বৃদ্ধির পরিণাম বহুদূর বিস্তৃত। এর প্রভাব গোটা বিশ্বের আর্থিক ব‌্যবস্থাতেও পড়ে। ভারতে শেয়ার বাজারে ধসের অন্যতম কারণই যেমন মার্কিন মুলুকে সুদের হার এই পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে যাওয়া। ভারতের মূলধনের বাজারে যে বিদেশি লগ্নি হয়, তার অনেকটাই মার্কিন মুলুকে সুদের হার বাড়ার কারণে ভারত ছেড়ে চলে গিয়েছে। তার পরিণতিতে শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ যদি সুদের হার আরও বাড়ায়, তাহলে চট করে ভারতের শেয়ার বাজার একবছর আগের অবস্থায় ফেরার সম্ভাবনা কম। দেশে মিউচুয়াল ফান্ডে ও শেয়ারে যাঁরা অনেক টাকা লগ্নি করেছেন, তাঁদের পক্ষে এটা নিঃসন্দেহে বেশ চিন্তার। পরিস্থিতি জাপানের মতো হবে কি না, অনেকেই প্রশ্ন করছে। আটের দশকে জাপানে শেয়ার বাজার গোত্তা খেয়ে পড়ার পর আর সেভাবে উঠে দাঁড়াতে পারেনি।

[আরও পড়ুন: নতুন ভারতে কোনও স্থান নেই দ্বিতীয় পছন্দ বা বিকল্পের]

তবে আর্থিক মন্দার পরিস্থিতি মূল‌্যবৃদ্ধি থেকে আমাদের কিছুটা রক্ষা করতে পারে। কারণ মন্দা ভোগ‌্যপণ্যের চাহিদা কমাবে, যার জেরে মূল‌্যবৃদ্ধি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। কোভিড অতিমারীতে দেশের জিডিপি ভয়ংকরভাবে কমলেও উপভোক্তাদের একাংশের আয় সেভাবে কমায়নি। এই কোভিডের সময়ও দেশে কিছু মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। লকডাউনের সময় যখন আর্থিকবৃদ্ধির হার ঋণাত্মক হয়ে গিয়েছিল এবং জিডিপি এক-চতুর্থাংশ কমে গিয়েছিল, তখনও দেখা গিয়েছিল যে, দেশের কিছু উদ্যোগপতির মুনাফা প্রচুর বেড়েছে। শুধু কয়েকজন উদ্যোগপতির মুনাফাই নয়, উপভোক্তাদের একাংশের আয়ও এই অতিমারীর সময় বাড়তে দেখা গিয়েছে। কয়েকদিন আগে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রকের অধীন একটি সংস্থার সমীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, দেশে কৃষকদের একটি বড় অংশের আয় সামগ্রিকভাবে বেড়েছে। কোনও কোনও রাজ্যে এই আয় দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। পচিমবঙ্গই কৃষকদের আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দেশে অন‌্যতম শীর্ষস্থানে রয়েছে। সামগ্রিক মন্দার মধ্যে এভাবে উপভোক্তাদের আয়বৃদ্ধিও একটি ব‌্যতিক্রমী ঘটনা। উপভোক্তাদের আয় বেড়ে ওঠার ঘটনা মূল‌্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়নি। উপরন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্বজু়ড়ে জ্বালানি ও খাদ্যের জোগানের শৃঙ্খলা ব‌্যাহত হয়েছে। মূল‌্যবৃদ্ধির পিছনে এটাও অন‌্যতম প্রধান কারণ। 
ইউক্রেন যুদ্ধ যেভাবে ইউরোপে জ্বালানি গ‌্যাসের সংকট তৈরি করেছে, তা অকল্পনীয় ছিল। কিন্তু এই সংকট থেকে পরিত্রাণেরও রাস্তা খোঁজ হচ্ছে। এই রাস্তা অবশ‌্যই পুনর্নবীকরণযোগ‌্য জ্বালানির ব‌্যবহারের মধ্য দিয়ে। 

ভারতকেও বর্তমান সংকট থেকে বেরতে গেলে পুনর্নবীকরণযোগ‌্য শক্তির ‌ব‌্যবহার বাড়াতে হবে। শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক সংকটের পিছনে কাজ করেছে জ্বালানি তেলের তীব্র অভাব। জ্বালানি তেল আমদানি করতে গিয়ে দ্বীপরাষ্ট্রের অর্থনীতি সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। এই জ্বালানির সংকটই শ্রীলঙ্কায় গণবিক্ষোভকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যায় যে, খোদ প্রেসিডেন্টকে দেশ ছেড়ে পালাতে হল। জ্বালানির সংকট আজ গোটা বিশ্বে। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ লাগার পর রাশিয়া ইউরোপে জ্বালানি গ‌্যাসের সরবরাহ কার্যত বন্ধ করেছে। যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দামও বাড়িয়েছে। যার প্রভাবে সবচেয়ে জর্জরিত ভারতের মতো দেশগুলি। ভারতে প্রয়োজনীয় জ্বালানির ৮০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। আমদানির খরচ বৃদ্ধি মানে, তার প্রভাব দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে চলে আসে। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে ভারত যদি আমদানি করা জ্বালানির চাহিদা কমাতে পারে, তবেই অর্থনীতিকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়া সম্ভব।

গত বছর গ্লাসগোয় রাষ্ট্রসংঘের আবহাওয়ার পরিবর্তন সংক্রান্ত সম্মেলনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কথা দিয়ে এসেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত তার শক্তির চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ করবে পুনর্নবীকরণযোগ‌্য শক্তি দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী যেমন আশ্বাস দিয়েছেন যে, ভারত আগামী আট বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কয়লার ব‌্যবহার অর্ধেকে নামিয়ে আনবে, তেমনই জ্বালানি তেলের ব‌্যবহারও কমাবে। ভারত দ্রুত পেট্রোল-ডিজেলের চাহিদা কমাতে সক্ষম হলে আমদানি খরচ কমাতে পারবে এবং মূল‌্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে। ইউরোপ বিকল্প শক্তি হিসাবে দ্রুত তাদের নিউক্লিয়ার প্ল‌্যান্টগুলি চালানোর কথা ভাবছে। একইরকম উদ্যোগ নিয়েছে জাপানও। ফলে পৃথিবী দ্রুত বিকল্প শক্তির দিকে এগতে পারলে মূল‌্যবৃদ্ধির এই সংকট এবং অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা এড়ানো যাবে। যেভাবে ইউরোপ ও আমেরিকা পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে, তাতে অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা কেটে যেতে পারে। ভারতেরও হাত গুটিয়ে বসে থাকা উচিত নয়। রাষ্ট্রসংঘের সম্মেলনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আরও সক্রিয় হওয়া উচিত সরকারের। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর দিকে ঝুঁকেছে দেশ। এবার বিদু‌্যৎচালিত গাড়ির উৎপাদন ও ব‌্যবহার বাড়ানোর উপর আরও জোর প্রয়োজন।

[আরও পড়ুন: অ্যাবেনোমিক্সের তির, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-কে মনে রাখবে ভবিষ্যৎ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement