চব্বিশের নির্বাচনে প্রচার শেষে কন্যাকুমারীতে ৪৫ ঘণ্টার ধ্যান ও আধ্যাত্মিক সফর শেষে দিল্লি ফেরার পথে নিজের ভাবনা লিপিবদ্ধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। তারই অংশবিশেষ 'সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল'-এ।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
গণতন্ত্রের জননী ভারতে গণতন্ত্রের সবচাইতে বড় মহাপর্বের একটি পর্যায় ১ জুন সম্পূর্ণ হল। তিনদিন ধরে কন্যাকুমারীতে আধ্যাত্মিক সফরের পর আমি দিল্লি যাওয়ার জন্য বিমানে এসে বসেছি। কাশী এবং অনেক আসনের জন্য ভোটদান পর্ব হল এদিন। কত অভিজ্ঞতা, কত না অনুভুতি আমি নিজের মধ্যে একটি অসীম প্রাণশক্তির প্রবাহ অনুভব করছি।
প্রকৃতই ২০২৪-এর এই নির্বাচনে কত না আনন্দময় সংযোগ তৈরি হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার অমৃতকালে এই লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election 2024) প্রচার আমি ১৮৫৭ সালের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেরণাভূমি মীরাট থেকে শুরু করেছি। ভারতমাতার পরিক্রমা করতে করতে এই নির্বাচনে আমার সর্বশেষ জনসভা পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুরে হয়েছে। সন্ত রবিলালজির তপোভূমি, আমাদের শিখ গুরুদের মাতৃভূমি পাঞ্জাবে শেষ সভা আয়োজনের সৌভাগ্য অত্যন্ত আনন্দের। এর পর আমার কন্যাকুমারীতে (Kanyakumari) ভারতমাতার চরণে বসার সৌভাগ্য হয়েছে। সেই সাধনার সুন্দর মুহূর্তগুলিতে নির্বাচনের কোলাহল আমার মন ও মস্তিষ্কে গুঞ্জরিত হচ্ছিল। বিভিন্ন নির্বাচনী সভা ও রোড শো-তে দেখা অসংখ্য চেহারা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। অসংখ্য মা, বোন ও কন্যাদের অফুরন্ত ভালোবাসার সেই জোয়ার, তাঁদের আশীর্বাদ...তাঁদের দুচোখে আমার জন্য সেই বিশ্বাস, সেই স্নেহ...আমি সব কিছু স্মরণ করছিলাম। আমার দুচোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠছিল...আমি শূন্যতায় প্রবেশ করছিলাম, সাধনায় প্রবেশ করছিলাম।
কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই রাজনৈতিক বাদ-বিতন্ডা, প্রশ্ন ও জবাব, আরোপ-প্রত্যারোপের স্বর এবং শব্দ এই সব কিছু নিজে থেকেই শূন্যে মিলিয়ে গেল। আমার মনের উদাসীনতার ভাব আরও তীব্র হল... আমার মন বাহ্য জগত থেকে সম্পূর্ণ রূপে অলিপ্ত হয়ে গেল। এত বড় বড় দায়িত্বের মাঝে এ ধরণের সাধনা অত্যন্ত কঠিন হয়ে ওঠে। কিন্তু কন্যাকুমারীর মাটি আর স্বামী বিবেকানন্দের (Swami Vivekananda) প্রেরণা একে সহজ করে তুলেছে। আমি সাংসদ রূপে নিজের নির্বাচনের দায়িত্ব কাশীর ভোটদাতাদের চরণে সমর্পণ করে এখানে এসেছিলাম।
[আরও পড়ুন: সমস্ত এক্সিট পোলের উলটো আভাস, AI-এর সমীক্ষায় ব্যাকফুটে বিজেপি!]
আমি ঈশ্বরের কাছেও কৃতজ্ঞ যে তিনি জন্ম থেকে আমাকে এই শিষ্টাচার দিয়েছেন। আমি এটাও ভাবছিলাম যে স্বামী বিবেকানন্দজি সেই স্থানে সাধনার সময় না জানি কী অনুভব করেছিলেন! আমার সাধনার কিছুটা অংশ এ রকমই ভাবনা প্রবাহে প্রবাহিত হয়েছে। এই উদাসীনতার মধ্যে, শান্তি এবং নীরবতার মধ্যে আমার মনে নিরন্তর ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য, ভারতের উন্নয়নে সমস্ত লক্ষ্যে পৌঁছনোর ভাবনা জেগে উঠছিল। কন্যাকুমারীর উদীত সূর্য আমার ভাবনাগুলিকে নতুন উচ্চতা প্রদান করেছে। সাগরের বিশালতা আমার ভাবনাগুলিকে বিস্তারিত করেছে। আর দিকচক্রবালের বিস্তার ব্রহ্মাণ্ডের গভীরতায় বিলীন হওয়ার একাত্মতা অনুভব করিয়েছে। এমন মনে হচ্ছিল যেন, কয়েক দশক আগে হিমালয়ের কোলে যে সাধনা ও ভাবনাচিন্তা করেছিলাম তার অভিজ্ঞতা যেন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠছে।
বন্ধুগণ,
কন্যাকুমারীর এই স্থানটি সর্বদাই আমার মনের খুব কাছে রয়েছে। কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ শিলা স্মারকের নির্মাণ করিয়েছিলেন শ্রী একনাথ রান্ডেজি। একনাথজির সঙ্গে আমার অনেক ভ্রমণ করার সৌভাগ্য হয়েছে। এই স্মারক নির্মাণের সময় কন্যাকুমারীতে কিছুটা সময় থাকা, সেখানে আসা-যাওয়ার সৌভাগ্য স্বাভাবিকভাবেই হয়েছিল।
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী...
এটাই প্রত্যেক দেশবাসীর অন্তর্মনে স্থায়ী হয়ে আমাদের মিলিত পরিচয় গড়ে তুলেছে। এটা এমন শক্তিপীঠ, যেখানে মা শক্তি স্বয়ং একটি কুমারী কন্যা রূপে অবতার হয়েছিলেন। দেশের এই দক্ষিণ প্রান্তে ভগবান শিবের জন্য মা শক্তির তপস্যা এবং প্রতীক্ষার অনুভব আমার হিমালয়ের সবচেয়ে উত্তর প্রান্তেও হয়েছিল। কন্যাকুমারী সব সঙ্গমের শ্রেষ্ঠ সঙ্গম। আমাদের দেশের পবিত্র নদীগুলি ভিন্ন ভিন্ন সমুদ্রে গিয়ে মেশে। আর এখানে সেই দুই সমুদ্রের সঙ্গম হয়। পাশাপাশি এখানে আর একটি মহান সঙ্গম অনুভূত হয়, তা হল ভারতে বিবিধ দর্শনের সঙ্গম!
কন্যাকুমারীতে ধ্যানমগ্ন মোদি। নিজস্ব চিত্র।
এখানে বিবেকানন্দ শিলা স্মারকের পাশাপাশি সন্ন্যাসী তিরুভল্লুভর-এর বিশাল মূর্তি, গান্ধী মণ্ডপম এবং কামরাজর মণি মণ্ডপম রয়েছে। মহান নায়কদের দর্শনের এই ধারাগুলিও এখানে রাষ্ট্রচিন্তনের সঙ্গম প্রস্তুত করে। এর মধ্যে রাষ্ট্র নির্মাণের মহান প্রেরণাগুলির উদয় হয়। যাঁরা ভারতের রাষ্ট্র হয়ে ওঠার এবং দেশের একতা নিয়ে সন্দেহ করে, তাদেরকে কন্যাকুমারীর এই মাটি একতার শ্বাশত বার্তা দেয়।
কন্যাকুমারীতে সন্ন্যাসী তিরুভল্লুভর-এর বিশাল মূর্তি দেখে মনে হয়, তিনি সমুদ্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে ভারতমাতার বিস্তারকে দেখে যাচ্ছেন। তাঁর রচিত ‘তিরুক্কুরল’ তামিল সাহিত্যের অসংখ্য রত্ন খচিত মুকুটের মতো। এতে জীবনের প্রতিটি দিক নিয়ে বর্ণনা রয়েছে, যা আমাদের স্বয়ং এবং রাষ্ট্রের জন্য নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ যা কিছু রয়েছে, সব কিছু উৎসর্গ করার প্রেরণা জোগায়। এহেন মহাপুরুষকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে।
বন্ধুগণ,
স্বামী বিবেকানন্দজি বলেছিলেন, ‘Every Nation Has a Message To deliver, a mission to fulfil, a destiny to reach’. প্রত্যেক জাতির বলার মতো একটি বার্তা থাকবে, তা পূরণ করার জন্য একটি লক্ষ্য থাকবে, আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর ভাগ্যও থাকবে।
ভারত হাজার হাজার বছর ধরে এই ভাবনা নিয়ে, সার্থক উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ভারত হাজার হাজার বছর ধরে বিভিন্ন দর্শনের অনুসন্ধানের কেন্দ্র ছিল। আমরা যা অর্জন করেছি তাকে কখনও নিজেদের ব্যক্তিগত পুঁজি ভেবে সেগুলিকে আর্থিক বা জাগতিক কোনো মানদণ্ডে ওজন করিনি। সেজন্য, ‘ইদং ন মমো’ এই ভাবনাই ভারতের চরিত্রের সহজ এবং স্বাভাবিক অংশ হয়ে উঠেছে।
[আরও পড়ুন: আকাশে এক সারিতে ছয় গ্রহ! দেশের কোথা থেকে দেখা যাবে বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য?]
ভারতের কল্যাণের মাধ্যমেই বিশ্বের কল্যাণ। ভারতের উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বের উন্নতি। এর একটা বড় উদাহরণ ছিল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামও। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হয়েছে। সেই সময় বিশ্বের অনেক দেশ দাসত্বের শৃঙ্খল পরেছিল। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন সেসব দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরও প্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছে। আর তাঁরাও তাঁদের দেশকে স্বাধীন করেছেন। সম্প্রতি করোনার কঠিন দিনগুলির উদাহরণও আমাদের সামনে রয়েছে। যখন বিশ্বের ধনী দেশগুলির মানুষ আমাদের মতো গরিব এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিকে নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছিল, কিন্তু ভারতের সফল প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমস্ত দেশের সাহস বেড়েছে, আর তারা আমাদের কাছ থেকে সহযোগিতাও পেয়েছে।
আজ ভারতের ‘গভর্নেন্স মডেল’ বিশ্বের অনেক দেশের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে। মাত্র ১০ বছরে ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্রসীমার ঊর্ধ্বে টেনে তোলা অভূতপূর্ব ঘটনা। প্রো পিপল গুড গভর্নেন্স বা জনভিত্তিক সুশাসন, উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্লক উন্নয়নের মতো অভিনব পরীক্ষানিরীক্ষার আলোচনা আজ গোটা বিশ্বে হচ্ছে। গরিবের ক্ষমতায়ন থেকে শুরু করে সমাজের প্রান্তিকতম মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার অগ্রাধিকার ও আমাদের প্রচেষ্টা গোটা বিশ্বকে প্রেরণা জুগিয়েছে। ভারতের ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযান আজ গোটা বিশ্বের সামনে একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে। আমরা কীভাবে প্রযুক্তিকে গরিবদের ক্ষমতায়নে ব্যবহার করেছি, প্রশাসনিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার মাধ্যমে কীভাবে তাঁদের অধিকার সুনিশ্চিত করেছি! ভারতে আজ সস্তায় ডেটা-গরিব মানুষের কাছে তথ্য পরিবেশন এবং অন্যান্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ফলে এটি এখন সামাজিক সাম্যের মাধ্যম হয়ে উঠছে। গোটা বিশ্ব প্রযুক্তির এই গণতন্ত্রীকরণকে একটি গবেষণা ভিত্তিক দৃষ্টিতে দেখছে। আর বড় বড় আন্তর্জাতিক সংস্থা অনেক দেশকেই আমাদের মডেল থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন।
আজ ভারতের উন্নয়ন আর ভারতের উত্থান দুটিই ভারতের জন্য বড় সুযোগ নয়, এটি গোটা বিশ্বে আমাদের সমস্ত সহযাত্রী দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের (G 20 Summit) সাফল্যের পর থেকে ভারতের এই ভূমিকাকে বিশ্ববাসী আরও বেশি উচ্চকিত হয়ে স্বীকার করছে। আজ ভারতকে ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর একটি শক্তিশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর রূপে স্বীকার করা হচ্ছে। ভারতের প্রচেষ্টাতেই আফ্রিকান ইউনিয়ন জি২০ গ্রুপের অংশ হয়েছে। এটা সমস্ত আফ্রিকান দেশগুলির জন্য ভবিষ্যতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে প্রমাণিত।
বন্ধুগণ,
নতুন ভারতের এই স্বরূপ আমাদের গর্বিত করে তুলছে, কিন্তু এর পাশাপাশি এটি ১৪০ কোটি ভারতবাসীকে তাদের কর্তব্যগুলিও অনুভব করায়। এখন আর এক মূহুর্ত নষ্ট না করে আমাদের বড় বড় দায়িত্ব এবং বড় বড় লক্ষ্য সাধনের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের নতুন নতুন স্বপ্ন দেখতে হবে। আমাদের স্বপ্নগুলিকে যাঁরা তাঁদের জীবনের অংশ করে তুলবে, আর সেই স্বপ্নগুলিকে নিয়ে বাঁচতে শুরু করবে।
আমাদের ভারতের উন্নয়নকে আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই করতে হবে। আর সেজন্য আমাদের ভারতের নিজস্ব সামর্থকে বোঝার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের ভারতের শক্তিকেও স্বীকার করতে হবে। সেসব শক্তির উৎসকেও পুষ্ট করতে হবে। আর বিশ্বের কল্যাণে এগুলির সম্পূর্ণ উপযোগও করতে হবে। আজকের আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে একটি নবীন প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ রাষ্ট্র রূপে ভারতের সামর্থ আমাদের জন্য একটি এমনই আনন্দের সংযোগ আর সুযোগ যেখান থেকে আমাদের আর পিছনে তাকাতে হবে না।
ধ্যান শুরুর আগে তামিলনাড়ুর মন্দিরে পুজো মোদির। নিজস্ব চিত্র।
একবিংশ শতাব্দীর বিশ্ব আজকের ভারতের দিকে অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। আর আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের কিছু পরিবর্তনও করতে হবে। আমাদের পুনর্নির্মাণ নিয়ে পারম্পরিক ভাবনাকেও বদলাতে হবে। ভারত সংস্কারকে শুধুই আর্থিক পরিবর্তনের মধ্যে সীমিত রাখতে পারে না। আমাদের জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের ‘রিফর্ম ২০৪৭’ বা ‘সংস্কার ২০৪৭’-এর উন্নত ভারতের সংকল্পের অনুরূপ হয়ে উঠতে হবে।
আমাদের এটাও বুঝতে হবে যে কোনও দেশের জন্য সংস্কার কখনও স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া হতে পারে না। সেজন্য আমাদের দেশের জন্য ‘রিফর্ম, পারফর্ম এবং ট্রান্সফর্ম’-এর লক্ষ্য সামনে রেখেছি। নেতৃত্বকেই এই রিফর্ম বা সংস্কারের দায়িত্ব নিতে হয়। এর ভিত্তিতে আমাদের আমলাতন্ত্র এগুলিকে পারফর্ম বা বাস্তবায়িত করে। আর যখন জনগণ এর সঙ্গে যুক্ত হন, তখন ট্রান্সফর্মেশন বা রূপান্তরণ দেখা যায়।
[আরও পড়ুন: ভোট মিটতেই দুধের দাম বাড়াল আমূল, প্রতি লিটারে বাড়ল কত?]
ভারতকে উন্নত ভারত করে গড়ে তুলতে আমাদের শ্রেষ্ঠত্বকে মূল ভাবনা করে তুলতে হবে। আমাদের স্পিড বা গতি, স্কেল বা পরিমাপ, স্কোপ বা পরিসর এবং স্ট্যান্ডার্ড বা মান এই চার লক্ষ্য সুনিশ্চিত করে দ্রুত গতিতে কাজ করতে হবে। আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদনের পাশাপাশি উৎকর্ষের ওপরও জোর দিতে হবে। আমাদের ‘জিরো ডিফেক্ট, জিরো এফেক্ট’ মন্ত্র নিয়ে কাজ করে যেতে হবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের প্রত্যেক মুহূর্তে এজন্য গর্ব করা উচিত যে ঈশ্বর আমাদের ভারতভূমিতে জন্ম দিয়েছেন। ঈশ্বর আমাদের ভারতের সেবা আর তার উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছনোর যাত্রাপথে নিজেদের ভূমিকা পালন করার জন্য নির্বাচন করেছেন। আমাদের প্রাচীন মূল্যবোধগুলিকে আধুনিক স্বরূপে গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের ঐতিহ্যকে আধুনিক মাত্রায় পুনঃপরিভাষিত করতে হবে।
আমাদের এক দেশ রূপে পুরনো হয়ে যাওয়া ভাবনা-চিন্তা এবং কুসংস্কারগুলিকে পরিমার্জনও করতে হবে। আমাদের নিজেদের সমাজকে পেশাদার নিরাশাবাদীদের চাপ থেকে মুক্ত করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে নেতিবাচকতা থেকে মুক্তিই সাফল্যের শিখরে পৌঁছনোর জন্য প্রথম জড়িবুটি। ইতিবাচকতার কোলেই সাফল্য লালিত-পালিত হয়। ভারতের অসীম এবং অমর শক্তির প্রতি আমার আস্থা, শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাসও প্রতিদিন ক্রমে বাড়ছে। আমি বিগত ১০ বছর ধরে ভারতের এই সামর্থকে আরও বেশি বাড়তে দেখেছি এবং অনেক বেশি অনুভব করেছি।
যেভাবে আমাদের পূর্বজরা বিংশ শতাব্দীর চতুর্থ-পঞ্চম দশককে আমাদের স্বাধীনতার জন্য প্রয়োগ করেছিলেন, সেভাবেই একবিংশ শতাব্দীর এই ২৫ বছরে আমাদের উন্নত ভারতের ভিত্তি স্থাপন করতে হবে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় দেশবাসীর সামনে আত্মবলিদানের সময় ছিল। আজ আর আত্মবলিদানের প্রয়োজন নেই। আজ নিরন্তর অবদান রাখার সময় এসেছে।
বিবেকানন্দ রকে ৪৫ ঘণ্টা ধ্যানে প্রধানমন্ত্রী মোদি। নিজস্ব চিত্র।
স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৭ সালে বলেছিলেন যে আমাদের আগামী ৫০ বছর শুধু এবং শুধু দেশের জন্য সমর্পণ করতে হবে। তাঁর এই আহ্বানের ঠিক ৫০ বছর পর ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়েছে!
আজ আমাদের কাছে এ রকমই সোনালি সুযোগ এসেছে। আমাদের আগামী ২৫ বছর শুধু এবং শুধু দেশের জন্য সমর্পণ করতে হবে। আমাদের এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এবং ভবিষ্যৎ শতাব্দীগুলির জন্যও নতুন ভারতের সুদৃঢ় ভিত্তির রচনা করে অমর হয়ে ওঠার। আমি দেশের প্রাণশক্তি দেখে একথা বলতে পারছি যে লক্ষ্য এখন আর দূরে নেই। আসুন, দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে যাই... সবাই মিলে একসঙ্গে চলি, ভারতকে উন্নত করে তুলি।
(তাঁর এই ভাবনা প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদি স্বয়ং ১লা জুন তারিখে বিমানে কন্যাকুমারী থেকে দিল্লি ফেরার পথে বিকাল ৪.১৫ থেকে সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে লিপিবদ্ধ করেন।)