এই বিধানসভা নির্বাচনে এক অভূতপূর্ব প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাক্ষী থাকবে মহারাষ্ট্র। একদিকে ভেঙে যাওয়া শিবসেনার দুই শিবির একে-অপরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে, অন্যদিকে এনসিপি-র দুই শিবির একে-অপরের বিরুদ্ধে। উভয় দলের ক্ষেত্রেই একদিকে প্রতিষ্ঠাতা শিবিরের রাজনৈতিক গরিমা, অন্যদিকে তাদের নীতির সঙ্গে মতবিরোধের জেরে দল ভেঙে বেরিয়ে আসা আর-একটি বিরুদ্ধ শিবির। এই অবস্থায় বর্তমান বিধানসভা নির্বাচন উভয় শিবিরের কাছেই ‘লিটমাস টেস্ট’। কারণ এটাই দেখার যে, কোন শিবিরের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। কোন শিবির আসল দলটির উত্তরাধিকার দাবি করতে পারে। এই নির্বাচন কেবল ক্ষমতা দখলের লড়াই নয়, মহারাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় দুই রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরাধিকার ও আদর্শের শিকড়ের নির্ধারক একটি গণভোট।
শিবসেনা, এক সময় প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত বাল ঠাকরের আঞ্চলিক রাজনীতির একচেটিয়া ‘ফায়ার ব্র্যান্ড’ বহন করলেও, এখন তা দু’টি শিবিরে বিভক্ত। একটি তঁার পুত্র উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বে, যিনি দলের প্রতিষ্ঠাতার নৈতিক ধ্বজা বহন করেন এবং অন্যটি মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের, যিনি ‘বাস্তব রাজনীতি’ এবং ক্ষমতার প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছেন। ২০২২ সালের জুনে অনুগামীদের নিয়ে দল ছেড়ে তিনি শিবসেনার ‘প্রকৃত’ উত্তরাধিকারী হিসাবে দাবি করেন। দুই শিবির, এখন দু’টি দল হয়ে, ৪৯টি আসনে একে-অপরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে অবতীর্ণ। এটি আনুগত্য বনাম উত্তরাধিকার, ক্ষমতা বনাম নীতির একটি পরীক্ষা।
শিণ্ডের ক্ষেত্রে, এই নির্বাচন মহাযুতি জোটের বৈধ উত্তরসূরি হিসাবে নিজের ভূমিকাকে শক্তিশালী করার চ্যালেঞ্জ, আর উদ্ধবের জন্য, এটি তঁার বাবা বাল ঠাকরের আদর্শ ও ঐতিহ্য রক্ষার লড়াই। একইভাবে এনসিপি-ও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে দুই দল হিসাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এখানে আবার পারিবারিক দ্বন্দ্বও রয়েছে। দলের প্রতিষ্ঠাতা শরদ পাওয়ার ও ভাইপো অজিত পাওয়ারের যে-দ্বন্দ্বে দল ভেঙেছিল, তা এখন নির্বাচনী লড়াইয়ের ময়দানে। এই বিভাজন দলের মধ্যে একটি গভীর আদর্শগত এবং প্রজন্মগত বিভেদকে প্রতিফলিত করে। অজিতের উপ-মুখ্যমন্ত্রিত্ব এবং উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক প্রভাবের বিনিময়ে বিজেপির সঙ্গে জোট করা, আর শরদের তাতে সায় না-দিয়ে ক্ষমতা থেকে দূরে থেকেও নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ অটুট রাখা, এর মধ্যে মারাঠাভূমি কোনটি বেছে নেয় সেটাই দেখার।
অর্থাৎ, এই নির্বাচন শুধু একটি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, প্রকৃত উত্তরাধিকার দাবির যুদ্ধও। মহারাষ্ট্রের ভোটাররা ক্ষমতার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রাখা দল এবং মতাদর্শগত নীতিগুলিকে সমুন্নত রাখার চেষ্টার মধ্যে একটিকে নির্বাচিত করবেন। ভোটফল পুরনো আনুগত্যের স্থায়িত্ব, রাজনৈতিক বাস্তববাদের আবেদন, এবং উদ্ধব ঠাকরে ও শরদ পাওয়ারের মতো নেতার স্থায়ী প্রভাবের জন্য একটি বড় পরীক্ষাও হবে।