shono
Advertisement

‘তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন’

পালাবদলের প্রাকলগ্নে হিলারি চিঠি লিখলেন যুযুধান প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পকে৷ দিলেন কিছু সদ্বুদ্ধি৷ কাল্পনিক সেই চিঠির বঙ্গীকরণ করলেন শুভময় মণ্ডল The post ‘তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন’ appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:01 PM Oct 23, 2016Updated: 08:44 PM Oct 23, 2016

আর কিছুদিন বাদেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের দামামা বেজে উঠবে৷ রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে একদিকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন ও অন্যদিকে রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ বছর খানেক ধরে রাজনৈতিক আকচা-আকচি দু’জনের মধ্যেই বিদ্যমান৷ পালাবদলের প্রাকলগ্নে হিলারি চিঠি লিখলেন যুযুধান প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পকে৷ দিলেন কিছু সদ্বুদ্ধি৷ কাল্পনিক সেই চিঠির বঙ্গীকরণ করলেন শুভময় মণ্ডল

Advertisement

প্রিয়তম ডোনাল্ড,

তোমাকে প্রিয়তম বলছি বলে ঘাবড়ে গেলে না কি? তুমি তো প্রিয়ই বটে৷ তা তোমার আমার মধ্যে যতই আকচা-আকচি থাক৷ আমি কখনও কারও সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করি না৷ করবও না৷ তা সে তুমি যতই আমাকে নিয়ে অপপ্রচার করো না কেন৷ রাজনীতিতে তা হয়েই থাকে৷ থাক সেসব কথা৷ তোমাকে চিঠি লেখার যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছিলাম না৷ কিন্তু সময় যে অতিবাহিত৷ তাই চিঠি না লিখে পারলাম না৷ তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে৷ আর তো মোটে সপ্তাহ দুয়েক৷ তারপরই তো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ৷ তার আগে বেশ কিছু না বলা কথা তোমায় বলি৷ ভাল না লাগলে চিঠি ছিঁড়ে ফেলে দিও৷ তোমার যা স্বভাব, তাতে রেগে গিয়ে আমাকে শাপ-শাপাল্ত করতে পার৷ তবে আমার বিশ্বাস, পড়ার পর আমাদের সম্পর্ক খারাপ হবে না৷

দেশের রাজনীতিতে আমার তিরিশ বছরের অভিজ্ঞতা৷ দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ঘরণি, একজন মা, একজন মেয়ে এবং সর্বোপরি একজন দায়িত্বশীল নাগরিক৷ এক রাষ্ট্রপতির যেমন ঘর সামলেছি, তেমনই আরেক রাষ্ট্রপতির অফিস৷ কোনওদিন হার মানতে শিখিনি৷ স্বামীর বিরুদ্ধে একসময় যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে৷ ঠিক-ভুল জানতাম না, কিন্তু বিচলিত হইনি৷ তিরিশ বছরে আমি যা করেছি তুমি তার ছিটেফোঁটাও করোনি হলফ করে বলতে পারি৷ সাতের দশকে যখন আমি দেশে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছি তখন তুমি কোথায় ছিলে বলতে পার? দেশের বিভিন্ন স্কুলে সাদা বনাম কালোর লড়াইয়ে তখন শিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের মুখে৷ পড়াশোনা শিকেয় ওঠার জোগাড়৷ কিন্তু তোমাকে তখন দেখিনি বর্ণবৈষম্যের বিরোধিতা করতে? ঠিক আছে, সে না হয় ছেড়ে দিলাম৷ আটের দশকে আরকানসাসের স্কুলগুলিতে শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে যখন সরব হলাম, তখনই বা কোথায় ছিলে তুমি? আমি বলি, তখন তুমি তোমার বাবার কাছ থেকে ১৪ মিলিয়ন ডলার নিয়ে নিজের ব্যবসা শুরু করলে৷ ব্যবসা, এই ব্যবসা ছাড়া জীবনে কিছুই বোঝোনি তুমি৷ সবকিছুই ব্যবসাদারের নজরে দেখো তুমি৷ তাই তো বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিনগুলো তোমাকে নিয়ে কত লেখালেখি করে৷ তোমার না কি বিশাল সম্পত্তি! সম্পত্তির কোনও হিসাব না কি নেই তোমার কাছে৷ তা হতে পারে, কিন্তু আমার মতো সম্মান তুমি সারা জীবনেও অর্জন করতে পারনি৷ পারবেই বা কী করে? কখনও অন্যকে সম্মান দিতে শেখোনি তুমি, ওটা তোমার আসে না৷

নয়ের দশকের কথা বলি৷ তখন আমি চিনের রাজধানী বেজিংয়ে৷ সেদেশে মহিলাদের ন্যুনতম স্বাধিকার টুকুও ছিল না৷ সেদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সামনে দাঁড়িয়ে দীপ্তকণ্ঠে বললাম, নারীর অধিকারও মানবাধিকার৷ নারীর অধিকারকে সম্মান দিতেই হবে৷ তুমি জীবনে ক’টা নারীকে সম্মান দিয়েছো বলতে পার? আমি শুনেছিলাম, তখন অর্থের দম্ভের চূড়ায় তুমি৷ প্রাক্তন ব্রহ্মাণ্ডসুন্দরী আলিসিয়া ম্যাশাডোকে তুমি প্রকাশ্যে বলেছিলে, ‘ও একটা খাওয়ার মেশিন, শুধু খেতেই পারে!’ তোমার মতো এত রুচিশীল মানুষের কাছে এমন মন্তব্য আশা করা যায় না৷ তোমার অনেক প্রতিপত্তি হতে পারে, কিন্তু বিশ্বাস করো, মানুষ তুমি হতে পারনি৷ এখানেই শেষ নয়৷ যখন দেশের বুকে সবচেয়ে বড় আঘাত যে হেনেছিল, সেই দুর্বৃত্তকে বধ করার সময় দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে ছিলাম আমিও৷ সেই বিনিদ্র রজনী আমি আজও ভুলিনি৷ সেইসময় তুমি কী করছিলে? তখন তুমি টিভির পর্দায় রং-পাউডার মেখে সং সেজে বসেছিলে৷ সেলেব্রিটি অ্যাপ্রেন্টিসদের টিভি শোয়ের মধ্যে তাড়াচ্ছিলে৷ দেশ যখন এই উত্তেজনার পরিস্থিতিতে তখন তো তোমার টিকিও খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ আর আজ তুমি দেশভক্তির কথা বলছ৷ দেশ থেকে মুসলিমদের তাড়ানোর কথা ফলাও করে বলছ৷ ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে হিন্দুদের সঙ্গে সখ্যতা বাড়াচ্ছ৷ আর মোটে ক’টা দিন৷ তারপর তো তুমি বলবে, এ জীবনে কে কার? তোমার যা স্বভাব, নিজের প্রতিশ্রুতি নিজেই অস্বীকার করবে৷ কিন্তু মনে রেখো, দেশের মানুষ তোমাকে হাড়ে হাড়ে চিনে গিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঠাট্টা-মশকরার অন্যতম পাত্র তুমি৷ তার জন্য তুমি নিজেই দায়ী৷ কারণ, কখনও কারও কথায় গুরুত্বই দাওনি তুমি৷ এখন রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়িয়ে পাপস্খালনের চেষ্টায় মেতেছ৷

তবে আমার কর্মজীবন, আমার আত্মত্যাগের সামনে তোমার জীবনদর্শন তুচ্ছ৷ তুমি কখনওই আমার সমতুল্য হতে পারবে না, তাই আমাকে আক্রমণ করার নানা ফন্দি ফিকির দিনরাত ভেবে চলেছ৷ চিঠির শেষে বলি, এখনও সময় আছে মানুষ হও৷ মানুষের জন্য ভাব, মানুষকে নিয়ে চলো, হিংসা-সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করো না৷ তবে আমি জানি, আমার কথা তোমার মস্তিষ্কে আলোড়ন ফেলবে না৷ উলু বনে মুক্ত ছড়িয়ে লাভ নেই তা আমিও জানি৷ শুধু একটা কথাই বলব, তুমি গদিতে বসতে চাও দেশে রাজত্ব করার জন্য আর আমি দেশের সেবা করার জন্য৷ আমার জীবনদর্শন যত দ্রুত বুঝবে ততই তোমার মঙ্গল৷

তোমার দীর্ঘায়ু কামনা করি৷

                                                                                                                                                                                                 ইতি হিলারি

The post ‘তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন’ appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement