shono
Advertisement
State politics

কাজের পরিসরে ‘হুমকি’, রাজ্য-রাজনীতিতে এখন প্রবল আলোচিত বিষয় 'মগনলাল'রা

‘হুমকি’ বা ‘থ্রেট’ আসলে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা।
Published By: Biswadip DeyPosted: 04:06 PM Sep 19, 2024Updated: 04:06 PM Sep 19, 2024

‘হুমকি’ বা ‘থ্রেট’ আসলে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা। কাজের পরিসরে ‘হুমকি’, মনের মতো কাজ না করলে দেখে নেওয়ার থ্রেট– রাজ্য-রাজনীতিতে এখন প্রবল আলোচিত বিষয়, এখন একনজরে।

Advertisement

‘উ সরবতে বিষ নাই।’ মগনলাল মেঘরাজের এ-কথায় লালমোহনবাবু ওরফে ‘জটায়ু’ ঘাবড়ে একশেষ হয়ে যায়। তার ধারণায়, মগনলাল যেহেতু মন্দ লোক, নানাবিধ শয়তানি কর্মকাণ্ডের জনক, তাই তার ‘অফার’ করা কোনও খাবার জিভে তোলা বিপজ্জনক সাব্যস্ত হতে পারে। কিন্তু দেখা গেল, ফেলুদা দিব্যি ঢকঢক করে শরবত খাচ্ছে। ফলে, জটায়ু পড়ল মহা দোটানায়। খাবে না কি খাবে না! আর, তখনই ভেসে এল মগনলাল মেঘরাজের মন্দ্র কণ্ঠস্বর– ‘সরবতে বিশ নাই।’ এটা কি আশ্বাসবাণী? না কি স্বস্তি দেওয়ার অছিলায় শান্ত হুমকি, একপ্রকার ‘থ্রেট’ যে, আঙ্কল শরবতটা নষ্ট করবেন না, খেয়ে নিন! হুমকি কখনও বাহিত হয় শান্ত-কণ্ঠে। কখনও ছুটে আসে খঁা-খঁা তীব্রতায়।

এই মগনলাল মেঘরাজই কি চিৎকার করে ফেলুদাকে থ্রেট দেয়নি– বলেনি যে– আমার মুখের উপর একদম কথা বলবেন না, যা বলছি তা করুন, গণেশ-রহস্য নিয়ে ইনভেস্টিগেশন করবেন না, তার চেয়ে মৌজ করে কাশী দেখুন এবং তারপর ছুটে দিয়েছিল একতাড়া টাকা? ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ সিনেমায় ফেলুদাকে ও জটায়ুকে বলার ধরন আলাদা, বাক্যভঙ্গিমাও এক নয়, কিন্তু মানুষটির ভেতরে যে দানবিক আক্রোশ কাজ করে, সে অন্য-মত যে সহ্য করতে পারে না, তা দিব্যি বোঝা যায়।

‘হুমকি’ বা ‘থ্রেট’ আসলে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা। যা চলে আসছে যুগান্ত ধরে, তা ধরে রাখা যেনতেনপ্রকারে। ‘মাস্টারমশাই আপনি কিন্তু কিছুই দেখেননি’– এই কথার মধ্যে ছিল হাড়-হিম-করা চেতাবনি। মানে, দেখেছেন হয়তো অনেক কিছুই, তবে সেসব ভুলে না-গেলে বিপদে পড়বেন। কাজেই ভেবে নিন, কিছুই ঘটেনি, কিছুই চোখে পড়েনি। আবার ‘হুমকি’ যে শারীরিক হিংসার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর ও খতরনাক, তার প্রকাশও দেখেছি আমরা রামগোপাল ভার্মা-র ‘সত্য’-য়। সেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছিল, হুমকি দিয়ে মানুষের মনে ভয় ঢুকিয়ে রাখতে হবে। এবং সে-ভয় থেকেই মানুষ গ্যাংস্টারদের আনুগত্য মেনে নেবে। ভয় থেকেই গ্যাংস্টারদের টাকাপয়সা দেবে, তুইয়েবুইয়ে রাখবে। অর্থাৎ এখানেও সেই স্থিতাবস্থার সমর্থনে পাশ ফেরা। ‌

'হুমকি’ যে শুধুমাত্র অপরাধীদের অস্ত্র, তা তো নয়, হুমকির সাংস্কৃতিক চরিত্রও রয়েছে। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ কখনও সহজভাবে কালো চামড়ার মানুষদের অস্তিত্বকে মেনে নেয়নি। যেখানে ‘কালো’-র উত্থান ঘটেছে সপাটে, ‘সাদা’-র সমান্তরালে কালো চলে এসেছে জীবনের গতিপথে, সেখানে অবদমনকে হাতিয়ার করেছে শ্বেতাঙ্গ মনস্তত্ত্ব। ‘ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল’-এর বিশিষ্ট তাত্ত্বিক হার্বাট মার্কিউসের যুগান্তকারী রচনা ‘ওয়ান-ডাইমেনশনাল ম্যান’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। সেখানে তিনি লেখেন, অতীতের স্মৃতি বিপজ্জনক অন্তর্দৃষ্টির জন্ম দিতে পারে এবং প্রতিষ্ঠিত সমাজ স্মৃতির সেই ধ্বংস-ক্ষমতা নিয়ে শঙ্কিত থাকে। অর্থাৎ বর্তমানের কাছে অতীত, প্রতিষ্ঠানের কাছে অপ্রতিষ্ঠান, দৃষ্টির সম্মুখে অন্তর্দৃষ্টিও হতে পারে থ্রেট!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ‘হুমকি’ বা ‘থ্রেট’ আসলে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা।
  • যা চলে আসছে যুগান্ত ধরে, তা ধরে রাখা যেনতেনপ্রকারে।
  • কাজের পরিসরে ‘হুমকি’, মনের মতো কাজ না করলে দেখে নেওয়ার থ্রেট– রাজ্য-রাজনীতিতে এখন প্রবল আলোচিত বিষয়।
Advertisement