একদিকে বিশ্বনাথন আনন্দ, অন্যদিকে পুরো বিশ্ব, ৬০ হাজারের বেশি দাবাড়ু। অনলাইনে, ২৪ চালে, ভিশি কিন্তু হারিয়ে দিলেন তাঁদেরকে।
বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য গ্যারি কাসপারভ বরাবর বিখ্যাত। যেমন, চলতি নভেম্বরে ‘ফিডে’-র উদ্যোগে যে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতার আয়োজন হতে চলেছে, তাকে আর যা-ই হোক, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মনোনীত হওয়ার আখড়া বলা যায় না– তা সগর্জনে বলেছেন একাধিকবার। কারণ, ম্যাগনাস কার্লসেন, বিশ্বের একনম্বর, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এই লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
কাসপারভের যুক্তি: একনম্বর দাবাড়ুই যদি না-খেলে, তাহলে আর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতার কী নির্যাস পড়ে রইল? এবার ভারতের ডি. গুকেশের সামনে সুযোগ রয়েছে চিনের ডিং লিরেনকে হারিয়ে ইতিহাস রচনার। তবে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের লড়াই শুরু হওয়ার আগে, নীরবে, ভারত আরও একটি মাইলফলক তৈরি করে ফেলেছে। গুকেশের ‘গুরু’ বিশ্বনাথন আনন্দ যার প্রধান কুশীলব। ‘চেস ডট কম’ একটি অভিনব অনলাইন দাবা ম্যাচের উদ্যোগ নিয়েছিল– যেখানে সারা পৃথিবীর মানুষ অনলাইনে নাম রেজিস্টার করে আনন্দের বিরুদ্ধে খেলতে পারবেন। এরকম ম্যাচ পরিকল্পনা করার ভ্রূণটিও গ্যারি কাসপারভের নামের সঙ্গে সংযুক্ত।
১৯৯৯ সালে ‘মাইক্রোসফ্ট নেটওয়ার্ক’ প্রস্তাব দিয়েছিল গ্যারিকে অনলাইনে বিশ্বের বিপক্ষে খেলার জন্য। অর্থাৎ একদিকে তিনি, অন্যদিকে পৃথিবীর সব ইচ্ছুক দাবাড়ু। সেই ম্যাচে গ্যারি কাসপারভ ৬২ চালের পর ‘রেস্ট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’-কে হারিয়ে দেন। খেলাটি চলেছিল চার মাসের বেশি। গর্বোদ্ধত কাসপারভ এই ম্যাচটিকে বলেছিলেন– ‘দ্য গ্রেটেস্ট গেম ইন দ্য হিস্ট্রি অফ চেস’। নিঃসন্দেহে তা ঐতিহাসিক ম্যাচ, আর এ-বছর সেই ম্যাচেরই রজতজয়ন্তী। সেজন্য অনুরূপ একটি ম্যাচের ব্যবস্থা করেছিল ‘চেস ডট কম’, যেখানে সারা বিশ্বের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন আনন্দ। ম্যাচটি শুরু হয়েছিল সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখে, অংশbiswanath নিয়েছিলেন ৬০ হাজারের বেশি দাবাড়ু এবং তাঁদের সম্মিলিত প্রতিরোধ দুরমুশ করে আনন্দ ম্যাচটি জিতে নিয়েছেন মাত্র ২৪ চালে। আনন্দ এবং তাঁর প্রতিযোগীরা গোটা একটা করে দিন পেতেন, একটি চাল দেওয়ার জন্য। বলা বাহুল্য, গ্যারি কাসপারভের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি আনন্দের এমন কৃতিত্বের পরিপ্রেক্ষিতে।
কিন্তু প্রশ্ন, ভারতীয় মিডিয়াও কি যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে খবরটি ‘কভার’ করেছে? ‘হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ’ পত্রিকায় (মে-জুন, ’৯৫) পিটার ভানডারউইকেন ‘হোয়াই দ্য নিউজ ইজ নট ট্রুথ’ প্রবন্ধে রাষ্ট্র ও গণমাধ্যমের অন্তর্বর্তী অঁাতঁাতকে ‘ভিশাস সার্কল’ বলে চিহ্নিত করে, ‘খবর’-কে দুমড়ে-মুচড়ে পরিবেশন করার প্রবণতার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। এমনকী, জোসেফ পুলিৎজারকেও একহাত নেন। তঁার মতে, ‘নিউজ’-কে কী করে ‘স্টোরি’-তে বদলে দিতে হয়, কী করে ‘প্লট’ আরোপ করে সংঘাতময় চরিত্রের আমদানি ঘটাতে হয়– সেসব প্রকৌশল পুলিৎজারেরই দেখানো। আর, সে-পথে হেঁটেই কি ভারতীয় গণমাধ্যম
এখন ‘প্রকৃত’ উদ্যাপনের খবরকে সামান্যতম গুরুত্বও দিতে নারাজ? নাহলে এই আনন্দ-খবর কী করে অবহেলিত থাকে? এর মধ্যে ‘মশলা স্টোরি’ নেই বলে?