কৃষ্ণকুমার দাস: ভাইফোঁটা শেষ হতেই কলকাতা (KMC) ও হাওড়া (Howrah) কর্পোরেশনের বকেয়া ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ে গেল। ভোটের নির্ঘণ্ট নিয়ে ইতিমধ্যে রাজ্য পুরদপ্তরের সঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আলোচনা প্রায় সম্পূর্ণ। কমিশন সূত্রে খবর, আগামী ২১ নভেম্বর দুই পুরসভাতেই বকেয়া নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হবে। ২৫ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করবে কমিশন। কলকাতার ১৪৪টি ও হাওড়ার ৫০টি ওয়ার্ডে (পূর্বতন কর্পোরেশন) ভোটগ্রহণ হবে ১৯ ডিসেম্বর, রবিবার এবং গণনার দিন ধার্য হয়েছে ২২ ডিসেম্বর বুধবার।
পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য শনিবার বলেন, “দুই পুরসভার বকেয়া ভোটের সম্ভাব্য দিনক্ষণ জানতে চেয়েছিল কমিশন। রাজ্য সরকার থেকে চিঠি দিয়ে নির্ঘণ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” উত্তরবঙ্গে নবগঠিত ময়নাগুড়ি ও ফালাকাটা এবং নির্বাচন বকেয়া থাকা ১১০টি পুরসভায় ভোটগ্রহণ আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে হওয়ার সম্ভাবনা। নিরাপত্তা ও পুলিশি প্রয়োজনে জেলার পুরভোট দুই বা তিন দফায় হতে পারে বলে কমিশন সূত্রে খবর।
[আরও পড়ুন: ‘আমরা ভেসে গেলাম’, ভাইফোঁটার সকালে বাঘাযতীনের দুর্ঘটনায় ভাইকে হারিয়ে হাহাকার দিদির]
নবান্নের শীর্ষমহলের সবুজ সংকেত নিয়েই দুই পুরভোটের (Corporation Election) নির্ঘণ্ট চূড়ান্ত করে কমিশনকে পাঠিয়ে দিতে দিনকয়েক আগেই রাজ্যের পুরদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। বস্তুত, এর পরেই দুই কর্পোরেশনের বকেয়া পুরভোটের নির্ঘণ্টের বিস্তারিত দিনক্ষণ কমিশনকে জমা দিয়েছেন রাজ্যের পুরসচিব খলিল আহমেদ। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের ভোটার লিস্ট ধরেই ওয়ার্ডভিত্তিক মহিলা ও তফসিলি আসন সংরক্ষণ মেনে ভোটগ্রহণ হবে। গতবছর কলকাতা ও হাওড়ার জন্য যে ওয়ার্ডগুলি সংরক্ষিত বলে বিজ্ঞপ্তি হয়েছিল, এবারও সেটাই কার্যকর হচ্ছে বলে পুরদপ্তর জানিয়েছে।
কমিশন সূত্রে খবর, ২৫ নভেম্বর কমিশনের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারির পরেই প্রার্থীদের মনোনয়ন জমার কাজ শুরু হয়ে যাবে। দুই পুরসভাতেই ২ ডিসেম্বর মনোনয়ন জমার শেষ দিন। মনোনয়নপত্র স্ক্রুটিনি হবে আগামী ৩ ডিসেম্বর আর প্রত্যাহারের শেষদিন ৪ ডিসেম্বর, শনিবার। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক শীর্ষকর্তা এদিন জানিয়েছেন, ২১ নভেম্বর ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গার দু’দিকের শহরেই ও সরকারি প্রশাসনে নির্বাচনী বিধিনিষেধ কঠোরভাবে কার্যকর হয়ে যাবে। স্বভাবতই দুই পুরসভার বিদায়ী কাউন্সিলররা নিজের বর্তমান ওয়ার্ডের বকেয়া উন্নয়নের কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য দিনরাত এক করে মাঠে নেমে পড়েছেন। স্বয়ং মুখ্যপ্রশাসক বলেছেন, হাতে আর দিন দশেক সময়, বকেয়া কাজ শেষ করুন।
[আরও পড়ুন: শিয়রে পুরভোট, কলকাতা ও হাওড়ার প্রার্থীদের নাম নিয়ে আলোচনা শুরু বিজেপিতে]
চলতি ভোটার তালিকা ও নগরপালিকা আইনের আসন সংরক্ষণের ফর্মুলা মেনে কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৩টি আসন সংরক্ষিত। এই তালিকায় মহিলাদের জন্য ৪৫টি ও তফসিলি জাতি-উপজাতির জন্য আরও আটটি ওয়ার্ড সংরক্ষিত বলে ঘোষণা করেছে কমিশন। সংরক্ষণের কোপে পড়ে কলকাতার চার মেয়র পারিষদ ও দুই বরো চেয়ারম্যান নিজেদের পুরনো ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারবেন না। হাওড়া কর্পোরেশনের পুরনো ৫০টি ওয়ার্ডেই নির্বাচন হবে। একই সঙ্গে বিধাননগর কর্পোরেশনে ভোটগ্রহণের চর্চা শোনা গেলেও তা সম্ভবত হচ্ছে না।
নবান্নের সুপারিশ আসতেই ছুটির মধ্যেই দুই কর্পোরেশন এলাকায় পুরভোট পরিচালনায় জোরকদমে নেমে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৯ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের দিনে কত পুলিশ, কত ভোটকর্মী প্রয়োজন তার হিসাব সম্পূর্ণ করা হয়েছে। পুরদপ্তরের এক শীর্ষ অফিসার স্বীকার করেছেন, “কলকাতা ও হাওড়া—সহ ১১৪টি পুরসভায় ভোটপ্রক্রিয়া পরিচালনার খরচ বাবদ প্রায় ২০০ কোটি টাকা রাজ্যের কাছে চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। যা পাঁচ বছর আগের সামগ্রিক পুরভোটের খরচের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বাজেট।”