অরিঞ্জয় বোস, লন্ডন: “ইট’স কামিং হোম, ইট’স কামিং, ইট’স কামিং, ফুটবল’স কামিং হোম...”। তিন বছর পর ফের ফিরে এসেছে গানের কলিগুলো। সুরে-সুরে, তালে-তালে, কথায় কথায় গা ভাসিয়ে তা অনুরণিত হচ্ছে লন্ডন থেকে ম্যাঞ্চেস্টার, ব্রিস্টল থেকে সেই সুদূর বার্লিনে। মনে করিয়ে দিচ্ছে, এক বুকভরা স্বপ্নকে।
৬৮ বছর ধরে যা লালিত প্রতিটি ইংরেজের মনের মণিকোঠায়। সে স্বপ্ন ফুটবল মানচিত্রে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের, নিজেদের তখ্ত বুঝে নেওয়ার। তিন বছর আগে ওয়েম্বলির সেই স্বপ্নিল রাত, স্বপ্নের খুব কাছে গিয়ে আছড়ে পড়েছিল বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে। স্বপ্নভঙ্গকারী এক নিষ্ঠুর টাইব্রেকার হ্যাঁচকা টানে থামিয়ে দিয়েছিল সেই উৎসবমুখর গানকে, বদলে দিয়েছিল তার সুর-লয়-তাল, এমনকী শব্দকেও। ‘ইট’স কামিং হোম’ বদলে গিয়েছিল ‘ইট’স কামিং রোম’-এ। ইংরেজদের ডেরায় ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইউরো (Euro Cup 2024) জয় করেছিল রবার্তো মানচিনির ইতালি।
[আরও পড়ুন: হিটলার নির্মিত স্টেডিয়ামে ইউরোর ফাইনাল, স্পেন-ইংল্যান্ড লড়াইয়ে প্রকৃত জয় ফুটবলের]
তারপর অবশ্য টেমস দিয়ে অনেক জলই বয়ে গিয়েছে। বয়ে গিয়েছে রূপকথাধর্মী এক আস্ত বিশ্বকাপ-অধ্যায়। যেখানে সোনালি রেখায় নিজের অধরা স্বপ্নের সূত্র মিলিয়ে দিয়েছেন লিওনেল মেসি। শাপগ্রস্ত এক চরিত্রের মতো সে’সবই দেখেছেন গ্যারেথ সাউথগেট। ইতিহাস তাঁকে বরাবর ট্র্যাজিক চরিত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে। যে শাপের রাহুগ্রাস শুরু হয়েছিল ২৮ বছর আগে। জার্মানির বিরুদ্ধে, ’৯৬-র ইউরো সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে সুযোগ নষ্টের খেসারত দিয়ে। কাকতালীয়, ১৯৯৬-এ ইউরো শুরুর প্রাক্কালে এক পিৎজা বিক্রয়কারী সংস্থার হয়ে বিজ্ঞাপনের মুখ হয়েছিলেন সাউথগেট। ভূমিকা ছিল এক ‘ইডিয়ট’ চরিত্রের। সঙ্গে ছিলেন আরও দুই মুখ– স্টুয়ার্ট পিয়ার্স ও ক্রিস ওয়াডেল। ইংল্যান্ড (England) জার্সিতে এই দুই কুশীলবও কুখ্যাত হয়ে আছেন ১৯৯০ বিশ্বকাপে জার্মানির বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে সুযোগ নষ্টের কারণে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সেই ‘অশুভ’ যোগ যে সাউথগেটের পিছু ছাড়েনি, ২০২১-এ ইতালির কাছে ইউরো ফাইনালে হারে, তা প্রমাণিত।
কিন্তু সংস্কার নিয়ে তো ফুটবল খেলা হয় না। হয় লড়াই-পরিশ্রম-অধ্যাবসায়ে। সাউথগেট হাল ছাড়েননি। ধৈর্য্যের নিবিড় পরীক্ষায় চোয়ালচাপা লড়াই করেছেন। তুলে এনেছেন যুব পর্যায় থেকে বেলিংহ্যাম, ফিল ফোডেন, পারমার সহ একাধিক নতুন মুখকে। তাঁরাই আজ আশার প্রদীপ হয়ে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সাউথগেটকে। অধরা ট্রফি জয়ের। যে স্বপ্ন তিন বছর আগে ওয়েম্বলি-তে ফেলে এসেছিল ইংল্যান্ড। ’৯৬-এর সেমিফাইনালে ফেলে এসেছিলেন খোদ সাউথগেট নিজে। তাই ‘এভার নয়তো নেভার’। বিপক্ষ স্পেন যতই তারুণ্যের দীপ্তশিখায় প্রজ্জ্বল হোক, সাউথগেট জানেন, সেই ‘লকগেট’ ভেঙে ইউরোপ সেরা হওয়ার রসদ মজুত আছে তাঁর তূণে। ইংল্যান্ডের ফুটবল জনতাও বিশ্বাস করে, পারবেন সাউথগেট। বিশ্বাস করে, তিনি ইউরো জয় করতে পারবেন, তাঁর ফুটবল-সেনা দিয়ে। বিলেত বিশ্বাস করে, আর খালি হাতে ফিরতে হবে না। এত দিন পর সে আসছে, ফুটবল ফিরে আসছে তার ঘরে। ইটস কামিং হোম!