সুপর্ণা মজুমদার: মার্চ মাসের ৮ তারিখ অনেকেরই নারীর সমান অধিকারের কথা মনে পড়ে। পোস্টের বন্যায় প্লাবিত হয় সোশ্যাল মিডিয়া। তাতে লাভ-ক্ষতির হিসেব করার মতো এলেম অন্তত আমার মতো সাধারণ মানুষের নেই। পালন আর প্রতিপালনের তরজা অনেক দিনের। ভারতবর্ষের মতো দেশের অন্দরে লুকিয়ে রয়েছে সমাজের ভিন্ন ভিন্ন চেহারা। কখনও তা সুন্দর, কখনও তা আবার ভয়ঙ্কর। তাই সমাজে নারীর অবস্থান পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল বলেই মনে হয়। আবার বয়সেরও নির্দিষ্ট ধর্ম রয়েছে। সেই ধর্ম অনুযায়ী চাহিদা ও জোগানের মাত্রা পালটে যায়। ‘বম্বে বেগমস’ (Bombay Begums) সিরিজের আয়নায় সমাজের এই ভিন্ন চেহারারই প্রতিফলন দেখা যায়।
পাঁচ ভিন্ন বয়সের নারীর কাহিনি ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক-চিত্রনাট্যকার অলঙ্কৃতা শ্রীবাস্তব (লিপস্টিক আন্ডার মাই বুরখা খ্যাত)। আর তাঁর লেখা কাহিনিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন পূজা ভাট, সাহানা গোস্বামী, অম্রুতা সুভাষ, প্লাবিতা বড়ঠাকুর এবং আধ্যা আনন্দ। রয়্যাল ব্যাংকের দাপুটে কর্তা রানি ইরানি (পূজা)। প্রতি মুহূর্তে নিজের চেয়ার ধরে রাখার জন্য মরিয়া লড়াই করতে হয় তাঁকে। আবার সৎ ছেলেমেয়ে জুভি ও শাইয়ের (আধ্যা) মন পেতেও তৎপর। ওদিকে আবার সন্তানের জন্ম দিতে আকুল হওয়া সত্ত্বেও কেরিয়ারের সঙ্গে আপস করতে রাজি নয় ফাতিমা (সাহানা)। নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে চায় আয়েশা (প্লাবিতা)। আবার নিজের উভকামী হওয়ার কথা লুকিয়ে যায় সে। সম্মানের জীবন চায় দেহব্যবসায়ী লিলি (অম্রুতা)। নারী জীবনের আশা, হতাশা এবং সত্যের মুখোমুখি হওয়ার দ্বিধাকে এক সুতোয় বাঁধার চেষ্টা করেছেন অলঙ্কৃতা। কিন্তু কোথাও যেন বড্ড বেশি একপেশে মতামত জাহির করার মতো হয়ে গিয়েছে। কাউকে ভাল দেখাতে গেলে, কাউকে খারাপ যে দেখাতেই হবে তার তো কোনও মানে নেই।
[আরও পড়ুন: ‘পাকিস্তানেও সরকার গড়বে বিজেপি’, টুইটারে কেন এমন দাবি কঙ্গনার?]
অভিনয়ে কোনও খামতি রাখেননি পূজা ভাট (Pooja Bhatt)। রানির চরিত্রের দুর্বল জায়গাগুলিও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। সাহানা (Shahana Goswami) কর্পোরেট জগতের মানুষ হওয়ার চেষ্টা করেছেন বটে, তবে তেমন মন কাড়তে পারেননি। আবার সন্তানের বদলে কেরিয়ার বেছে নেওয়া মানুষটির কেন যে সারোগেসি নিয়ে আপত্তি? সেই কারণ বোঝা গেল না। ছোট শহর থেকে বড় স্বপ্ন নিয়ে মুম্বইয়ে আসা তরুণীর ভূমিকায় প্লাবিতা (Plabita Borthakur) ভাল কাজ করেছেন। লিলির চরিত্রে অম্রুতা সুভাষ অনবদ্য। তবে শাইয়ের ভূমিকায় আধ্যার মুখে কোনও অভিব্যক্তি চোখে পড়েনি। সিরিজের পুরুষ চরিত্ররা কেবল গল্পের প্রয়োজনে নিজ নিজ ভূমিকা পালন করেছেন। নাসিরুদ্দিন-পুত্র ইমাদ শাহ, রাহুল বসু, মনীশ চৌধুরীর বিশেষ কিছু করার ছিল না সিরিজের প্রথম মরশুমের ছ’টি এপিসোডে। অবশ্য দ্বিতীয় মরশুমের ইঙ্গিত ক্লাইম্যাক্সেই দেওয়া রয়েছে।
নারী দিবসে (International Women’s Day) নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ‘বম্বে বেগমস’। সেই কথা মাথায় রেখেই গোটা গল্প সাজানো রয়েছে। সময়ের উপযোগী করেই গল্প সাজিয়েছেন অলঙ্কৃতা। তবে কোথাও কোথাও যেন গল্পের গতি একটু কমে গিয়েছে। অবশ্য পূজা-প্লাবিতা-অম্রুতার অভিনয়ের জোরেই অনেকটা খামতি পূরণ করা গিয়েছে। আবার কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং একবার নেটফ্লিক্সে (Netflix) দেখে নিতেই পারেন সিরিজটি।