নির্মল ধর: কেন্দ্র সরকারের উদ্যোগে দেশে পালিত হচ্ছে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’। এমন পরিস্থিতিতেই মুক্তি পেল ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ (Birkonna Pritilata)। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। স্বাধীনতা সংগ্রামের চট্টগ্রামের যে কন্যা প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁকে নিয়েই তৈরি পরিচালক প্রদীপ ঘোষের নতুন ছবি।
চট্টগ্রামের একুশ বছরের তরুণী প্রীতিলতা মাস্টার সূর্য সেনের বিপ্লবী দলে নাম লিখিয়েছিলেন। তারও আগে ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে আই এ পাশে করে কলকাতার বেথুন কলেজে দর্শন নিয়ে পড়তে আসেন। সেখানেই আলিপুর জেলে বিপ্লবী তথা ফাঁসির আসামী তরুণ রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে পরিচয় ঘটে প্রীতিলতার। দেড় মাসের মধ্যে অন্তত চল্লিশবার জেলে দেখা হয়েছে দু’জনার। বিপ্লবী চেতনা ও আদর্শে প্রীতির মানসিক পরিচয় এবং অনুপ্রাণিত হওয়া ওই ক্ষণিকের মেলামেশায়। হয়তো বা দু’জনেরই মনের রঙিন কোন কোথাও বন্ধুত্বের ছোঁয়া লেগে থাকবে।
এরপর রামকৃষ্ণর ফাঁসি হয় গেলে প্রীতিলতা পুরোপুরি স্বদেশি আন্দোলনে যোগ দেন মাস্টারদার সান্নিধ্যে। তিনিই তাঁকে দলবল-সহ পাঠান চট্টগ্রামের অভিজাত ব্রিটিশদের সন্ধ্যা প্রমোদের স্থান ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করতে। করেনও। দু-পক্ষেরই হতাহত বেশ কয়েকজন। ব্রিটিশ পুলিশের একটি গুলি লাগে প্রীতিলতার বুকের ডানদিকে। না, তিনি সেই আঘাতে মোটেই মারা যাননি। মাস্টারদার আদেশ শিরোধার্য করে পটাশিয়াম সায়নাইড খেয়ে বাংলার প্রথম নারী শহিদের মর্যাদা পান।
[আরও পড়ুন: ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ দেখে মুগ্ধ শাহরুখ, টুইটারে শুভেচ্ছা জানালেন অনির্বাণকেও]
‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’র পরিচালক প্রদীপ ঘোষ নিজেই চট্টগ্রামের মানুষ। বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক সেলিনা হোসেনের একটি গল্প থেকে আলাদা গবেষণা করে প্রদীপ নিজেই চিত্রনাট্য লিখেছেন। এই ছবির বড় গুণ হচ্ছে ঐতিহাসিক মূল্য। ছবি তৈরিতে কিছু ত্রুটি থাকতে পারে,
কিন্তু ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ দেখতে হবে তার ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে। যে কাজটা আমরা করতে পারিনি, সেটা করে দেখালেন ওপার বাংলার সাহসী তরুণ, পেশায় শিক্ষক প্রদীপ ঘোষ।
আরও আনন্দের ব্যাপার এই ছবির জন্য পঞ্চাশ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। আরও জানা গেল, ওদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’কে সারা দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আবশ্যিক প্রদর্শনীর আদেশ দিয়েছে। গত মাসে ঢাকায় ছবিটি মুক্তি পাবার পর প্রদীপ ঘোষ মশাই এখন তাঁর দলবল নিয়ে সমগ্র বাংলাদেশের নানা কলেজ কলেজে ছবিটির প্রদর্শনী করে বেড়াচ্ছেন। সেই বেড়ানোর সাম্প্রতিক স্টপ ছিল বাংলাদেশের বাঙালিদের সেকেন্ড হোম এই কলকাতা। গত ১৬ মার্চ সন্ধ্যায় কলকাতা প্রেস ক্লাবে ছবিটির প্রদর্শনী হয়। বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের আধিকারিকদের পাশাপাশি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রতিনিধিদল ও বিদ্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
এই ছবি দেখে ত্রুটি-বিচ্যুতি খোঁজার চাইতে বরং স্বাধীনতা ইতিহাসের এক দলিল হিসেবেই দেখা উচিত। হ্যাঁ, অবশ্যই প্রধান দু-তিনটি চরিত্রে শিল্পীদের সপ্রাণ অভিনয় নজর কাড়ে। বিশেষ করে মুখ্য ভূমিকায় নুসরত ইমরোজ তিশা (Nusrat Imroz Tisha) অনবদ্য। রামকৃষ্ণের চরিত্রে মনোজ প্রামাণিক যথেষ্ট ব্যক্তিত্ব নিয়ে অভিনয় করেছেন। মাস্টারদা সূর্য সেন হয়েছেন কামরুজ্জামান তাপু। চিত্রনাট্যে তাঁর প্রাপ্য সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন। ছবিতে দু’টি রবীন্দ্রসংগীতের ব্যবহার বেশ নাটকীয় মুহূর্তে। এমন একটি মূল্যবান দলিল দেখানোর জন্য শুধু প্রেস ক্লাব নয়, কলকাতার বাংলাদেশী দূতাবাস এবং পরিচালক প্রদীপ ঘোষকে আন্তরিক অভিনন্দন। একটাই প্রশ্ন, এই ছবির কি বৃহৎভাবে কোনও প্রদর্শনীর আয়োজন করা যায়? দু-দেশেরই সরকারেরই বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত।
সিনেমা – বীরকন্যা প্রীতিলতা
অভিনয়ে – নুসরত ইমরোজ তিশা, মনোজ প্রামাণিক, কামরুজ্জামান তাপু, ইন্দ্রাণী ঘটক, অমিত রঞ্জন দে প্রমুখ
পরিচালনায় – প্রদীপ ঘোষ