সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কিংবদন্তি অভিনেতার মৃত্যুতে রাজ্যের পুলিশ শ্রদ্ধা জানাচ্ছে, তা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু যে কারণে এই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, তা বেশ অভিনব। ফিরে এল ‘দিওয়ার’ ছবির স্মৃতি। যেখানে মুম্বই পুলিশের সৎ অফিসার হিসেবে অনন্য হয়ে উঠেছিলেন শশী কাপুর। রিল লাইফের সে চরিত্র লার্জার দ্যান লাইফ হয়ে গৌরবাণ্বিত করেছিল মুম্বই পুলিশকেই। অভিনেতার প্রয়াণে তাই কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে পুলিশ বিভাগও।
[ ম্যানারিজমে পারিবারিক আভিজাত্যকে ছাপিয়ে জাত অভিনেতা হয়েছিলেন শশী ]
‘মেরে পাস মা হ্যায়’- ভারতীয় সিনেমায় অমর হয়ে আছে এ সংলাপ। যে প্রেক্ষিতে এ সংলাপ এসেছিল সে দৃশ্যও ভারতীয় মূল্যবোধের এক দৃষ্টান্ত। দেখা হয়েছে দুই ভাইয়ের। একদিন ফুটপাথে শুয়ে যাদের দিন কেটেছে, সেখানেই দেখা। কিন্তু জীবনের দুই পথে এগিয়ে গিয়েছেন দু’জনে। একজন বেছে নিয়েছে অন্ধকার দুনিয়াকে। তার কাছে প্রচুর সম্পত্তি। অন্যদিকে একজন পুলিশ অফিসার হয়ে দেশ ও সমাজ রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে। সে পথে যদি তার ভাইও এসে দাঁড়ায়, তবে চোখে জল নিয়েও গুলি চালাতে দ্বিধা করে না সে। এই চরিত্রেই দেখা গিয়েছিল শশী কাপুরকে। উলটোদিকে ছিলেন অমিতাভ বচ্চন। সেদিন পুলিশ অফিসার হয়ে শশী কাপুর বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ভাল-মন্দের দ্বন্দের ভিতরে কোনও সমঝোতা নেই। যদি আসে, তবে তা মূল্যবোধের পরিপন্থী। ধনদৌলতের থেকেও তাই বড়, পাশে মাকে পাওয়া। ভাইয়ের জন্য তুলে রাখা আবেগের থেকেও বড়, ন্যায়বিচারের পথ। সেখানে ভাই যদি অপরাধী হয়, তবে তাকেও সাজা দেওয়া দস্তুর।
এ নেহাতই সিনেমা। ছায়াছবিতে তৈরি হওয়া মুহূর্ত। কিন্তু ভারতীয় সমাজে সিনেমার আবেদন অনেকখানি। রিল লাইফ অনেকটাই প্রভাবিত করে রিয়েল লাইফকে। আর ভারতীয় সিনেমায় পুলিশ আসলে রাষ্ট্র ব্যবস্থারই প্রতীক হয়ে ওঠে। যখনই রাষ্ট্রের প্রতি আম আদমির বিশ্বাস টলে যায়, তখনই পর্দায় লার্জার দ্যান লাইফ হয়ে ওঠেন কোনও পুলিশ অফিসার। যিনি দেখিয়ে দেন, আজও রাষ্ট্র ন্যায়ের পথেই চলছে। বিছিন্ন ব্যতিক্রম দিয়ে সামগ্রিকতার বিচার হয় না। শশী কাপুরের চরিত্রও অনেকটাই সে ভূমিকা পালন করেছিল। মুম্বই পুলিশের ভাবমূর্তিতে জনতার চোখে উজ্জ্বল করেছিল। একজন অভিনেতা হিসেবেই চরিত্র রূপায়ণে কোনও কসুর করেননি শশী। যে দৃঢ়তার সঙ্গে ভালর জয় তিনি পর্দায় তুলে ধরেছিলেন, তা অনুনকরণীয়। অমিতাভের নায়কোচিত দাপটকেও হারিয়ে দিয়েছিল, তার শান্ত নির্মোহ দৃষ্টি। ‘মেরে পাস মা হ্যায়’ সংলাপ আজও যেভাবে মনে রেখেছে ভারতবাসী, তাতে স্পষ্ট, এই মূল্যবোধের কথাটিকে কতটা আপন করে নিয়েছেন দেশবাসী।
[ বৃষ্টি ভেজা মুম্বই বিদায় জানাল প্রিয় শশীকে, শেষকৃত্যে শামিল বলিউড ]
বিখ্যাত সেই সংলাপ:
চলে গিয়েছেন শশী কাপুর। দীর্ঘ রোগভোগের পর জীবনযুদ্ধে হার মেনেছেন। কিন্তু মৃত্যুতে শিল্পীর পরাজয় হয় না। বরং নতুন যাত্রা শুরু হয়। সে যাত্রার শুরুতেই শ্রদ্ধার ফুল রাখল মুম্বই পুলিশ। অভিনেতার প্রতি এই শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেটিজেনরাও। একাধিক টুইটে মুম্বই পুলিশের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তাঁরা।