shono
Advertisement
Raj Chakraborty

অনির্বাণের ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’ দেখে রিভিউ দিলেন রাজ চক্রবর্তী, কেমন হল সিরিজ?

হইচইয়ে মুক্তি পেয়েছে এই সিরিজ।
Published By: Akash MisraPosted: 12:32 PM Nov 15, 2024Updated: 12:48 PM Nov 15, 2024

বেঁচে থাকার সেলিব্রেশন। ভালোবাসা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সময়-সমাজ, রাজনীতির ছাপ ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’-এ। সদ‌্য মুক্তিপ্রাপ্ত সিরিজ দেখে লিখছেন রাজ চক্রবর্তী

Advertisement

এ গল্প আমাদের সকলের চেনা। পাড়ার ওমুক বাড়ির এঁচোড়ে পাকা ছেলেটা সেজেছে রোমিও। আর ঠিক ওর পাশের বাড়ি, বা তার পাশের বাড়ির মেয়েটা জুলিয়েট। ওদের প্রেম, খুনসুটি, ঝগড়াঝঁাটি নিয়ে গোটা পাড়া সরগরম। এভাবেই গল্প বলেছে ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’।

সময় বয়ে যায় আর রানা-জাহানারা ফিরে ফিরে আসে আমাদের কাছে নতুন গল্পের মোড়কে। তাই এবার ওয়েব সিরিজ ফরম‌্যাটে শেক্সপিয়রের কালজয়ী ট্র‌্যাজেডি রোমিও-জুলিয়েট। আয়োজনে হইচই। নতুন পরিচালক অর্পণ গড়াই-এর চোখ আর লেখক দুর্বার শর্মার কলম ধরেছে ফুল-ফল মফস্‌সলের গল্প। শুরু থেকেই টানটান চিত্রনাট্য, অসাধারণ ক্যামেরা, এডিটিং-এর মুন্সিয়ানা, শব্দে-গানে হইহই করে বলে চলা গল্পের স্রোত আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল আমার ছবি বানানোর শুরুর দিনগুলোতে। ২০০৮-২০০৯ সাল। ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’, ‘প্রেম আমার’, ‘বোঝে না সে বোঝে না’।

প্রেম, বিরহ, বন্ধুত্ব, আনন্দ-উদযাপন, অভিমান, যন্ত্রণা। সরল সোজা মানুষের সহজ গল্প। যখন মানুষ হল ভরিয়ে বাংলা বই দেখতে যেত, যেখানে ফ্রেমে ধরা দিত জাতিভেদে মানুষের কো-এক্সিসটেন্স-এর গল্প। যেখানে সিনেমায় জীবন ছিল আর জীবনজুড়ে বাংলা সিনেমা। এই সিরিজ শুধু গল্প বলে না, একটা বেঁচে থাকাকে সেলিব্রেট করে। কলকাতার বাইরে একটা গোটা বাংলার যাপনকে তুলে ধরে। যে গল্পগুলো আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। মোট পাঁচটা এপিসোড। প্রত্যেকটা এপিসোডের নাম কোনও না কোনও আমার-আপনার চেনা বাংলা ছবি থেকেই নেওয়া। কখনও ‘বাতাসে গুনগুন’, ‘কখনও চ্যালেঞ্জ নিবি না শালা’ আবার কখনও ‘সেদিন দেখা হয়েছিল’। বুকের ভিতরে অনেকটা আবেগ জমে উঠেছিল।

গল্পে জাতিভেদ ভুলে তালমাবাসী দোলে-ইদে শরিক হয়। খুব সহজে হাসতে জানে, কাঁদতে জানে, রাগতে জানে, আবার রাগ ভুলে যেতেও জানে। ওরা ভালোবাসে আর ভালোবাসতে শেখায়। তবুও রানা-জাহানারার গল্পে ঢুকে পড়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সময়, সমাজ, রাজনীতি। রক্তাক্ত হয় প্রেম।

‘রানা’ চরিত্রে দেবদত্ত রাহা আর ‘জাহানারা’ চরিত্রে হিয়া রায় এককথায় দারুণ। কিন্তু গল্প সেখানেই থেমে থাকে না। পরিচালক-লেখক জুটি ক্যামেরার লেন্স একটু ঘুরিয়ে উল্টোদিকে ওদের ঘিরে থাকা গোটা সমাজের একটা আণুবীক্ষণিক ছবি তুলে ধরেছেন। এখানেই ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’ অন্যান্য রোমিও জুলিয়েটের থেকে আলাদা। সিরিজ দেখতে দেখতে মনে হয় যেন চাঁদের হাট বসেছে।

একদিকে যেমন রানার বাবার চরিত্রে কমলেশ্বর মুখোপাধ‌্যায়, জাহানারার বাবার চরিত্রে জয়দীপ মুখোপাধ‌্যায়ের মতো পরিচিত মুখেদের নতুন করে পাওয়া গেছে, তেমনই মুগ্ধ করেছে নতুন প্রজন্মের একঝাঁক অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। ওদের জন্য রইল আমার ভালোবাসা। তবে, শুরু থেকেই আমার মনে বিশেষ করে দাগ কেটেছে রানার দাদা-বউদির চরিত্রে অনুজয় চট্টোপাধ্যায় আর পায়েল দে-র অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি। প্রত্যেকটা চরিত্র গল্পের ভিতর লুকিয়ে থাকা আরও একটা গল্প বলে যায়।

ক্যামেরায় সৌমিক হালদার অসামান্য। তেমনই এডিটিং-এ নিজের ছাপ রেখেছেন সংলাপ ভৌমিক। অদীপ সিং মাঙ্কি আর অনিন্দিত-এর সাউন্ডস্কেপ তালমাকে করেছে প্রাণবন্ত। শুভদীপ গুহর সঙ্গে দেবরাজের গান রানা আর জাহানারার প্রেমকে সম্পৃক্ত করেছে। পরিচালক হিসাবে অর্পণের প্রথম কাজ। আমি আশা করব, ভবিষ্যতে আরও অনেক ছকভাঙা গল্প উপহার পাব ওর থেকে। চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ লেখক দুর্বার লোকাল দামে গ্লোবাল মানের গল্প বলেছেন। গল্পে রয়েছে চমকে দেওয়ার মতো টুইস্ট। সিরিজ দেখে দর্শক তাজা আনন্দ আবিষ্কার করবেন। এতটা শুনে নিশ্চয়ই উত্তেজিত লাগছে? তাহলে বলব, রিল‌্যাক্স! ফুল বডি রিল্যাক্স! কারণ মেহেরবান কাদারদান শেষে যার কথা না বললেই নয়, তালমার নিশ্বাস প্রশ্বাসে ছড়িয়ে আছে যার সৃজনশীলতা, আমাদের সবার প্রিয় অনির্বাণ ভট্টচার্য। একই সঙ্গে ‘মোস্তাক’ চরিত্রে অভিনয় এবং সিরিজের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টরের পদ সামলানো, চাট্টিখানি কথা নয়! অনির্বাণ সেখানে ফাটিয়ে দিয়েছে। নিজেকে বার বার ভেঙেচুরে নতুন কিছু আবিষ্কার করে চলেছে ও। ওর হাত ধরে আরও নতুন নতুন অর্পণের মতো পরিচালক, হিয়া, অনুজয়, রাজু, বুদ্ধদেব, উজানদের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীরা উঠে আসুক। বাংলা সিনেমার পাশে ‘বাংলা বই’ বেঁচে থাকুক। ভালোবাসা জারি থাকুক।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বাংলা সিনেমার পাশে ‘বাংলা বই’ বেঁচে থাকুক। ভালোবাসা জারি থাকুক।
  • ‘রানা’ চরিত্রে দেবদত্ত রাহা আর ‘জাহানারা’ চরিত্রে হিয়া রায় এককথায় দারুণ।
Advertisement