অভিরূপ দাস: বোলপুর থেকে আরও ২০ কিমি গেলে গড়গড়িয়া। তার পাশে বনক্ষতিপুর গ্রাম। এই গ্রামেই নিজের উদ্যোগে একটি গানের পাঠশালা খুলে ফেলেছেন গায়ক-অভিনেতা শিলাজিৎ মজুমদার। সেখানেই আয়োজন করেছেন সরস্বতী পুজোর (Saraswati Puja 2023)। অভিনব এই সরস্বতী বাঁ হাতি। পরনে কালো শাড়ি।
“শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা। শ্বেতাম্ভরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা।” সরস্বতীর চিরাচরিত মন্ত্র ধাক্কা খাবে অভিনব এই সরস্বতীকে দেখলে। বাগদেবী যেন কোনও সাঁওতাল রমণী। তিনি বাঁ হাতি। আজানুলম্বিত কুচকুচে কালো কেশ বিনুনি করা। গলায় সাঁওতালি ধাঁচের অলঙ্কার। মাথায় গোঁজা গোলাপ। কালো কাপড় জড়িয়েছেন মাথাতেও। বীণা ধরে রেখেছেন বাঁ হাতে।
[আরও পড়ুন: চণ্ডীপাঠ, ঢাকের তালে মাতল দিল্লির কর্তব্য পথ, সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে জমকালো বাংলার ট্যাবলো]
কিন্তু কেন এমন প্রতিমার কথা ভাবলেন শিলাজিৎ (Silajit Majumder)? গায়ক জানিয়েছেন, দেবতা মানেই ধবধবে শাড়ি, টুকটুকে ফরসা গায়ের রং। এমনটা তিনি মানেন না। কালো মেয়েও গুণে সরস্বতী হতে পারে। তা বোঝাতেই এমন পুজো। এই প্রতিমাই যেন নিঃশব্দে বলে দিচ্ছে, গুণে সরস্বতী হয়ে উঠতে কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায় না রূপ। গোটা নারী জাতিকে যেন এক সূত্রে বেঁধে দিয়েছে এই প্রতিমা। সরস্বতী প্রতিমার মতোই এই অভিনব পুজোর প্রসাদও চমকপ্রদ। প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হচ্ছে তালমিছড়ি।
গ্রামের কচিকাঁচারা ভিড় করেছে পুজোতে। সারা বছর তাদের গান শেখান শিলাজিৎ। গানের পাশাপাশি এই বাচ্চাদের ছোটো ছোটো নানা সাধ-আহ্লাদ পূরণের ব্যবস্থাও করে ‘নৌকা’। শিলাজিতের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এক সংস্থা। পুজোয় গানে-মজায়-হুল্লোড়ে গ্রামের পরিবেশটাই যেন বদলে দিয়েছেন শিলাজিৎ। গড়গড়িয়াতে গায়কের ঠাকুরদার বাড়ি। ফলে, এই লাল মাটির সঙ্গে শিকড়ের যোগও তাঁর আছে।