দীপঙ্কর মণ্ডল: উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক বেনিয়মের আশঙ্কা। দেখা গেল, কলকাতার কোনও কোনও স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের মনোনীত সদস্য হিসেবে পরীক্ষার মূল দায়িত্বে রয়েছেন স্কুলেরই শিক্ষক। যা রাজ্যের পরীক্ষা ব্যবস্থায় একেবারে নজিরবিহীন ঘটনা। শিক্ষা মহলের মতে, যেখানে প্রশ্ন ফাঁসের মতো কারচুপি রুখতে একাধিক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, সেখানে এই ব্যবস্থায় নিয়মভঙ্গের সুযোগ আরও বাড়বে।
সাধারণত বোর্ডের পরীক্ষার সময়ে কাউন্সিল নমিনি হিসেবে কোনও স্কুলের দায়িত্বে থাকেন অন্য স্কুলের শিক্ষক। এত বছর ধরে সেটাই চলে আসছে। তবে চলতি বছর পরীক্ষা চলাকালীন কলকাতার কয়েকটি স্কুলে দেখা গেল ভিন্ন ছবি। সংসদ মনোনীত সদস্য অর্থাৎ পরীক্ষাকেন্দ্রের সর্বেসর্বা হিসেবে কোনও স্কুলের পরীক্ষা দায়িত্বে রয়েছেন ওই স্কুলেরই শিক্ষক। পার্ক ইনস্টিটিউশন, উল্টোডাঙা ইউনাইটেড হাই স্কুল, বেলগাছিয়া মনোহর অ্যাকাডেমি, নারকেলডাঙা হাই স্কুল, বাগমারি মানিকতলা হাই স্কুলের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধরা পড়ল এই ছবি। কিন্তু এটি তো নিয়ম বহির্ভূত বিষয়। এ নিয়ে স্কুলের কাউন্সিল নমিনি তথা শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে, তাঁরা এড়িয়ে গিয়েছেন। মুখে কুলুপ এঁটেছেন কলকাতা জেলার উচ্চ মাধ্যমিকের কনভেনার খগেন রায়ও।
[আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্কের জেরে ফাঁকা অধিকাংশ আসন, বন্ধ হওয়ার মুখে কলকাতার সিনেমাহলগুলি]
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের এক আধিকারিক অবশ্য এই বিষয়টিতে কোনও বেনিয়ম দেখছেন না। তাঁর দাবি, মনোনীত সদস্য হিসেবে স্কুলের শিক্ষকই পরীক্ষার দায়িত্বে থাকায় কোনও অন্যায় নেই। কারণ, এক্ষেত্রে কয়েকটি সুবিধা রয়েছে। স্কুলের কোথায় কী রয়েছে, যেমন জল খাওয়ার জায়গা, শৌচাগার – এসব বাইরের পরীক্ষার্থীদের দেখিয়ে দিতে পারবেন ওই শিক্ষক। যদিও শিক্ষামহলের একাংশের মতে, এটি কুযুক্তি ছাড়া কিছুই নয়। শুধুমাত্র বাইরের পরীক্ষার্থীদের এটুকু সাহায্য করার জন্য মোটেই স্কুল শিক্ষককেই পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়ার দরকার পড়ে না।
[আরও পড়ুন: পিছিয়ে যাচ্ছে আই লিগ ডার্বি! নবান্নে ক্লাবকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী]
তাঁদের আরও আশঙ্কা, এই নজিরবিহীন ঘটনার ফলে একাধিক নিয়মভঙ্গ হতে পারে। নিজের স্কুলেই পরীক্ষার দায়িত্ব পাওয়ার ফলে তাঁর কিছুটা গাছাড়া ভাব দেখা দিতে পারে। প্রশ্ন ফাঁস কিংবা টোকাটুকি আটকানোর জন্য যতটা কড়া হওয়া দরকার, ততটা নাও হতে পারেন। হয়ত পরীক্ষার হলে যাওয়ার প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা হয়ে গেল। পরীক্ষা শেষের পর নির্দিষ্ট সময়ে খাতা জমা নেওয়ার ব্যাপারেও ততটা কড়া মনোভাব না থাকতে পারে তাঁর। প্রতিটি নিয়ম মেনে চলার ব্যাপার সামগ্রিকভাবে ব্যাহত হতে পারে এই কাউন্সিল নমিনি হিসেবে স্কুলেরই শিক্ষক মূল পরীক্ষকের দায়িত্বে থাকলে। যা ভাবিয়ে তুলছে শিক্ষামহলকে।
The post সংসদ মনোনীত পরীক্ষকের দায়িত্বে স্কুলেরই শিক্ষক! উচ্চ মাধ্যমিকে নজিরবিহীন বেনিয়ম appeared first on Sangbad Pratidin.