বড়দিনে আসছে নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি ‘হামি টু’। ছবিতে বিশেষ চরিত্রে দেখা যাবে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্য়ায়কে। ছবি নিয়ে বিশেষ আড্ডায় টলিউডের বুম্বাদা। শুনলেন শম্পালী মৌলিক
‘প্রাক্তন’-এর পর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের সঙ্গে ‘হামি টু’ আপনার দ্বিতীয় কাজ। কেমন লাগল?
প্রসেনজিৎ: এখানে আমি বিশেষ একটা চরিত্রে। শিবু-নন্দিতাদির সবচেয়ে যেটা ভাল লাগে দু’জনে দু’দিকটা দেখে শুটিংয়ে। শিবু পুরো ফ্লোর ম্যানেজ করে, আর নন্দিতাদি সেই সময় অন্য দিকটা দেখে। শিবু আবার অভিনয়-ও করে। যেমন, ‘হামি টু’-তে করেছে। নন্দিতাদি তখন ফ্লোরে শেষ ফিনিশিং টাচ দেয়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পুরোটা দেখে, শিবু সেটাকে মান্য করে। ওদের দু’জনের এই কম্বিনেশন, পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস আর সম্মান, এতেই বোধহয় ফাইনালি ওদের যেকোনও কাজে ওয়ার্ক করে।
আপনি বিশেষ চরিত্রে। রাজি হওয়ার কারণ কী?
প্রসেনজিৎ: আমার চরিত্রটা সান্তাক্লজের মতো (হাসি)। ঘোষণার সময় আমি ওই সাজেই গিয়েছিলাম। কথা দিয়েছিলাম করব। যেমন কিছুদিন আগেই উইদাউট এনি প্রফেশনাল কমিটমেন্ট, আমি বাচ্চাদের নিয়ে তৈরি ছবি ‘দোস্তজী’ প্রেজেন্ট করলাম। ‘হামি’-র একটা অদ্ভুত রিকল ভ্যালু আছে। শিবু বলল, আর আমি বাচ্চাদের কারণেই রাজি হয়েছি। সেখানে আমি যদি কিছু অ্যাড করি, ভালই তো বাচ্চাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেলাম। এক সময় প্যানডেমিক এসে গেল, বিরতির পর আবার শুরু হল। তখন মুম্বইয়ে শুটিংয়ের চাপ ছিল, তবু ম্যানেজ করে আমরা করে নিই।
এই ছবিতে আপনি বাচ্চাদের রিয়েলিটি শোয়ের সঞ্চালক। আপনি নিজেও একসময় শো হোস্ট করেছেন। তার সঙ্গে এটার কোনও যোগ?
প্রসেনজিৎ: আমি খুব গ্ল্যামারাস একটি চরিত্রে। কেমন চরিত্রে সারপ্রাইজ থাক। ছবিতে প্রচুর মেসেজ রয়েছে। আমি বাচ্চাদের সঙ্গে কোনও রিয়েলিটি শো না করলেও, টিভি শো করেছি। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে। রিয়েলিটি শোয়ের নেপথ্যেও অনেক ঘটনা থাকে। এই চোখের আড়ালে থাকা ঘটনা অনেকটা আছে ‘হামি টু’-তে। সেইটা আমার খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছে।
বাচ্চাদের রিয়েলিটি শোগুলো নিয়ে আপনার কী মতামত?
প্রসেনজিৎ: এখন বাচ্চারা তো পারফর্ম করছে। এর দুটো দিকই আছে। একটা বাচ্চা যদি সিনেমায় অভিনয় করে, তখনও সে কিছুটা সময় হারায়। আমি নিজেও চাইল্ড অ্যাক্টর হিসাবে কাজ করেছি। ‘ছোট্ট জিজ্ঞসা’ খুব সফল ছবি ছিল। তারপর শক্তি সামন্ত, রাজ কাপুর এবং আরও অনেকে আমাকে চেয়েছিলেন ছবিতে। আমার বাড়ি থেকে বিশেষ করে মা আমাকে করতে দেননি। এটাই তো আশীর্বাদ। তখন না আটকালে আজকের আমি হতাম না। একটা বাচ্চা কতটা করবে, তার কিছুটা দায়িত্ব কিন্তু অভিভাবকদের থাকে। যে কখন থামবে আর কখন আবার বড় হয়ে প্রস্তুত হয়ে ফিরবে। খেলাধুলার ক্ষেত্রে অনুশীলনের দরকার হয় শুরু থেকেই। অভিনয়ের ক্ষেত্রেও তাই। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে শরীর-মনের ক্ষতি হলে মুশকিল। সেটা কিন্তু বাবা-মা-ই একমাত্র বুঝতে পারবেন।
২৩ ডিসেম্বর ‘হামি টু’ রিলিজের দিনই ‘হত্যাপুরী’, ‘প্রজাপতি’ আসবে। সেখানে ‘হামি টু’ নিয়ে কতটা আশাবাদী?
প্রসেনজিৎ: ‘হামি টু’ তার মতো চলবেই। আমি যদি ছবিতে না থাকতাম তাও। মিশুকের (ছেলে) দৌলতে আমি প্রায় পঞ্চাশ বার ‘হামি’ দেখেছি। ও যতবার ছুটিতে বাড়ি আসত। ‘হামি’ দেখত। ও তো বাইরেই বড় হয়েছে। আমি আর অর্পিতা বিরক্ত হয়ে যেতাম, টিভি রুমে দেখতাম সারাক্ষণ ‘হামি’ চলছে। আমাকেও ওর জন্য দেখতে হয়েছে (হাসি)। ও কিন্তু বাংলা ছবি সম্বন্ধে অত জানে না। কিন্তু নেশা হয়ে গিয়েছিল মিশুকের। আমার মনে হয় তিনটে বাংলা ছবিই ভাল চলবে। তিনটের আলাদা আবেদন। আর হ্যাঁ, ‘সার্কাস’ও আছে। তবুও ‘হামি টু’ দেখবে দর্শক।
দু’টি বাচ্চাকে নিয়ে তৈরি ছবি প্রসূন চট্টোপাধ্যায়ের ‘দোস্তজী’। যার নিবেদক আপনি। ২৫ দিন পেরিয়ে গেল। চতুর্থ সপ্তাহতেও ১৮ টি হাউসফুল (সোমবার পর্যন্ত)। এতটা ভেবেছিলেন?
প্রসেনজিৎ: আমি খুব খুশি। তবে এতটা ভাবিনি। আমি মনে মনে ভেবেছিলাম ছবিটা যদি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারি, এটা আরেকটা ‘মনের মানুষ’ হতে পারে। মানে অন্য লেভেলে যাবে। মাল্টিপ্লেক্সের মানুষ ভাল ছবি দেখেন কিন্তু তার বাইরেও দর্শক আছে। আমি সবচেয়ে বেশি খুশি, শহরতলিতে ‘দোস্তজী’ রীতিমতো ভাইরাল হওয়ায়।
এর কাছাকাছি সময়ের আপনার প্রযোজিত ছবি ‘প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা’ রিলিজ করেছিল। কতটা খুশি তার রেজাল্টে?
প্রসেনজিৎ: আমি যতটা আশা করেছিলাম ততটা হয়নি। তবে আমি যা ফিডব্যাক পাচ্ছি কলকাতার বাইরে ভাল চলেছে। ফুটবল বিশ্বকাপ, প্রচুর বিয়ে বাড়ি এবং ‘বুম্বাদা তো নেই ছবিতে?’– এই তিনটে ফ্যাক্টর ছবিটার বিপক্ষে গেছে। সার্ভে থেকে আমরা বুঝেছি। এই ছবিটা আমরা ফেস্টিভ ওরিয়েন্টেড সময়ে রিলিজ করলে একটু বেটার হত। তবে ভাল রিভিউস পেয়েছে ছবিটা। এই ধরনের ছবি নিয়ে প্রযোজক হিসাবে এক্সপেরিমেন্ট করে যাব। ‘তিন ইয়ারি কথা’ করার সাহস কি কেউ দেখিয়েছিল? কিংবা ‘নিরন্তর’? আমার যতটুকু ক্ষমতা তাই নিয়েই আমি করে যাব।
এরপর কি ‘সাজঘর’-এর শুটিং শুরু?
প্রসেনজিৎ: হ্যাঁ, ১১-১২ টা চরিত্র ছবিতে। পিরিয়ড ড্রামা। আমি নাট্যগুরুর চরিত্রে। আমার বিপরীতে ঐন্দ্রিলা। এছাড়া অঙ্কুশ রয়েছে ডায়নামিক একটা চরিত্রে। ১৫ ডিসেম্বর শুটিং শুরু।
আর ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে আপনার ৫০ তম ছবি?
প্রসেনজিৎ: প্রস্তুতি চলছে। খুব শিগগির ঘোষণা করব।
আর ‘কাবেরী অন্তর্ধান’ ২০ জানুয়ারি রিলিজ?
প্রসেনজিৎ: হ্যাঁ, নতুন বছরে রিলিজ। ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’-র পরে আবার কৌশিকের (গঙ্গোপাধ্যায়) সঙ্গে আসছি। শ্রাবন্তীও আছে।
আর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের কী প্ল্যান?
প্রসেনজিৎ: এবারে খুব মিস করব
কারণ মুর্শিদাবাদে শুটিং
চলবে। তবে ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনে যাব।