shono
Advertisement

‘এমন ছিপছিপে ছেলে এমন মোটা মেয়ে বিয়ে করল!’, শুনতে হয়েছিল আবিরকেও

'ফাটাফাটি' ছবি মুক্তির আগে খোলামেলা আড্ডায় আবির চট্টোপাধ্যায়।
Posted: 03:45 PM May 05, 2023Updated: 03:57 PM May 05, 2023

‘ফাটাফাটি’ ছবির ‘বাচস্পতি’র মতোই বাস্তবেও স্বামী হিসাবে স্ত্রীর সৌন্দর্যের প‌্যারামিটার নিয়ে কটূক্তি শুনেছেন নিত‌্যদিন আবির চট্টোপাধ‌্যায়। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে শম্পালী মৌলিক

Advertisement

‘উইন্ডোজ’-এর সঙ্গে ‘ফাটাফাটি’ আপনার দ্বিতীয় কাজ ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’-র পর।
আবির: অ‌্যাকচুয়ালি ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’-তে অতিথি শিল্পী হিসাবে ছিলাম, এটায় অতিথি নই। এই হাউসে পূর্ণদৈর্ঘ্যের চরিত্রে, এটাই প্রথম কাজ।
তো কীরকম লাগছে?
আবির: অবশ‌্যই ‘ফাটাফাটি’ লাগছে।

কী কী কারণ?
আবির: প্রথম কারণ হচ্ছে, অত‌্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে ছবিটা। একটা ছবির কারণে সবকিছু পাল্টে যাবে, তা মনে করি না। কিন্তু এই বডি শেমিংয়ের বিরুদ্ধ বিষয়টা বলার ছিল। এবং সেটা যদি বিনোদনমূলকভাবে বলা যায়, তাহলে ভাল। এটা এমন বিষয়, যা নিয়ে অজ্ঞাতেই হয়তো আমরা অনেক কথা বলে ফেলি বা করে ফেলি, জানিও না হয়তো যে সেটা করা উচিত হচ্ছে না। আর এটা দীর্ঘদিনের অভ‌্যাসের ফল। এই বিষয়গুলো তো একটু গম্ভীর বিষয়, শুনতে ভাল লাগে তখনই যদি হালকাভাবে, গল্পের মাধ‌্যমে, ছবির মাধ‌্যমে তুলে ধরা যায়। তাহলে মনে হয় না প্রিচ করা হচ্ছে। এখনও আমরা বিশ্বাস করি, সিনেমা, থিয়েটার, গান, নাচের মাধ‌্যমে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়।

এই আধুনিক সমাজেও আমাদের প্রত্যেককে রোগা-মোটা নিয়ে কথা শুনতে হয়।
আবির: সেই জন‌্যই মনে হয় আমাদের এই সিনেমাটা প্রয়োজনীয়। প্রথম যখন স্ক্রিপ্ট শুনি, একটা কোনও বিষয় ‘প্ল‌্যাকার্ড’ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মনে হয়নি। সিনেমার মতো করে, সংবেদনশীল গল্প বলা হয়েছে। যে মানুষগুলোর গল্প, তারা আমাদের খুব চেনাজানা। বা আমাদেরই গল্প। প্রাথমিকভাবে সেই কারণেই ভাল লেগেছিল।

আপনার চরিত্রের নাম ‘বাচস্পতি ভাদুড়ি’, ডাকনাম ‘বেচুদা’। ভদ্র, যত্নবান স্বামী। বাস্তবেও আপনি ‘মিস্টার ডিপেনডেবল’। নিজের সঙ্গে কতটা কানেক্ট করতে পেরেছেন?
আবির: ‘ফাটাফাটি’ ছবিটা আমি ছাড়া কে করবে! ফর অবভিয়াস রিজনস (হাসি)। আমি তো প্রতিদিন বেচুদার মতোই এই প্রতিক্রিয়া পেয়ে এসেছি। ওবেসিটি, সৌন্দর্যের প‌্যারামিটার এসব নিয়ে কটূক্তি রোজই শুনছি স্বামী হিসাবে। বাচস্পতি স্বামীদের মানটা উঁচুতে নিয়ে গেছে, এটা আমি অরিত্রকে বলেওছি, টু গুড টু বি ট্রু (হাসি)। খুব ভাল লাগবে, ছবি দেখার পরে যদি মহিলারা বলেন, বাচস্পতির মতো যদি একজন স্বামী থাকত! আমি বাচস্পতির মতো হতে চাই, কিন্তু পারব না।

আপনার স্ত্রী নন্দিনী ট্রেলার দেখেছেন?
আবির: দেখেছে, স্ক্রিপ্টটাও পড়েছে। আমার মনে হয়, এই ছবি নিয়ে আমার থেকে বেশি বলার আছে নন্দিনীর। এই বিষয়টা যেমন, নন্দিনী অনেক দিন ধরে ফেস করেছে এবং এখনও করছে। একটা ছবি দিয়ে কিছু পাল্টানো যায় না। কিন্তু বলা শুরু তো হল।

 

এতটা কাছ থেকে দেখেছেন বডি শেমিংয়ের বিষয়টা?
আবির: হ্য়াঁ, এটা বলতে আমার কোনও লজ্জা নেই। যাঁরা অকথা-কুকথা বলছেন, লজ্জা তাঁদের পাওয়ার কথা। যাঁরা ব‌্যক্তিগত ভাবে আমাদের চেনেন না, বা যাঁরা চেনেন, একটু দূরের আত্মীয়কেও কুকথায় অংশ নিতে দেখেছি। একটা সময় আমরা আন্ডার কনফিডেন্ট ছিলাম, কিন্তু সময় এবং অভিজ্ঞতার সঙ্গে আমরা এটা পেরিয়ে যেতে শিখেছি। সবার পক্ষে সম্ভব নয়, আমরা জানি। অপমানের স্তর পেরিয়ে যেতে হয়, যা সুখকর অভিজ্ঞতা নয়। আমাকে ডিরেক্টলি কেউ বলেননি, কিন্তু কানাঘুষোয় তো শুনেছি। নন্দিনীকে একুট বেশি শুনতে হয়েছে। যে এমন ছিপছিপে ছেলে এমন মোটা বিয়ে করল! সোশ‌্যাল মিডিয়া খুললে এখনও কমেন্টে দেখতে পাবেন, এইট্টি পার্সেন্ট এই ধরনের কমেন্ট। অনেকে জিজ্ঞেস করেন, কীভাবে রিঅ‌্যাক্ট করো এই ধরনের কমেন্টে? একটা বয়স অবধি রিঅ‌্যাক্ট করতাম। পরে দেখলাম, এগুলো প্রতিক্রিয়া পাওয়ার যোগ‌্যতা রাখে না। আমি তঁাদের সুস্থতা কামনা করি। বাচস্পতির কথায় ফিরি, আমার স্ক্রিপ্টটা পড়ে ভাল লেগেছিল এই কারণেই, বাচস্পতির কখনও মনে হয়নি, সে ফেভার করছে। সে মন থেকে বউ ফুল্লরাকে (ঋতাভরী) ভালবাসে। স্ত্রী যেমন, তেমন ভাবেই ভালবাসে। বাচস্পতি মনে করে না সে মহামানব। এই জন‌্যই আমার ছবিটা করতে সবচেয়ে ভাল লেগেছে। বউয়ের পাশে দঁাড়ানোকে কর্তব‌্য মনে করে না, স্বাভাবিক বিষয় মনে করে।


আপনার আর নন্দিনীর দাম্পত‌্য প্রায় ১৫ বছরের। কোনও গসিপ ছাড়া এমন জমাট দাম্পত‌্য কীভাবে টিকিয়ে রাখলেন?
আবির: আমার মনে হয়, আমি আমার খুব কাছের বন্ধুকে বিয়ে করেছিলাম, নন্দিনীও তাই। সৌভাগ‌্যবশত, আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বটা রয়ে গেছে। শি ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড। সেইটা আমাদের হেল্প করে। আমাদের আলাপ পোস্ট গ্র‌্যাজুয়েশনের সময়। নন্দিনী ২১, আমি ২২ তখন। বেড়ে ওঠার সময়টা আমরা একসঙ্গে কাটিয়েছি। তারপরে জীবন-জীবিকার খোঁজ, আমি চাকরি ছেড়ে ফিল্মে এলাম, এই জগতের ওঠাপড়া আমরা একসঙ্গে সব শেয়ার করতে করতে বড় হয়েছি। আমাদের ভাবনাচিন্তা, মরাল্‌স একসঙ্গে ডেভলপ করেছে। তাই মধ‌্যবয়সেও বন্ধু আমরা। তবে প্রচুর ঝগড়াঝাঁটিও হয় আমাদের (হাসি)।

[আরও পড়ুন: মুসলিম নয়, নিশানায় সন্ত্রাসবাদীরা, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে মুখ খুললেন বাঙালি পরিচালক ]

সিনেমায় প্রথমবার ঋতাভরীর সঙ্গে কাজ করলেন ‘ফাটাফাটি’-তে। ভারী চেহারার গৃহবধূ যে প্লাস সাইজের মডেল হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কেমন লেগেছে ঋতাভরীকে?
আবির: আগে যেটা বললাম, এই লড়াই তো আমি প্রত‌্যক্ষ করি জীবনে প্রতিনিয়ত। তাই আমি স্ট্রাগলটা জানি। ঋতাভরীর ক্ষেত্রে বলতে পারি, এর আগে আমরা একসঙ্গে প্রচুর বিজ্ঞাপন করেছি। ২০২১-এর পুজোয় আমরা একটা বিজ্ঞাপন শুট করেছিলাম, তখন কোভিড চলছে। তখন অপারেশনের পর সুস্থতার পথে, শি ওয়াজ অলরেডি প্লাস সাইজ, ঋতাভরীকে দেখে আমাদের শুটিং ইউনিট থমকে গিয়েছিল। কারণ, অপরিচিত ঋতাকে দেখছে সবাই। তারপর শুটিং হয়। তারপর বিজ্ঞাপনটা সামনে এলে প্রথম এক-দু’দিন টিপ্পনি-ট্রোল চলে, তারপরে দেখলাম সি অফ পজিটিভ মেসেজেস! ওটা অভাবনীয় ছিল। সকলে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিল বিজ্ঞাপনটা দেখে। আমরা ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। এই লড়াইটা কিন্তু কোথাও গিয়ে ঋতাভরীর ব‌্যক্তিগত জীবনের লড়াই। সেজন‌্য ওকে শাবাশি দেব, কুর্নিশ জানাব। এই লড়াইটা এত মানুষের সঙ্গে শেয়ার করা, প্রচণ্ড সাহসের কাজ। এটা অনেক মানুষকে মনের জোর জোগাবে।
আপনি তো উইন্ডোজ-এর ঘরের লোক হয়ে উঠছেন, ক্রমশ। ওঁদের পরের ছবি ‘রক্তবীজ’-এও আছেন।
আবির: (হাসি) প্রথমে জানালা খুলেছিল। ‘রক্তবীজ’ পুজোয় আসবে আশা করি। তবে ‘রক্তবীজ’ আর ‘ফাটাফাটি’-তে আমার করা চরিত্র দুটোর কোনও মিল নেই। সে জন‌্য ধন‌্যবাদ নন্দিতাদি-শিবুদাকে। একেবারে আলাদা ধরনের চরিত্র দিচ্ছেন আমাকে। বাড়ির বড়দের মতো সমস্ত দায়িত্ব নেন ওঁরা।

গোয়েন্দা ছবি ছাড়া আপনার হিট নেই, নিন্দুকে বলে। সেই দুর্নাম কি ঘুচবে?
আবির: আমি কোনও দুর্নাম ঘোচাতে চাই না, কিছু দুর্নামের কোনও ভিত্তি নেই। আগে রাগ করতাম। এখন করি না। যঁারা যা বলার বলবেন, আমি নিজের কাজ করি। যাঁরা সিরিয়াসলি ছবি দেখেন, তাঁদেরই আমি গুরুত্ব দিই।

বাংলা বাণিজ্যিক ছবির বক্স অফিস খুব একটা আশাপ্রদ নয়। এ বছরে এখনও পর্যন্ত শুধু একেন-ফিল্ম হিট। চিন্তা হয়?
আবির: এ বছরের হিসাবে শুধু ‘একেন-ফিল্ম’ হিট ঠিকই। তবে ‘প্রজাপতি’ কিন্তু বছরের শেষে রিলিজ করেছিল। তার নব্বই শতাংশ ব‌্যবসা এ বছরেই হয়েছিল। কিছু জায়গায় দেখেছি ‘অনেকদিন পর হিট’ এমনটা লেখা হয়েছে। আমার মনে হয়, যাঁরা লিখেছেন তাঁদের কি শর্ট টার্ম মেমরি লস হয়েছে? না কি তাঁরা নিজেদেরই কন্ট্রাডিক্ট করছেন? বলতে পারি, ২০২২-এর মতো আশাব‌্যঞ্জক বছর কম এসেছিল, পোস্ট-কোভিড। কারণ, ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’, ‘প্রজাপতি’ ডাবল ফিগার ক্রস করেছিল। ‘বেলাশুরু’, ‘অপরাজিত’, ‘বল্লভপুরের রূপকথা’, ‘দোস্তজী’ ভাল ব‌্যবসা করেছে। এমনকী ‘কিশমিশ’, ‘ব্যোমকেশ হত‌্যামঞ্চ’ ভাল করেছে। ‘ঝিল্লি’-র মতো ছবিও হয়েছে। আমি বলছি না যে কমপ্লেসেন্ট হয়ে যাব, খুঁতখুঁতানি থাকবেই। এবং নিশ্চয়ই ২০২৩-এ আরও বেশি হিট হলে খুশি হব।

[আরও পড়ুন: ‘মোদি-শাহ সুরক্ষা দিচ্ছেন, ভয়ের কিছু নেই’, প্রাণনাশের হুমকিতে সলমনকে খোঁচা কঙ্গনার! ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement