সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ তৈরির নেপথ্যের গল্প নিয়ে ছবি তৈরি করেছেন এপার বাংলার পরিচালক অনীক দত্ত। ঠিক সেই সময়ে ওপার বাংলাতেও সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে ছবি মুক্তির অপেক্ষায়। সেই ছবির পরিচালক প্রসূন রহমান। ছবির নাম ‘প্রিয় সত্যজিৎ’। ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে এই ছবির পোস্টার। ছবি মুক্তির আগে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় পরিচালক প্রসূন। শুনলেন আকাশ মিশ্র।
আপনার ছবিতে কীভাবে আসবেন সত্যজিৎ রায়? এটি কি সত্যজিৎ রায়ের বায়োপিক?
প্রসূন রহমান: না, এটি বায়োপিক নয়। ট্রিবিউট ফিল্ম। এই ছবি আসলে সত্যজিৎ রায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত দুই চলচ্চিত্র নির্মাতার গল্প। সত্যজিৎ রায়ের আদি পুরুষের ভিটে ভ্রমণ কালে দুই ভিন্ন প্রজন্মের নির্মাতার ভাবনা বিনিময়ের গল্প উঠে আসবে এই ছবিতে।
সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে বহু তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে। আপনার ছবি সেগুলো থেকে কতটা আলাদা?
প্রসূন রহমান: সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে বা তার উপর নির্মিত হওয়া বেশির ভাগ তথ্যচিত্রই দেখার সুযোগ হয়েছে। তবে কোনও কাহিনি চিত্রের কথা জানা নেই।
আমার ছবি ‘প্রিয় সত্যজিৎ’ ব্যক্তি সত্যজিৎ রায়ের জীবন নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র নয়। এটি পরবর্তী প্রজন্মের পরিচালকদের উপর সত্যজিৎ রায়ের প্রভাব ও তাঁদের দিক থেকে অগ্রজ পরিচালকের প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা জানানোর গল্প।
এই ছবির চিত্রনাট্য লেখার সময় এপার বাংলার কোনও পরিচালক বা শিল্পীর সাহায্য নিয়েছিলেন?
প্রসূন রহমান: এটি কোনও গবেষণা নির্ভর চলচ্চিত্র নয় বলে সেই প্রয়োজন পড়েনি। আমাদের যার যার ভালবাসা প্রকাশের ভঙ্গিটা নিজের মতো থাকাই ভাল।
সত্যজিৎ রায়ের ছেলে সন্দীপ রায়ের সঙ্গে কখনও এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে?
প্রসূন রহমান: আমার সেরকম আলোচনার সুযোগ হয়নি। তবে রায়বাবুর জন্মশতবর্ষে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলিটুকুর খবর উনি জানবেন নিশ্চয়ই।
আপনার ছবিতে তিন প্রজন্মের তিন পরিচালক উঠে আসবে। যার মধ্যে একজন হলেন সত্যজিৎ। কীভাবে গল্প এগোবে?
প্রসূন রহমান: এই প্রজন্মের একজন প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা অপরাজিতা হক প্রবীণ নির্মাতা আসিফ মাহমুদকে নিয়ে বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলায় অবস্থিত সত্যজিৎ রায়ের আদি পুরুষের ভিটে দেখতে যান। দিনব্যাপী সেই ভ্রমণের সময়ে নবীন নির্মাতার ক্যামেরায় আসিফ মাহমুদ বলে যান বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’র অপু থেকে সত্যজিৎ রায়ের অপু’র সঙ্গে পরিচিত হওয়া’র গল্প। ক্রমে আসিফ মাহমুদের নিজের নির্মাতা হয়ে ওঠার গল্প। রায়বাবুর ‘অপু ট্রিলজি’র সঙ্গে তাঁর নিজের জীবনের ধারাক্রম ও বেড়ে ওঠার গল্প। তবে তাদের আলোচনা শুধুমাত্র সত্যজিৎ রায়ে সীমাবদ্ধ থাকে না। আলোচনায় আসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সারদারঞ্জন রায়, সুকুমার রায়, হীরালাল সেন, অমর্ত্য সেন হয়ে ফাদার গাস্তন রবের্জসহ আরও অনেকেই। চলচ্চিত্রে প্রবীণ নির্মাতার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন-আহমেদ রুবেল। আর নবীন নির্মাতার ভূমিকায়- মৌটুসী বিশ্বাস।
সত্যজিৎ রায়ের কোন ছবি আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে?
প্রসূন রহমান: শুধু একটা ছবির কথা বলা একটু কঠিন। তবু বলতে গেলে, ‘অপু ট্রিলজি’র কথাই বলতে হয়। ‘অপু’ নামের একটা এফেক্ট আলাদা ভাবে কাজ করে বলে মনে হয়।
আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন কলকাতার পরিচালক অনীক দত্ত ‘পথের পাঁচালী’ তৈরির নেপথ্যের গল্প নিয়ে একটি ছবি তৈরি করেছেন। তাঁর সঙ্গে কখনও যোগাযোগ হয়েছে?
প্রসূন রহমান: হ্যাঁ, শুনেছি এবং ছবিটি দেখবার অপেক্ষায় আছি। তার সঙ্গে কখনও যোগাযোগ হয়নি। সুযোগ হবে নিশ্চয়ই।
ঋত্বিক ঘটকের ছবিতে বার বার এসেছে দেশভাগের যন্ত্রণা। এমনকী, তপন সিনহা, মৃণাল সেন, রাজেন তরফদারও ছিলেন। শুধু সত্যজিৎ কেন? বক্স অফিসের কথা ভেবে?
প্রসূন রহমান: ‘প্রিয় সত্যজিৎ’ সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে ভালবাসা জানানোর কথা বলে। উদযাপনের কথা বলে। চলচ্চিত্র, সাহিত্য, সংগীত, সৃজনশীলতার কথা বলে। সত্যজিৎ রায়কে লেখা বাংলাদেশের এক নির্মাতার না পাঠান চিঠির কথা বলে। দেশভাগের কথা বলার সুযোগ পায় না। মহামারী পেরিয়ে, সময়টা উদযাপনের হোক, সেই চেষ্টা করে এই ছবি। আর সত্যি বলতে, ভালবাসা কিংবা শ্রদ্ধাঞ্জলি কখনও বক্স অফিসের চিন্তা মাথায় রেখে প্রকাশ করা যায় না। ছবিটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অর্থে, স্বল্প-বাজেটে নির্মিত। জন্মশতবর্ষের কথা সামনে রেখে পূর্বসূরি নির্মাতার প্রতি বর্তমানের বিনীত শ্রদ্ধাঞ্জলি।