করোনা (Coronavirus) কালে মুখোশের গুরুত্ব বেড়েছে। তবে মানুষের মুখে অদৃশ্য মুখোশের আবরণ তার আগে থেকেও রয়েছে। যার পরতে পরতে রয়েছে রহস্য। সেই রহস্য নিয়েই তৈরি বিরসা দাশগুপ্ত পরিচালিত ‘মুখোশ’ (Mukhosh Film)। ১৯ আগস্ট মুক্তি পাবে ছবিটি। তার আগে নানা কথা জানালেন পরিচালক। শুনলেন সুপর্ণা মজুমদার।
১) এখন তো সবই মুখোশ সর্বস্ব। নিজে কতক্ষণ মাস্ক পরে থাকো?
যতক্ষণ বাড়ির বাইরে থাকি, মাস্ক পরেই থাকি। শুটিং থাকলে, বাজার করতে গেলে। সংসারের কাজ থেকে সিনেমা- সব ক্ষেত্রেই মাস্ক মুখে থাকে। যদিও আমার ভ্যাকসিনের দু’টো ডোজ হয়ে গিয়েছে।
২) তোমার সিনেমার চরিত্ররা কে কোন মুখোশের আড়ালে রয়েছে?
ভেড়ার মুখোশ। সেটাই একমাত্র মুখোশ। এর মুখোশের আড়ালে কে রয়েছে? সেটাই তো আসল রহস্য। যা দর্শকরা জানতে পারবেন সিনেমা হলে গিয়ে।
৩) এ তো গেল চরিত্রদের কথা! দুই অনির্বাণ, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, পায়েল দে – ব্যক্তি হিসেবে এঁদের কার কোনও মুখোশ আছে?
আরও একজন আছেন কিন্তু! কৌশিক সেন। কৌশিকদা এই ছবির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
৪) হ্যাঁ, অবশ্যই কৌশিকদা। কোন মুখোশ এঁরা পরে থাকেন?
অনির্বাণ ভট্টাচার্য – যখন যে চরিত্র, তখন সেই চরিত্রের মুখোশ পরে থাকে। তাতেই একাত্ম হয়ে যায়।
অনির্বাণ চক্রবর্তী – প্রথম কাজ, অত্যন্ত ভাল অভিনেতা। তাঁকে আমরাই সিরিয়াস মানুষের মুখোশ পরিয়েছি।
চান্দ্রেয়ী ঘোষ – আমার ছোটবেলার বন্ধু। এই বন্ধুত্বের মুখোশ খুলে অভিনেত্রীর মুখোশ পরতে বলেছি।
পায়েল দে – ছোটপর্দায় খুব জনপ্রিয়। সেই মুখোশ খুলে বড়পর্দায় কিছু করে দেখানোর মানসিকতা।
কৌশিক সেন – ও বাব্বা! সবার বস। কৌশিকদাকে প্রথম দেখেছিলাম আমার বাবার টেলিভিশন প্রজেক্ট ‘কালপুরুষ’-এ কাজ করতে। তখন কৌশিকদার ১৭-১৮ বছর বয়স হবে, আমার চার কি পাঁচ! কৌশিকদাকে ডন বলতেই পারি।
[আরও পড়ুন: Independence Day: স্বাধীনতার অর্থ বোঝালেন Koel, ঐক্যের বার্তা দিলেন Prosenjit]
৫) আচ্ছা, এবার ছবির কথায় আসি! তোমার ছবির নাম তো ‘সাইকো’ ছিল। পালটালে কেন?
ওটা ওয়ার্কিং টাইটেল ছিল। মুখোশ নামটা রাখা যাবে না কিনা ভাবছিলাম। তারপর দেখলাম, গল্পের সঙ্গে এক্কেবারে মিলে যাচ্ছে। আমরা সবাই মুখোশ পরে থাকি। যাতে রহস্যে নানা স্তর থাকে। সেই অভিজ্ঞতা এই সিনেমা দেখার সময়ও হবে।
৬) বাংলায় কিন্তু রহস্য গল্পের কমতি নেই। তোমার এই গল্প কতটা আলাদা?
এই আলাদা, অন্যরকম কিংবা ব্যতিক্রম কথাটায় আমি বিশ্বাসী নই। ভাল থ্রিলার যেমন হয়। আমার ছবি ঠিক তেমন। মানুষ থ্রিলড হবেন, রিয়ালিস্টিক অ্যাপ্রোচ পাবেন। আর একটা কথা, সাধারণ আমার ছবিতে মানুষ গান এক্সপেক্ট করেন। এ ছবিতে কিন্তু কোনও গান নেই। ছবিটাকে একটা সিরিয়াস জোনে নিয়ে যেতে এই সিদ্ধান্ত।
৭) এখন কি সবকিছুই ডার্কনেস দেখানোর প্রবনতা বেড়েছে? নেগেটিভ চরিত্রদের গ্লোরিফাই করা হচ্ছে?
ডার্কনেস অনেকরকম হয়। আমি নিজে খুব বেশি রক্তপাত পছন্দ করি না। সেটার মধ্যেও একটা মাস্ক থাকা উচিত। আর নেগেটিভ চরিত্রের কথায় বলতে পারি, ঠিক-ভুল কিন্তু আপেক্ষিক। কোন পরিস্থিতিতে একজন মানুষ কোন পথ বেছে নিচ্ছে, সেটা জানা উচিত। ইতিহাস মানুষের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলে। সাদা-কালো বলে কিছু হয় না, সবটাই ধূসর।
৮) এতদিন ধরে শুটিং করলে। তোমার সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ভাল ও মন্দ দিক যদি বলতে বলি।
দ্যাখো, কাউকে জাজ করার আমি কেউ নই। আমি সেই মতে বিশ্বাস করি না।
৯) দুই অনির্বাণের দ্বৈরথ কি দেখা যাবে?
অবশ্যই! ছবিতে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেনি। তাতে আমরাই লাভবান হয়েছি। আর দর্শকরাও লাভবান হবেন।
১০) ভেড়ার মুখোশ ব্যবহার করলে কেন?
তার ধর্মীয়, ঐতিহাসিক আবার মাইথোলজিক্যাল কারণ রয়েছে। সেটা সিনেমা হলে গিয়ে ছবিটা দেখলেই বোঝা যাবে।
১১) অনির্বাণ তো বাইরে। তিনি থাকলে কি প্রচারে বাড়তি লাভ হত?
সে তো হতই! ওই তো ছবির প্রোটাগনিস্ট। যদিও এখন প্রচার অনেকটাই ভারচুয়াল। তবে অনির্বাণকে সকলে চেনে। ও থাকলে দু’দিন আগে মুখোশ পরে হলে যেতে পারতাম। সবাইকে চমকে দিতে পারতাম। দর্শকদের দেখাতে পারতাম। সুরক্ষা ব্যবস্থা ভালই আছে। আপনারা হলে এসে সিনেমা দেখুন।
[আরও পড়ুন: Dev-Sunny Leone Romance: দুই তারকার রসায়নে জমজমাট ‘ডান্স ডান্স জুনিয়র সিজন ২’]
১২) হল খুলে গেলেও দর্শক কিন্তু সেভাবে হচ্ছে না। এখন সিনেমা হলে রিলিজ চ্যালেঞ্জিং না?
কাউকে তো খাতা খুলতে হবে। আমি খুব খুশি সে সিনেমা হলে রিলিজ হচ্ছে। এত লোকের ব্যবসা জড়িয়ে রয়েছে। সবাই তো আর ছুটির দিনে রিলিজের সুবিধা পেতে পারে না, কাউকে না কাউকে চ্যালেঞ্জ নিতেই হবে।
১৩) তোমার ‘ব্ল্যাক উইডোজ’ বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। সেকেন্ড সিজন কবে আসছে?
কথাবার্তা চলছে। প্যানডেমিকের জন্য সমস্ত কিছু একটু পিছিয়েছে।
১৪) রাজ কুন্দ্রা (Raj Kundra) মামলার পর তাতে কি শিল্পা শেট্টির বোন শমিতা শেট্টি থাকছেন?
নো কমেন্টস!
১৫) আচ্ছা, বেশ। তুমি নিজে কার কোন মুখোশ খুলে দিতে চাইবে?
ভয় আর হিংসার মুখোশ। বাংলা সিনেমার জয়গান অনেকে করেন। কিন্তু এই অতিমারী পরিস্থিতিতে যখন সিনেমা রিলিজ করাটাই একটা বড় বিষয়। তখন ভয় আর হিংসার মুখোশ দূরে সরিয়ে রেখে সিনেমা হলে গিয়ে ছবিটা দেখুন, এই কথাটাই সবার বলা উচিত। তাই ভয় আর হিংসার মুখোশটা খুলে ফেলতে পারলে আনন্দিত হব।
১৬) সবশেষে জানতে চাইব, কেন হলে এসে দর্শক ‘মুখোশ’ ছবিটি দেখবেন?
ভাল বাংলা সিনেমা দেখার তাগিদে। ছিমছাম একটা থ্রিলার যেখানে নাচা-গানা নেই। একটা রিয়ালিস্টিক গল্প। এত ভাল ভাল অভিনেতারা থাকবেন। সবসময় এই রিস্কটা নিতে পারি না। ‘মুখোশ’-এর ক্ষেত্রে নিতে পেরেছি।