আকাশ মিশ্র: 'সইয়াঁ হটো যাও তুম বরে উহ হো!' কিংবা 'ফুল গেন্দে কা না মারো ' বা 'আজাদি'। কলকাতাকন্য়া বর্ণালী চট্টোপাধ্যায়ের (Barnali Chattopadhyay) 'হীরামাণ্ডি'র গানে এখন বুঁদ গোটা দেশবাসী। যে নবপ্রজন্মের ঘাড়ে দোষ রয়েছে, তাঁরা নাকি ভালো গান শোনেন না। সেই প্রজন্মই এখন 'হীরামাণ্ডি'র ঠুংরিকে দিচ্ছেন একশোতে একশো। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম রিলে এই গানেই ভিডিও করছেন ইয়ংজেনরা। কারণ, 'হীরামাণ্ডি'র ঠুংরির ম্য়াজিকই এমন, বর্ণালীর কণ্ঠের মুগ্ধতাই এমন। তা কীভাবে সঞ্জয় লীলা বনশালির এই ম্যাগনাম ওপাস 'হীরামাণ্ডি'তে গান গাওয়ার সুযোগ পেলেন কলকাতার বর্ণালী? বনশালির সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাটাই বা কেমন?
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে বর্ণালী জানালেন, ''অসাধারণ। বনশালির সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা বলতে গেলে আমার শব্দ কম পড়ে যাবে। একজন পারফেকশনিস্ট মানুষ। অনেক কিছু শেখার আছে মানুষটার থেকে। ঠুংরির কোথায়, কেমন নজাকত রয়েছে, তাও সঞ্জয়জির নখদপর্ণে। আমি শুধু গান গাই না, গান নিয়ে তপস্যা করছি। তাই বনশালির সঙ্গে কাজ করাটা আমার কাছে লাইফটাইম এক্সপেরিয়েন্স।''
বর্ণালী জানালেন, ''২০২১ সালের শেষের দিকে অফারটা আসে। আমি সুরেশ ওয়াদকরের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেদিনই আমার সঙ্গে সুরেশজির প্রথম সাক্ষাৎ হয়। সুরেশজির বাড়িতে যখন গান গাওয়া শুরু করলাম। উনি দুম করে সঞ্জয় লীলা বনশালির অ্য়াসিস্ট্যান্ট শ্রেয়সকে ফোন করেন। সুরেশজি শ্রেয়সকে বলেন, তোমরা ঠিক যেমন কণ্ঠ খুঁজছিলে, সেটা পেয়ে গিয়েছি। সেদিনই আমাকে বনশালির স্টুডিওতে ডাকা হল। বাকিটা তো ইতিহাস।''
গোটা বলিউড জানে বনশালি খুবই খুঁতখুঁতে মানুষ। ছবির ক্ষেত্রে কোনও সমঝোতায় যান না। আপনার কী মনে হয়? বর্ণালীর কথায়, ''এটা একেবারেই ঠিক। আর সেই কারণেই হয়তো তাঁর তৈরি প্রত্যেকটি ছবি অত সুন্দর ও পারফেক্ট হয়ে ওঠে। বনশালির স্টুডিওতে গিয়ে একাধিক ঠুংরি গেয়েছি। শ্রেয়স আমার গান শুনে বলেন, আপনার গলায় পুরনো ঘরানার ছোঁয়া রয়েছে। আপনার মতো গায়িকা ইদানীং পাওয়া যায় না। তারপর ২০২২ সালে আমার কাছে ফোন আসে। জানতে পারলাম, হীরামাণ্ডির জন্য আমাকে বেছেছেন বনশালি।''
সঞ্জয়লীলা বনশালির সঙ্গে বর্ণালী।
'সইয়াঁ হটো যাও তুম বরে উহ হো!' গানটির রেকর্ডিং দিয়েই বনশালির টিমে প্রবেশ বর্ণালীর। তাঁর কথায়, ''আমার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন সঞ্জয়জি। আমাকে বলেছিলেন, আপনার মতো কণ্ঠ আজকাল খুব কম শোনা যায়। আপনার সঙ্গে আরও কাজ করব। এটা সত্যিই আমার কাছে খুব বড় প্রাপ্তি।'' বর্ণালীর কথায়, ''শুধু গান নিয়ে আলোচনা নয়, বনশালির সঙ্গে বিরজু মহারাজ, গিরিজা দেবীর মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। প্রতি মুহূর্তে আমাকে মুগ্ধ করেছেন সঞ্জয়জি।''
[আরও পড়ুন: ‘ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া কীভাবে FIR?’ সন্দেশখালির ভাইরাল ভিডিও মামলায় প্রশ্ন হাই কোর্টের]
বনাশলির 'হীরামাণ্ডি' সিরিজ নিয়ে দর্শক থেকে সমালোচকদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন খুব ভালো, কেউ বলছেন খারাপ। তবে এই সিরিজের গান যে সুপারহিট, তা একবাক্য়ে স্বীকার করছেন সবাই। বলিউডের মানুষের কাছে কতটা প্রশংসা পেল এই বাঙালিকন্যা? বর্ণালী জানালেন, ''প্রত্যেকটি মানুষ প্রশংসা করেছেন। মণীষা, অদিতি, সোনাক্ষী সবাই। হীরামাণ্ডির রেড কার্পেটে সবাই ব্যক্তিগতভাবে শুভেচ্ছা জানিয়েছে আমাকে। রেখাজি তো বলেছেন, মুম্বইয়ে আসলে আমার বাড়ি এসে গান শোনাতে হবে। আমার গানের জন্যই নাকি ৩ বার হীরামাণ্ডি দেখেছেন তিনি। এটা সত্যিই খুব বড় পাওনা।'' আর বনশালি, তিনি কিছু স্পেশাল বললেন? ''ছবি প্রিমিয়ারের পরই আমি কলকাতায় চলে আসি। আমাকে ফোন করেছিলেন সঞ্জয়জি। আমাকে বলেছেন, অপূর্ব লাগছে গানটা। দেখে নিও, তোমার সইয়াঁ গান সবাই শুনবে।''
হীরামাণ্ডির লেখক মোয়িন বেগের সঙ্গে বর্ণালী।
বনশালির হাত ধরে বলিউডে দারুণ এন্ট্রি। আউটসাইডার হওয়ায় কোনও অসুবিধার মুখে পড়েছেন? বর্ণালীর স্পষ্ট জবাব, ''আমার কোনও সমস্য়াই হচ্ছে না। ঠিক এইভাবে ভাবতেও চাইছি না। আমি খুব পজিটিভ মানুষ। তাই পজিটিভ জিনিসপত্র নিয়েই ভাবি সব সময়। আর কাজটা মন দিয়ে করি। আসলে আমি একেবারেই প্রতিযোগী মনোভাবের নই। আমি গানটা গাইতে পারি। মন দিয়ে সেটাই করি। আর সেই কারণেই সবাই আমাকে ভালোবাসেন।''
অরিন্দম শীলের 'হর হর ব্য়োমকেশ' ও 'আসছে আবার শবর'-এ শোনা গিয়েছিল বর্ণালীর কণ্ঠ। বলিউডের সঙ্গে সঙ্গে টলিউডেও আরও কাজ করতে চান বর্ণালী। মুম্বইয়ে থাকলেও, বর্ণালীর একটাই কথা, ''বাংলা আমার প্রাণ।'' তবে আপাতত, বনশালির হীরামাণ্ডিতে ডুবে রয়েছেন 'সইয়াঁ' বর্ণালী।
[আরও পড়ুন: GI তকমার পর বিদেশ সফরে সুন্দরবনের মধু, গন্তব্য কোথায়?]