সাম্প্রতিক রাজ্য-রাজনীতিতে সাড়া ফেলেছেন তিনি। আইএসএফের মতো ‘ছোট দল’ নিয়েও তোলপাড় করেছেন রাজ্য। একের পর এক ইস্যুতে বারবার আলোচনার কেন্দ্রে এসেছেন নওশাদ । এবার সেই আবহেই ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’-এর মুখোমুখি নওশাদ সিদ্দিকি (Nawsad Siddique) । একাধিক বিষয়ে অকপট ভাঙড়ের আইএসএফ (ISF) বিধায়ক। শুনলেন রমেন দাস।
আপনি লোকসভায় (Lok Sabha Election) প্রার্থী হচ্ছেন! শোনা যাচ্ছে ডায়মন্ড হারবারের মতো হট সিটে দাঁড়াবেন। সত্যিটা ঠিক কী?
নওশাদ: হ্যাঁ, আমি ডায়মন্ড হারবার (Diamond Harbour) আসনে প্রার্থী হচ্ছি। মানুষের উপর ভরসা করেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে অথবা যিনি আমার প্রতিপক্ষ থাকবেন, তাঁকেই হারাতে চাই। ইচ্ছা রয়েছে ওই আসনে লড়াই করার। অভিষেকবাবু লড়লে, তাঁকেও হারিয়ে কালীঘাটে পাঠাব।
কিন্তু বলা হচ্ছে ওই আসনে আপনার জয় পাওয়া অত্যন্ত কঠিন! তবুও এত সাহস কি বিজেপির ভরসায়?
নওশাদ: একেবারেই নয়। আমি একটি গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) বা এদেশের যে কেউ ঠিক তাই। আমিও লড়াইয়ে নামব, তিনিও লড়াই করবেন। এখানে কে যুবরাজ, কে রানি, এসব নেই। আমি মানুষের ভরসায় জিতব এটাই জানি। কাউকে ভরসা করতে আমার অন্তত হবে না, মানুষ ছাড়া।
কিন্তু…
নওশাদ: (প্রশ্ন থামিয়ে) আপনি ডায়মন্ড হারবারের মানুষকে জিজ্ঞাসা করুন গিয়ে। তাঁরাও ভয় পান। অনুন্নয়নে ভরে রয়েছে ওই এলাকা। শুধু ভয়ের বাতাবরণ।
[আরও পড়ুন: হাত-পায়ের কারখানা! নতুন পথে আলোর খোঁজের কারিগর বিশেষভাবে সক্ষমরাই]
তবুও তো অনেকেই দাবি করেন, আপনি শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপির কথায় চলেন। আপনারা আসলে বিজেপির বি টিম!
নওশাদ: আগে খুঁজে দেখুন বিজেপির (BJP Bengal) এ টিম কারা! আমরা দলিতের কথা বলি বলে, আমরা মানুষের বিরুদ্ধে অত্যাচারের প্রতিবাদ করি বলে বি টিম! আমরা, কৃষকের স্বার্থে লড়ছি বলে বিজেপির বি টিম! আসলে আমাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে লড়তে পারছে না বলে এরকম ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন ওঁরা।
টাকা নিয়ে লড়াই করছেন আপনি বা আপনারা, সংখ্যালঘু ভোটে ভাঙন ধরাচ্ছেন?
নওশাদ: প্রমাণ করুন! আমি বা আমাদের দলের কেউ কারও কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, বলুন ওঁরা প্রকাশ্যে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো এতকিছু বলেন, জানান দেখি। তারপর প্রমাণ করতে না পারলে আমরাও ব্যবস্থা নেব। ৫ মিনিটে আইনি ব্যবস্থা নেব।
একা নাকি জোট ! কী ভাবছেন বন্ধুদের নিয়ে? ইন্ডিয়া জোট, বাম-কংগ্রেস নাকি বিজেপি?
নওশাদ: দলুয়াখাঁকি থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি। রেশন দুর্নীতি। রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাস। একের পর এক অন্যায়ের পরেও এই তৃণমূল ‘ইন্ডিয়া’ (INDIA Alliance) জোটে থাকলে আমরা যোগ দেব না!
তাহলে বিজেপিকে সাহায্য?
নওশাদ: প্রশ্নই ওঠে না। যে জোটে তৃণমূল-বিজেপি থাকবে সেখানে আমরা নেই।
আপনি ভাঙড়ের বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পরেই অশান্তি বেড়েছে বলে অভিযোগ। বোমার স্তূপ হয়েছে ভাঙড়?
নওশাদ: আমি বারবার বলেছি শান্তি চাই। প্রয়োজনে নির্বাচন থেকে প্রার্থী প্রত্যাহারের কথাও বলেছি। কিন্তু অশান্তি করছে তো তৃণমূল (TMC)। শওকত মোল্লা, অধ্যাপিকাকে জগ ছুড়ে মারা নেতা আরাবুলরা এসব করেছেন।
[আরও পড়ুন: স্বপ্ন দেখবে ওরাও! বাধা কাটিয়ে যৌনপল্লিতে ‘স্কুল’ খুললেন যৌনকর্মীর সন্তানরা]
কিন্তু এই শওকত মোল্লাই তো আপনাকে ভাই বলেছেন!
নওশাদ: সৌজন্য দেখিয়েছি আমিও। তিনি আমাকে ভাই বলেছেন। আমিও দাদা বলেছি। কিন্তু কেউ আমার দলের কর্মীদের খুন করালে, মারলে আমি তাঁকে দাদা বলব, এ-ও তো হতে পারে না।
আপনি আইএসএফ দলের নেতা। কিন্তু আপনার দাদা, আব্বাস সিদ্দিকির কী হল হঠাৎ, তাঁকে আর দেখা যায় না কেন?
নওশাদ: এসব ভ্রান্ত প্রচার আসলে। আমি একজন বিধায়ক। আমার দলের প্রধান আব্বাস সিদ্দিকি (Abbas Siddique) । তাঁর হাতেই এই দল তৈরি। তিনি সবকিছু দেখছেন। দলে নজর রাখছেন। আমরাও তাঁর সৈনিক।
আপনার নারীসঙ্গ! অভিযোগ না চক্রান্ত, নাকি এর মধ্যে আপনার যোগ রয়েছে?
নওশাদ: দেখুন এই বিষয়ে বলতে আমার মুখ চুলকোয়! আমি চাই সব ফাঁস করতে। কিন্তু এটি বিচারাধীন বিষয়। আমার আইনজীবী, বিশেষত বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যরা বারণ করেছেন, তাই কিছু বলব না।
আচ্ছা আপনি এত কিছু বলার পরেও তৃণমূলে কবে যাচ্ছেন? এখন তো দলবদল কোনও বিষয় নয়!
নওশাদ: আগে বলুন তো, তৃণমূল দলটাই থাকবে তো! এই যে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব থেকে শুরু পিসি-ভাইপো, এসব তো বাড়ছে। আর শুনুন, টাকা আর ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য এত মানুষের ভরসা নষ্ট করব না। তাই দল পরিবর্তনের কোনও প্রশ্নই নেই।
দেখুন ভিডিও: